• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৩:২৬
অশোক মাধব রায়ের দুর্নীতি-১

বাল্লা বন্দর করার নামে ৪৯ কোটি টাকা অপচয় না লুটপাট

  • জাতীয়       
  • ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪       
  • ৬৮
  •       
  • ০২-০৯-২০২৪, ০০:০৭:৪১

বিশেষ প্রতিবেদন : মাত্র এক বছর দায়িত্ব পালন করেই নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে লুটপাটের আখড়া বানিয়েছিলেন সাবেক নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান। তার এই কাজে সহায়তা করে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন সাবেক সচিব অশোক মাধব রায় এবং তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরী লিটন। শুধু মাত্র নদ-নদীর ড্রেজিং কাজ থেকেই এই চক্র হাতিয়ে নিয়েছেন শতশত কোটি টাকা। নদ-নদীর ড্রেজিং না করেই তারা বুঝে নিয়েছেন নিজেদের কমিশন। 
 
এর বাইরে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি করেও জনগণের শতশত কোটি লুটপাট করেছেন। সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ২০১৬ সালের কয়েকটি প্রকল্পের ফাইল পর্যালোচনা করে দেখা যায় সচিব অশোক মাধব রায়ের বেশ কিছু স্থল বন্দর এবং নদীর নাব্যতা ও ড্রেজিং সংক্রান্ত কার্ক্রম ছিল। প্রতিটি ফাইল তৎকালীন সচিব অশোক মাধব রায় মন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য নোট দিয়ে পাঠিয়েছেন।
 
তৎকালীন সচিব অশোক মাধব রায় আওয়ামী লীগ শাসনামলে অত্যন্ত ক্ষমতাধর সচিব হিসেবে চিহ্নিত। তার সাথে নাকি ভারতের অন্তরঙ্গ সখ্যতা ছিল। কথায় কথায় তিনি ভারতের প্রসঙ্গ তুলে নিজের ক্ষমতা খাটাতেন। কথিত আছে অশোক মাধব রায় দ্বৈত নাগরিক। ভারতেও তার নাগরিকত্ব রয়েছে। নামে বেনামে তার এবং তার স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের নামে হবিগঞ্জ, নরসিংদীতে শতশত বিঘা জমি রয়েছে। রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি, উত্তরা এবং বনানীতে রয়েছে একাধিক আলিশান ফ্ল্যাট।
 
সাবেক নৌসচিব অশোক মাধব রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১৩ মার্চ দেশের একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক সংবাদ পরিবেশন করে। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সাবেক নৌসচিব অশোক মাধব রায়ের বিশেষ আগ্রহে বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়। এই বন্দর নির্মাণ বাবদ সরকারের প্রায় ৪৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। আর এই কাজ বাংলাদেশের জন্য কোনো কাজে লাগবে না। এখান থেকে অশোক মাধব রায় হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক তৃতীয়াংশ টাকা।
 
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সীমান্তবর্তী কেদারাকোর্ট এলাকায় বাল্লা স্থলবন্দর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়মুড়া এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো শুল্ক স্টেশনই নেই। সেখানকার পুরো এলাকা খালি পড়ে আছে, নেই কোনো রাস্তাঘাটও। তাই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার বছর পার হলেও চুনারুঘাটের এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। দেশের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তৎকালীন দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী শাজাহান খান।
 
সাড়ে ৭ বছর আগে বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। গত বছরের জুন মাসে প্রায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। এই প্রকল্পের আওতায় একটি আদর্শ স্থলবন্দরে যা কিছু দরকার, তার সব কিছুই নির্মাণ করা হয়। ইয়ার্ড, ওজন মাপার যন্ত্র, অফিস ভবন, ডরমিটরি, সীমানাপ্রাচীর, সড়ক, বিভিন্ন পরিষেবা—সব সুবিধাই এখানে আছে।
 
পুরো টাকা খরচ করে প্রকল্পটির ইতিমধ্যে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরেও স্থলবন্দরটি চালু করা সম্ভব হয়নি। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়মুড়া এলাকায় কোনো শুল্কস্টেশন না থাকাই এর একমাত্র কারণ। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করার কোনো সুযোগই নেই। ভারতের ওই অংশে শুল্কস্টেশন নেই, এটা জানা সত্ত্বেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের করের টাকা খরচ করেছে।
 
পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে ২৪টি স্থলবন্দর স্থাপন করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ১২টির কার্যক্রম এখন চালু আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় বাকিগুলোর কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অশোক মাধব রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম বর্হিভুত আয় এবং 
দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
 
প্রকল্প নেওয়ার পেছনের কারণ
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পান অশোক মাধব রায়। পরের বছর জুন মাসে তিনি পূর্ণ সচিব হন। অশোক মাধব রায়ের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জে। তিনি সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বাল্লা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। জানা গেছে, এই প্রকল্প পাস করাতে তৎকালীন নৌসচিবের বিশেষ আগ্রহ ছিল। স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে, অশোক মাধব রায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছিলেন।
 
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা। অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় বাল্লা স্থলবন্দর ঘোষণার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর প্রভাব খাটিয়েছেন। মূলত অশোক মাধব রায়ের ইচ্ছায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়।
 
২০১৭ সালে প্রকল্পটি নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, এই স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, অতীতে দেশের যত স্থলবন্দর উন্নয়ন করা হয়েছে, তার প্রতিটির  বিপরীতে ভারতীয় অংশে অন্তত একটি শুল্কস্টেশন ছিল। কিন্তু বাল্লা স্থলবন্দর প্রকল্পের ক্ষেত্রে এর ব্যতয় ঘটেছে।
পথরেখা/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।