• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৭:৩৬

বাংলা নববর্ষ সার্বজনীন উৎসব

ঈদ কিংবা পূজো কখনোই বাঙ্গালীদের কাছে একক অনুষ্ঠান ছিলো না। ধর্মীয় আচার আচরণের বাইরেও ছিলো সামাজিক আয়োজন। যেখানে অংশ নিতো সব ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই। শ্লোগান ছিলো- ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কিছুদিন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ পান্ডিত্য পাওয়া লোকজন আর কিছু ধর্মান্ধ লোক একে নিয়ে মেতে উঠলো মিথ্যা প্রচারণায়। সবে ধন নীলমণি একমাত্র বাংলা নববর্ষ ছিলো সার্বজনীন উৎসব। এখন সেখানেও হাত দিয়েছেন তারা। একে হিন্দুয়ানী উৎসব বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে মিথ্যা প্রচারণাও আছে।
 
রমনা বটমূলের হামলা আমরা আজও ভুলে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার শঙ্কার কথা যেহেতু প্রতিবছর চলে আসে, তখন আশস্ত করেছে ডিএমপি। বলা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে কোন আশঙ্কা নেই। খুবই আশার কথা। তবে বেধে দিয়েছেন সময় সীমা। বিকেল ৬টার মধ্যে শেষ করতে হবে সকল অনুষ্ঠান, রমনা বটমূলে প্রবেশ করা যাবে ৫টা পর্যন্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, নিরাপত্তা নিয়ে কোন আশঙ্কা যদি নাই থাকে, খোদ রাজধানীতে কেন সময় সীমা বেধে দিতে হবে? কেন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে দাবী জানাতে হবে সময় বাড়ানোর? সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ধর্মান্ধদের আরো উৎসাহী করে তুলছেন না তো?
 
আমরা তো তিমির বিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার হবে অশুভকে বিনাশ করার লক্ষ্য নিয়ে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’। প্রতিবারের মতো এবারো লাখো বাংগালী জেগে উঠবে উৎসবে। যে উৎসব সবার, এখানে ধর্মীয় বিভেদ নেই, আছে ভালোবাসার হাতছানি।  এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বড় আকারের প্রতীকগুলো তৈরি করা হয়েছে লোকসংস্কৃতির উপকরণ ও দেশের বিপন্ন প্রাণীদের নিয়ে। এর মধ্যে থাকবে একটি হাতি, বনরুই, গন্ধগোকুল, টেপাপুতুল, চাকা ইত্যাদি। এ ছাড়া থাকবে বড় আকারে রাজা-রানির দুটি মুখোশ। ছোট আকারে হাতে বহন করার মতো ফুল, প্যাঁচা, পাখির মুখোশ থাকবে শতাধিক।
 
পহেলা বৈশাখের উৎসব দেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসব। নাগরিক সমাজ জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের গৌরব উদ্‌যাপন করতে এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। এখন শুধু দেশে নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিরা পয়লা বৈশাখের উৎসব উদ্‌যাপন করছে। বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা রকম আয়োজনে ভেতর দিয়ে প্রবাসীরা নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরছেন। এই অনুষ্ঠানের সময় সীমিত করা কাম্য নয়।
 
পাহাড়ে সর্বজনীন বৈসাবি বা সাংগ্রাইং-এর মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে। শোভাযাত্রায় ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালিদের থেকেও অংশগ্রহণ থাকবে। এরপর বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
 
কোভিড-১৯–এর বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত কয়েক বছর আলপনা উৎসব আয়োজিত না হলেও এবার অষ্টম সংস্করণ নিয়ে স্বরূপে ফিরে এসেছে ‘আল্পনায় বৈশাখ ১৪৩১’। এবারের বর্ষবরণে দেশজুড়ে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে ঢাকাসহ দেশের মোট তিনটি শহরে ঐতিহ্যবাহী আলপনা আঁকা হবে। স্থানগুলো হলো ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খুলনার শিববাড়ি মোড় ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন। আয়োজনটি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১-এ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার আলপনা অঙ্কনের মাধ্যমে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা তৈরির বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
 
চলো জেগে উঠি, নতুন প্রজন্মের হাত ধরে। বারবার আশাবাদী হতে চাই, আশায় বুক বাঁধতে চাই। এ বাংলা আমার, এ বাংলা আমাদের। এ দেশের সংস্কৃতি কারও কাছ থেকে ধার করে আনিনি যে, নব্য সাধুদের বয়ানে স্তব্ধ হয়ে যাবে। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলা সংস্কৃতিকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা চলছে জোরেসোরেই। সময় এখন জেগে উঠার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে মৌলবাদীদের রুখে দিতে।
 
mrinalbanday@gmail.com
 
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।