পথরেখা অনলাইন : বাংলাদেশের রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকাসমূহ (ইপিজেড) এবং বেপজার অধীনে পরিচালিত চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে বেপজা। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ইপিজেডসমূহ এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো. জিয়াউর রহমান এই আহবান জানান।
বাংলাদেশস্থ কোরিয়ান কমিউনিটি, কিডো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানী লিমিটেড এবং জায়ান্ট বিডি কোম্পানী লিমিটেড যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলােেশ নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রূত পার্ক ইয়াং সিক এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলােেশর রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা শিল্প গ্রুপের প্রায় ৬০ জন প্রতিনিধি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান বর্তমানে বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ বিশেষত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) একটি সামগ্রিক চিত্র সেমিনারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, কর্মক্ষম জনশক্তি, বৃহৎ ও সম্প্রসারশীল অভ্যন্তরীণ বাজার, স্থিতিশীল সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কারন।
মেজর জেনারেল জিয়া বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান আকর্ষণ হল সহজলভ্য, উৎপাদনশীল, পর্যাপ্ত এবং সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য শ্রমশক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম।
বর্তমান সরকার প্রদত্ত বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ সময়ের সাথে সাথে নিয়মিতভাবে তার বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিকে উদারীকরণ করে আসছে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত এবং উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সরকার বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলির জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছে।
বেপজার সম্প্রসারণ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, চালু ৮টি ইপিজেডের সাথে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে যেখানে ইতোমধ্যে ২৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বিনিযোগের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং কয়েকটি উৎপাদনও শুরু করেছে। এছাড়াও, ৩টি নতুন ইপিজেড প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত হবে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার এবং বাংলাদেশে বিশেষত বেপজাধীন এই জোনসমূহে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা অন্বেষণের আহ্বান জানান ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীগণকে অবহিত করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন সেবা সহজীকরনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে আদমজী ইপিজেডের দক্ষিণ কোরীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কিডো বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জ্যাং হি পার্ক বাংলাদেশের ইপিজেডে কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বেপজা প্রদত্ত সেবার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি কোরীয় বিনিয়োগকারীগণকে বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার অনুরোধ জানান।
একটি প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে সেমিনার শেষ হয়। নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ বেপজার নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) তানভীর হোসেন, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) ফজলুল হক মজুমদার, পরিচালক আলী ইসতিয়াক চৌধুরী অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বেপজা কয়েকজন বিনিয়েগকারীর কাছ থেকে বাংলাদেশে দ্রুতই বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পায়।
পথরেখা/এআর