কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল অঞ্চলের ভৈরব থেকে আড়িখোলা পর্যন্ত ৮টি রেল স্টেশনের মোটর বাক্স চুরি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা স্টেশনের সিগন্যালিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ এসকল মালামাল চুরি হওয়ার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল।
রেলওয়ে থেকে বেশকিছু সূত্র জানায়, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ পথের এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আন্তঃনগর হিসেবে চলাচল করে। একই পথে চলাচলকারী ঢাকা-আখাউড়া তিতাস কমিউটার ট্রেনটি দ্বিতীয় শ্রেণীর মেইল ট্রেন। রেলওয়ের নিয়ম অনুসারে কাছাকাছি থাকলে লোকাল বা মেইল ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনকে পেছন থেকে যেতে দিতে হয়। তবে প্রায় এক মাস ধরে গাজীপুরের আড়িখোলা থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পর্যন্ত কোনো স্টেশনে এই কাজটি করা যাচ্ছে না। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকার আটটি স্টেশন থেকে মূল্যবান যন্ত্র চুরি হয়ে গেছে।
মূলত ওই যন্ত্রের মাধ্যমে একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনে ট্রেন নিতে সুইচ মুভ করানো হয়ে থাকে। যা একটি মোটরের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। প্রায় এক মাস ধরে মোটরগুলো চুরি হওয়ার কারণে লোপ লাইনে ট্রেন প্রবেশ করানো সম্ভব যাচ্ছে না। ফলে সকল ধরনের ট্রেন মেইন লাইন দিয়ে চলাচল করাতে হচ্ছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক ট্রেন চালনা। ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হওয়ায় যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে মোটরগুলো ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা স্টেশন থেকে চুরি হয়েছে। চোরেরা মোটর খুলে এতে থাকা বিশেষ তার নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ভৈরব স্টেশন থেকে শুরু করে একে একে এসব মোটর চুরি হয়েছে। এরই মধ্যে আপ লাইনে (ঢাকামুখী) দৌলতকান্দি, প্রীনিধি, মেথিকান্দা, হাঁটুভাঙা, খানাবাড়ী, আমীরগঞ্জ, জিনারদী, আড়িখোলা স্টেশনের প্রবেশমুখের মোটর চুরি হয়। ডাউন লাইনে (চট্টগ্রাম ও সিলেট) অভিমুখী লাইনের খানাবাড়ী, আমীরগঞ্জ ও আড়িখোলা স্টেশন এলাকার মোটরগুলি চুরি হয়ে যায়। এরপর থেকেই স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারছেনা। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (সংকেত) মো. সোলেমান হোসেন বলেন, ‘মোটর চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে ট্রেনকে এক লাইন থেকে আরেক লাইনে নেওয়ার জন্য সুইচ মুভ করাতে যে সংকেত বা সিগন্যাল প্রয়োজন হয় সেটি চুরি হয়ে যাচ্ছে। ভৈরব স্টেশনের পর থেকে আড়িখোলা পর্যন্ত আপ ও ডাউন লাইনের বেশ কয়েকটি মোটর চুরি হয়।’
মোটর চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমান অবস্থায় লোপ লাইনে ট্রেন প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। প্রায় এক মাস ধরে এই সমস্যা নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। মোটর খুব বেশি দামি না হলেও, ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় এটি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানায় একাধিক অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মোটর চুরির ব্যাপারে আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার দিলিপ চন্দ্র দাস প্রতিবেদককে জানান, ‘শুরুতে ভৈরব স্টেশন থেকে মোটরগুলো চুরি হয়ে যায়। এরপর একে একে চুরি হতে হতে গত ৩রা আগষ্ট আড়িখোল স্টেশনের ৬ টি মোটর চুরি হয়। এ কারণে আউটারের বাইরে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখে ম্যানুয়ালি লাইন সংযোগ দিয়ে স্টেশন থেকে (ওপিটি-২৭) ড্রাইভারকে দিলে ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করে। আপ লাইনে ভৈরব থেকে আড়িখোলা পর্যন্ত কোথাও লোপ লাইনে ট্রেন প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মোটর না লাগানোর কারণে ট্রেন স্বাভাবিভাবে চলতে পারছেনা।’
দেশকণ্ঠ/আসো