• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৭:২০
‘আত্মহত্যা’ বলছে কর্তৃপক্ষ পরিবারের দাবি ‘হত্যাকাণ্ড’

১৩ দিনেও শাবিবের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি

দেশকণ্ঠ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও মাদ্রাসার ছাত্র শাবিব শাইয়ানের মৃত্যুরহস্যের জট খোলেনি। অভিযুক্ত ২ জন ধরা পড়লেও; একজন পলাতক। অপমৃত্যু নিশ্চিত করতে জ্বিন-প্রেতের অলীক গল্প সাজানোর নাটক চলছে। প্রশাসন তৎপর থাকলেও পোস্টমর্টেম রির্পোট না আসা পর্যন্ত শাবিবের মৃত্যুরহস্য অজানাই থেকে যাচ্ছে। ‘আত্মহত্যা’ বলছে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ, কিন্তু পরিবারের দাবি 'হত্যাকাণ্ড'।
 
২৪ মার্চ সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, এলাকায় শাবিবের রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে নানা প্রক্রিয়ায় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রহস্যজনক মৃত্যু; কারণ টাওয়াল স্ট্যান্ডের উচ্চতা ৫ ফিটের মতো, শাবিবের উচ্চতা ৪ ফিট ৮ ইঞ্চি। শাবিব বেল্ট দিয়ে সেই স্ট্যান্ডে ফাঁস দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ পুলিশকে না জানিয়ে শাবিবকে বাথরুমের দরজা ভেঙে উদ্ধার করে। এমন কী এই সময় শাবিবের বাবাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার পরপর উপস্থিত জনতা বাথরুমের টাওয়াল স্ট্যান্ডটি দেখতে যান। রহস্যজনকভাবে তা ধরার সাথে সাথে খুলে আসে।  সাধারণ জনতার প্রশ্ন হলো, তা হলে কিভাবে শাবিব ঐ স্ট্যান্ডে আত্মহত্যা করলো?
 
মাদ্রাসার শিক্ষকদের মতে, শাইয়ান শাবিব বাথরুমের টাওয়াল স্ট্যান্ডের সাথে কোমরের বেল্ট দিয়ে গলায় ফাঁসদিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এতটুকু উচ্চতার পার্থক্যে ফাঁস দিয়ে মরা প্রায় অসম্ভব। এই এত একটা হালকা জিনিসের সাথে প্রায় ১১ বছরের একটা ছেলে ঝুলে থাকতে পারবে না। মাদ্রাসার শিক্ষকরা বলছে ভিতর থেকে ছিটকিনি বন্ধ ছিল। তারা ৩-৪ জনে মিলে ধাক্কাধাক্কি করে দরজা ভেঙ্গে শাবিবকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বাথরুমের দরজা প্রায় ঠিকই আছে। মৃতের পাঞ্জাবি ও টুপি দুটো দু’জায়গায় এলোমেলোভাবে পরাছিল। খবর দিতে আসা ছাত্র ফাহিম বলেছিল বাথরুমে কি যেনো একটা আছে। এই কিযেনোটা আসলে কি এটাও একটা প্রশ্ন। বলেছে জ্বিন-টিন আছে।
 
উল্লেখ্য, ১৩ মার্চ ২০২৩ রাতে মুহাম্মদ শাবিব শাইয়ানকে (১০ বছর) চট্টগ্রামের এক মাদ্রাসার বাথরুমের টাওয়াল স্ট্যান্ডের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে কর্তৃপক্ষের। দরজা ভেঙে টাওয়াল স্ট্যান্ড হতে নামিয়ে প্রথমে তাকে ম্যাক্স হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা, নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি  রাজিউন)।
 
 
 
মৃত শাবিব শাইয়ানের পিতা মো. মশিউর রহমান চৌধুরী আমাদের প্রতিবেদককে জানান, ‘আমার দ্বিতীয় সন্তান শাবিব শাইয়ান চকবাজার থানাধীন মেহেদীবাগস্থ দারুস সুফ্ফাহ মাদ্রাসায় কুরআন হাফেজ বিভাগে পড়াশুনা করত। শুক্রবার ছাড়া বাকি ৬ দিন সকাল ৬টায় মাদ্রাসায় দিয়ে আসতাম ও রাত ৯টায় বাসায় নিয়ে যেতাম। ১৩ মার্চও যথারীতি আমি রাত ৯টায় শাবিবকে মাদ্রাসা হতে আনতে যাই। প্রতিদিনের মতো নিচে দাঁড়িয়ে ছেলের নাম ধরে ডাকি। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ ফোরকান সাহেবকে ফোন দিয়ে শাবিবকে নীচে পাঠাতে বলি। এর কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোনে বলেন যে, শাবিব মনে হয় বাথরুমে গিয়েছে, বের হলে পাঠিয়ে দিব। আমি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকি। এমতাবস্থায় শাবিবের সহপাঠী আরাফাত হঠাৎ করে দৌড়ে এসে আমাকে বলে- আঙ্কেল আঙ্কেল তাড়াতাড়ি আসেন; শাবিবের অবস্থা ভালো না। শাবিব বাথরুমে ফাঁস দিয়েছে। আমি দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকি। তৃতীয় তলার সিঁড়ি পেরুতেই দেখি মাদ্রাসার শিক্ষক রিদোয়ান এবং আমাকে ডাকতে আসা ছাত্র আরাফাত নিস্তেজ শাবিবকে ধরাধরি করে নামাচ্ছে। আমি ছেলের দুই গালে দুই হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে বলি, আব্বু আব্বু আব্বু, তোমার কি হয়েছে? বাবাকে বলো। কিন্তু তার কোন সাড়াশব্দ পাই নাই। আমি তখন আমার ছেলের মুখে কয়েকবার ফুঁ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হই। তৎক্ষণাৎ ছেলেকে কাঁধে তুলে দৌড়ে সামনের ম্যাক্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিকভাবে দেখার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার আমার ছেলেকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।’  
 
উল্ল্যেখ মৃত শাবিব শাইয়ানের বাবা মো. মশিউর রহমান চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের চৌধুরীর ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। ব্যবসায়ীকসূত্রে মশিউর পরিবার-পরিজনসহ চট্টগ্রামে বসবাস করেন। তাদের ৪সন্তানের মধ্যে  শাবিব শাইয়ান দ্বিতীয়। শাবিব ২০২০ সাল হতে চকবাজার থানাধীন, ১৫ নং ওয়ার্ডের দারুস সুফ্ফাহ তাহফীজুল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে আসছিল।। পুত্র সন্তান হারানো পিতা এবং তার পরিবার এই মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। মৃতের বাবা মশিউর রহমান ১৬ মার্চ বাদী হয়ে চক বাজার থানায় মাদ্রাসার তিন শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান (২২ বছর), মো. ফোরকান (৫৬) ও রিদুয়ানুল হক (৩২) কে আসামি করে ৩০২/৩৪ ধারায় পেনাল কোডে মামলা করেন। নিহতের বাবা মো. মশিউর রহমান চৌধুরী, তার ছেলের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের শাস্তির দাবী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোভাবে বুঝে উঠতে পারছি না আমার ছেলে কেনো আত্মহত্যা করবে। মাদ্রাসা থেকে ফিরে এসে সে তার ভাইবোনদের সঙ্গে আনন্দ করে কাটাত।’ তিনি বলেন, তার ছেলের মতো যেনো আর কোনো পিতার সন্তান পড়াতে পাঠানোর পর লাশ হয়ে ফিরে না আসে।
 
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের মজুমদার বলেন, মাদ্রাসার বাথরুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিব আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। শিক্ষার্থীর গলায় আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তবে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই বিষয়টি বুঝা যাবে। জানা যাবে, কী কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানী ড. শাহরিয়ার ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমরা মানবতার কাছে বারবার হেরে যাই। অনেক বাবা-মা ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোমলমতি ছেলে-মেয়েদেরকে তুলে দেন মাদ্রাসার শিক্ষকদের হাতে। সকাল থেকে রাত অবদি; আবার কোনো ছাত্র-ছাত্রী স্থায়ীভাবে সেখানে থেকেই পড়াশুনার করে। অধিকাংশ মাদ্রাসায় লোকচক্ষুর অর্ন্তরালে ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষা দেওয়া হয়। সাধারণভাবে মাদ্রাসার পড়াশুনা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে অনুযায়ীই চলে। কিন্তু আমরা হর-হামেশাই খবর দেখছি অনেক মাদ্রাসায় পড়াশুনার পাশাপাশি চলে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্মম শারিরীক নির্যাতন; যেমন- কখনো বেত্রাখাত, কখনো পায়ে বেড়ি, কখনো ঘরে বন্দী করে রাখা, খাবার না দেয়ার ঘটনা ঘটছে। কখনও কখনও মানসিক নির্যাতনও চলে। আবার কোথাও কোথাও ব্যাভিচারী শিক্ষকদের দ্বারা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে যৌন নিগ্রহের ঘটনাও ঘটে। তারপরও অনেকেই জেনে-শুনে তাদের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠান।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারি না- এটা কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে অনেক জায়গায়ই দরজা বন্ধ করে পড়ানোর প্রয়োজন হয়। ইসলামের কোথাওতো এমন কথাতো লিখা নেই।’
 
স্কুল কলেজের মতো মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবী। যেখানে বন্ধ ঘরে নয়; আলোকিত পরিবেশে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। যেই পরিবেশ মুখরিত হয়ে উঠবে সন্তানের অভিভাবক-শিক্ষকদের অবাধ বিচরণে। ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত একজন শিক্ষার্থী আগামী দিনে দেশের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। শান্তির ধর্ম ইসলামের কাফেলায় তারাই দিতে পারে নেতৃত্ব। 
দেশকণ্ঠ/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।