• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৬:৩২

হাওরের অপার সম্ভাবনা

  রাজিয়া সুলতানা 
 

কৃষি উন্নয়নের সেক্টরে মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে বোরো ধান তোলা যায়, সে-ধরনের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত     কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছে সরকার। বীজ-সার-কীটনাশক ও যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রেও                      সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

“এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি”
 
কবির কবিতার এই পঙ্ক্তিমালাও হাওরের সৌন্দর্য বর্ণনার জন্য কম হয়ে যাবে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়; কিন্তু তা ভাষায় প্রকাশের উপমা দেওয়া বড়ই কঠিন। দিগন্ত বিস্তৃত হাওরে শনশন বাতাসে সবুজ ফসলে বয়ে যায় অনাবিল ঢেউ। এ যেন সমুদ্রের সৌন্দর্যকেও হার মানায়। আবার বর্ষায় নৌকাগুলোর ছুটে চলার নয়নাভিরাম দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। জেলেরা মনের আনন্দে মাছ ধরে। হাওর অঞ্চলে মৌসুমি মেঘ-বৃষ্টি-রোদের খেলা নিত্যদিনের। শরতের সকালে কুয়াশার চাদর, পূর্ণিমার রাতে শাপলা-শালুক সঙ্গে চাঁদের মিতালি, ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির কলতান, দৃষ্টি সীমায় দলবেঁধে উড়ে চলা বলাকার দল, স্বচ্ছ পানিতে সোনালি-রুপালি রঙিন মাছ দেখার মুগ্ধতা, শিল্পীর হাতে আঁকা দ্বীপের মতো বাড়িগুলো- সব মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য সৃষ্টি হয় হাওর-বাঁওড় অঞ্চলে। আবার কোথাও ধবধবে সাদা কাশফুল, আঁকাবাঁকা সরুপথ গ্রাম্যপথ, সরষে ফুলের হলুদে বর্ণমালা, পাকা ধানে উৎসবমুখর কৃষকের কলরব হাওরাঞ্চলকে আলাদা করে রেখেছে।
 
 
হাওর-বাঁওড় অঞ্চল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। পাহাড় থেকে নেমে আসে উজানের পানি। আর তাতেই পলিতে সিক্ত হয় হাওর-বাঁওড়; বিল পরিবেষ্টিত জলাধার। এই জলাধারগুলো নদ-নদী সাথে মিলেমিশে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করে। মৌসুমে হাওর অঞ্চলগুলো হয়ে ওঠে ফসলি জমির সুবিস্তীর্ণ প্রান্তর- হাওরবাসী কৃষকের স্বপ্ন পূরণের প্রধান উৎস। আবার বর্ষা মৌসুমে হাওরগুলো হয়ে ওঠে সাগরসদৃশ জলরাশির অববাহিকা। কখনও হুট করে পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণে এবং প্রাকৃতিক বানভাসীতে নিভে যায় কৃষকের স্বপ্ন।
 
প্রচলিত অর্থে হাওর হলো অনেকটা পিরিচাকৃতি নদীর তীরবর্তী নিম্নভূমি বা জলাভূমি। যেখানে বন্যা প্রতিরোধের জন্য মাটির বাঁধ দিতে হয়। সাগর সংস্কৃত শব্দ, বিবর্তিত শব্দ সায়র। ধারণা করা হয়, সায়র থেকে কালের বিবর্তনে হাওর শব্দের উৎপত্তি। আক্ষরিক অর্থে হাওর হচ্ছে এক বিস্তৃত জলমগ্ন বা মৌসুমে জলশূন্য ভূমি। বর্ষায় হাওর হয়ে ওঠে সাগরের মতো; আর শীতে শুধু ফসলি মাঠ। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হাওরাঞ্চল বাংলাদেশেই অবস্থিত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি জেলায়- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাওরগুলো অবস্থিত। আয়তন প্রায় ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে হাওরের সংখ্যা ৪১৪। ভিন্নমতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে ৪২৩টি।
 
 
নিশ্চয়ই সমধিক পরিচিত হাকালুকি হাওরের কথা মনে আছে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর। দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির হাওর হলো টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে টাঙ্গুয়া হাওরে। সে-কারণে পানির মিষ্টতা সবাইকে অন্যভাবে কাছে টানে। সুজলা-সুফলা লাল-সবুজের বাংলাদেশে উৎপাদনশীল জলাভূমি হাওরগুলো হচ্ছে বিপুলভাবে পলিমাটি সমৃদ্ধ। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধান ও মিঠা পানির মাছের প্রায় অর্ধেক পাওয়া যায় হাওরগুলোতে। দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রায় প্রতি বছরই আগাম বন্যা, ঝড় ঝঞ্ঝাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে হাওরের ফসল ও মাছ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে হাওরবাসীর লালিত স্বপ্ন বানভাসিতে বিলীন হয়ে যায়। হাওরের আকাশ-বাতাস কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে। সেই কান্না মানববান্ধব সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার হৃদয়ে গভীরভাবে আঘাত হেনেছে। তিনি হাওরবাসীর এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। তিনি হাওরবাসীদের দুঃখ ঘোচাতে মন্ত্রিসভায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
 
প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর আমাদের এই হাওর। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই হাওরের উৎপত্তি ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়ায়। মধুপুর সোপান গঠনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। মেঘনার শাখা নদীসমূহ দ্বারা গঠিত প্লাবন ভূমির স্থায়ী ও মৌসুমি হ্রদ নিয়েই গঠিত হয়েছে হাওর অঞ্চল। পাহাড়ঘেরা হাওরগুলো বছরের সাত থেকে আট মাস পানিতে পূর্ণ থাকে। বাকি সময় এ যেন এক সুবিশাল শ্যামল প্রান্তর। বর্ষায় যে জমিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা হয়, শীতে সেই জমিতে পাকা ধান দোল খায়। হাওরগুলোর জীববৈচিত্র্য ব্যাপক। একদিকে যেমন প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় মাছ, শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যায়। অন্যদিকে স্থায়ী ও পরিযায়ী পাখি, হাঁস ও অসংখ্য বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। এরা একদিকে যেমন হাওরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে মল ত্যাগ করে হাওরের জলমহালগুলো উর্বর করে। ফলে হাওরে হিজল, কবোচ, হোগলা, নলখাগড়া, উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন ও লতাগুল্মসহ প্রচুর পরিমাণে জলজ উদ্ভিদ জন্মে। যেখান থেকে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী খাদ্য সংগ্রহ করে ও আশ্রয় নেয়। ইকো সিস্টেমের বড় ভূমিকা পালন করে হাওরের জীবজগৎ। শীতে যখন পানি চলে যায় তখন পশু চারণভূমি জেগে ওঠে। এ-জন্য পশু পালনের জন্য হাওরবাসীর বাড়তি কোনো ঘাসের জোগান দিতে হয় না। অতি উর্বর পলিমাটির কারণে ধানের ব্যাপক ফলন হয়। হাওর অঞ্চলের জমিগুলো এক ফসলি। শুধু বোরো ধানই চাষ করা হয়। তবে এখন কিছু কিছু জমিতে কৃষি কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে সবজিও চাষ করে। জমিতে বাড়তি কোনো সারের প্রয়োজন পড়ে না। হাওরে তুলনামূলকভাবে ফসল উৎপাদন অনেক বেশি। বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি, হাঁস পালন করে হাওরবাসী। হাওরবাসী বিনোদনের জন্য বেছে নেয় যাত্রা, পালাগান ইত্যাদি। যার প্রতিরূপ আমরা দেখতে পাই হুমায়ুন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রে। শীত মৌসুমে ধান বোনা-ধান কাটা-মাড়াই-শুকানো-বিক্রিতে কেটে যায়। চলে নবান্নের উৎসবও। সুখ-দুঃখ, আনন্দে-উৎসবে কেটে যায় হাওরবাসীর সাদা-মাটা সরল জীবন।
 
 
অতি সুখ হাওরবাসীর কপালে সয় না। দুঃখ এসে প্রতিনিয়তই কড়া নাড়ে দোরগোড়ায়। বৈশাখ মাসে ধান পাকে। প্রায় প্রতি বছরই যখন হাওরের ধান পাকতে শুরু করে তখন মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এসে হানা দেয়। শুরু হয় ঝড়ের দাপাদাপি, আগাম বন্যা ইত্যাদি। আতঙ্কে হাওরবাসীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়। ফসল রক্ষার জন্য বাঁধেও শেষ রক্ষা হয় না। আবার কখনও পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে যায় বাঁধ। অনাহূত পানিতে তলিয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন। সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাবে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে ২০ বছরই কৃষকের স্বপ্ন বানভাসীতে হারিয়ে গেছে। এবারও পাহাড়ি ঢল হয়েছে। এসেছে প্রকৃতির অবাঞ্ছিত রূপ। হাওরাঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত ৫,০০০ মিলিমিটার। এবার বৈশাখের শুরুতেই বৃষ্টিপাত হয়েছে ১,৩০০ মিলিমিটার। ফলে বিগত ৩৯ বছরে এবারই প্রথম এত তাড়াতাড়ি পানি এসেছে হাওরে। ফলে হাওরের নিচু এলাকার ৭৫ শতাংশ ফসলই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যার কারণে শুধু ফসলের ক্ষতিই হয়নি, মাছ চাষও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করে। ফলে মাছ মারা যায়। বন্যার পরে যদি পানিতে চুনা দেওয়া হয়, তাহলে মাছগুলো বাঁচানো সম্ভব ছিল। কিন্তু পরিধির জন্য এটা অসম্ভব। হাওরাঞ্চলে বড় বড় হাঁসের খামার রয়েছে। বন্যায় এই খামারগুলো ভেসে যায় কখনও কখনও। সব মিলিয়ে অনাহূত বানভাসীতে হাওরাঞ্চলে ভয়াবহ দুঃখের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
 
 
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। তার প্রভাব হাওরেও পড়েছে। বাড়ছে তাপমাত্রা। পাহাড়ের বরফ গলে ঢলের সৃষ্টি হচ্ছে। আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। এসবের সাথে মানুষ্য সৃষ্ট কারণও রয়েছে। যেমন- যেসব খাল হাওরের বিলগুলোকে নদীর সঙ্গে যুক্ত করত, বাঁধের কারণে এখন সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মাছের প্রজনন ও লালনভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। নির্বিচারে মৎস্য নিধন, রাসায়নিক বর্জ্য ও বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে হাওরের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটেছে। পলি জমা হওয়ায় নদী ও হাওরগুলো ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে পানি উপচে মানুষের বসতভিটায় উঠে যাচ্ছে। এতে হাওরবাসীর দুঃখ-কষ্ট আরও চরম আকার ধারণ করছে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশ। বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঋণদায়গ্রস্ত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্নমুখী। শিক্ষা-দীক্ষায় হাওরাঞ্চল এখনও অনেক পিছিয়ে। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে হাওরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘাটতি রয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপদসংকুল। চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবও অনেক বেশি। নেই কোনো পরিকল্পিত কবরস্থান, শ্মশানঘাট। বর্ষার সময় মানুষ মারা গেলে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা কখনও কখনও শোনা গেছে।
 
হাওরবাসীর সরব দুঃখ-কান্নার কারণ খতিয়ে দেখছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। করছে তদন্তও। বিপুল অর্থায়নের পর ঠিকঠাক থাকছে না বাঁধগুলো। অতিরিক্ত পানির ঢল নামলেই ভেঙে যাচ্ছে। তবে কী বাঁধের কাজে অনিয়ম হচ্ছে, না-কি বাঁধগুলোর ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। এসব কারণগুলো দৃষ্টি এড়ায়নি খোদ প্রধানমন্ত্রীরও। একনেক সভায় তাই তো তিনি বলেছেন, ‘একদিক দিয়ে বাঁধ তৈরি করতে করতে যদি অন্যদিক দিয়ে ভেঙে যায়; তাহলে সেই বাঁধ হাওরবাসীর কোনো কাজে আসবে না।’ প্রোজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট কমিটি বা পিআইসি নামক বোর্ড রয়েছে পানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বাঁধগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের নামে বাস্তবায়ন কমিটি শুধু মাটি ফেলেই দায়িত্ব পালন করছে। আবার বাঁধ মেরামতের সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ মেরামত করায় কোনো লাভ হচ্ছে না। বিষয়টি আমলে নিয়ে ৭টি জেলার হাওর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক করেছেন। ফলশ্রুতিতে হাওরাঞ্চল রক্ষার জন্য নতুন কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। হাওরাঞ্চলে মহাপরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাভূমি ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য উন্নয়ন, বিদ্যুৎ শক্তি, বন, খনিজ সম্পদ, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, পশু সম্পদ ও শিল্প শিক্ষার উন্নয়ন, সামাজিক সুবিধাদি, মুক্তা চাষ, আবাসন, পর্যটন ইত্যাদি। এগুলো সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থা দ্বারা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনাগুলো ৫ বছর, ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি। জলাভূমি ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে সঠিক ইজারা পদ্ধতি, হাওরাঞ্চল খনন, ড্রেজিং করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা, উপচেপড়া পানি সংরক্ষণ করে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সড়ক নির্মাণ। তবে এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়া সড়ক নির্মাণ করা হবে না। অর্থাৎ প্রথাগত সড়ক নির্মাণ করা হবে না। বিদ্যমান সড়কগুলোতে ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাই করছে সরকার। কৃষি উন্নয়নের সেক্টরে মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে বোরো ধান তোলা যায়, সে-ধরনের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছে সরকার। বীজ-সার-কীটনাশক ও যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রেও সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হাওরাঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধ করতে নজরদারি বাড়িয়েছে। সর্বোপরি পাহাড়ি ঢলের গতিপথ পরির্বতন করেও আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে জনবান্ধব সরকার।
 
 
আড়াই থেকে ৩ কোটি মানুষের বসবাস হাওরাঞ্চলে। পলিবেষ্টিত হাওরাঞ্চল বিপুল সম্ভাবনাময়। বিশেষ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের জন্য হাওরের ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতির মূলধারায় সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিষয়টি অনেক আগে অনুধাবণ করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তো তিনি হাওরাঞ্চল রক্ষার জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা হাওরবাসীর দুঃখ ঘুচাতে আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
উত্তরণ, দ্বাদশ বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা, মে-২০২২
দেশকন্ঠ/রাসু 
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।