• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৬:১৩

ঘণ্টায় ৬০-৭০ জন ডায়রিয়া রোগী আইসিডিডিআরবিতে

জাকিয়া আহমেদ : দুপুরে প্রথমে বমি, এরপর শুরু হয় পাতলা পায়খানা। এমন অবস্থায় পুরান ঢাকার হোসনী দালানের বাসিন্দা ৩৫ বছরের জালু মিয়াকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আসার পর চিকিৎসকরা স্যালাইন দেন, ওষুধ‌ও চলে। ভাগ্নে কবির হোসেন জানান, এখন সুস্থ রয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ২৫ মার্চ সকালে স্ত্রী সন্ধ্যাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন উজ্জ্বল হালদার। এর আগে, রাত তিনটার দিকে শুরু হয় বমি আর পাতলা পায়খানা। আজ দুপুর দুইটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, তার অবস্থা আগের থেকে একটু ভালোর দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। উজ্জ্বল হালদার এসেছেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে। তিনি জানালেন, এর আগে তার বড় বৌদিও একই অবস্থা নিয়ে এখানে ভর্তি ছিলেন। তিন দিন আগে ভর্তি হয়ে আজ সকালে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
 
পাঁচ বছরের জুনায়েদ কাজীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা মুনিয়া। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তারা আসেন বাসাবোর মাণ্ডা থেকে। পাতলা পায়খানা আর বমি একসঙ্গে, অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়, আসার সময় জ্ঞান ছিল না, এখানে আসার পর একটা স্যালাইন দেওয়া হয়, এরপর জ্ঞান ফিরে। এখন অনেকটাই ভালো অবস্থায় আছে ছেলেটা, বলেন মুনিয়া। এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা এবারই সর্বোচ্চ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতি ঘণ্টায় এখানে ৬০ থেকে ৭০ জন ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধও রয়েছেন। রোগীদের জায়গা দিতে হাসপাতালের নির্ধারিত স্থান ছাড়াও বাইরে দুটো তাঁবু টানানো হয়। এর প্রতিটিতে ৮০টি করে বেড আছে। হাসপাতালের রেজিস্টার থেকে জানা যায়, গত ২২ মার্চ একদিনে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২৭২ রোগী; যা হাসপাতালের ইতিহাসে রেকর্ড।
 
এরমধ্যে গত ১৬ মার্চ রোগী ভর্তি হয় এক হাজার ৫৭ জন, ১৭ মার্চ এক হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ এক হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ এক হাজার ২৩৩ জন আর ২৪ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন। এর আগে, এই হাসপাতালে ২০১৮ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছিল। আইসিডিডিআর,বির গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক তারিফুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৮ সালে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল। সেবার গড়ে এক হাজারের মতো রোগী ছিল, একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ছিল এক হাজার ৪৭ জন। কিন্তু এবার এক হাজার ২০০ রোগী ছাড়িয়ে গেছে, এর আগে কখনও এমন হয়নি। রোগীর চাপে হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা। নির্ধারিত চিকিৎসক, নার্সসহ সাপোর্ট স্টাফে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে হাসপাতাল, সিনিয়র চিকিৎসকসহ অন্যরা রাতের পালায়ও কাজ করছেন।
 
শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬১৭ জন। এরমধ্যে আগের রাত ১২টা থেকে রাত ১টায় রোগী ভর্তি হয় ৪৮ জন, ২টায় সেটা বেড়ে হয় ৭৬ জন, তিনটায় ৯৬ জন, চারটায় ১১৭ জন, সকাল পাঁচটায় ১২৬ জন, ছয়টায় ১৪৪ জন, সাতটায় ১৭৭ জন, আটটায় ২৩২ জন, নয়টায় ২৮৭ জন, ১০টায় ৩৪১ জন, বেলা ১১টায় ৪২৪ জন, ১২টায় ৪৯২ জন, দুপুর একটায় ৫৫৭ জন আর দুপুর শেষ হতে হতে তা বেড়ে হয় ৬১৭ জন। আইসিডিডিআর'বিতে ২৫ মার্চ এ প্রতিবেদক বেলা একটা ৪২ মিনিট থেকে দুইটা দুই মিনিট পর্যন্ত ৯ জন রোগীকে ভর্তি হতে দেখেন।
 
এদের হয় হুইল চেয়ার অথবা স্ট্রেচারে করে নিয়ে আসতে দেখা গেছে। বাকিদের কেউ স্বজনদের কাঁধে ভর দিয়ে আবার শিশুদের কোলে নিয়ে আসতে দেখা যায়। কেউবা অ্যাম্বুলেন্স, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি আবার কেউ সিএনজিতে করে আসছেন। একের পর এক রোগী সামলাতে নিরাপত্তারক্ষীসহ সংশ্লিষ্টরা ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভর্তি হবার ডেস্কগুলোতে মানুষের দীর্ঘ লাইন।
 
২৫ মার্চ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে জানিয়ে আইসিডিডিআর'বির সহকারী বিজ্ঞানী ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, গত প্রায় ১০ দিন ধরেই ডায়রিয়াতে রোগী ভর্তি বাড়ছে। রোগী একটু একটু করে বাড়ছিল। মার্চ এপ্রিল মাস এলেই আমরা প্রস্তুত থাকি। সাধারণত এটা মার্চের শেষ দিকে হয়। কিন্তু এবারে মার্চের শুরুতেই হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে যাদের ডায়রিয়া হয়, তাদের পানিশূন্যতার হারটা বেশি থাকে। কিন্তু এবারে আগের চেয়েও রোগী একটু বেশি পাচ্ছি। “গত সাত দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মতো রোগী ছিল। এরকম হারে রোগী আসছে সাত দিন ধরেই”।
 
সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও এবারে ‘এডাল্ট’ রোগীর সংখ্যা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮ বছরের বেশি বয়স- এমন রোগীর সংখ্যাই এবার বেশি। তবে, শিশুও রয়েছে। আর এবারে পানিশূন্যতা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা একটা লক্ষণীয় বিষয়। যার কারণে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। “প্রতিটি বেডে চারটি করে স্যালাইন রাখা হয়েছে, যেন কোনোভাবেই সময় নষ্ট না হয়। আসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে, যেন তাকে সেভ করতে পারি”।
 
“অনেক রোগীর পানিশূন্যতা বাড়তে বাড়তে রোগী প্রায় শকে চলে যাচ্ছে, এটাকে তীব্র পানিশূন্যতা বলা হয়। এই গ্রুপের রোগী এবারে অনেক বেশি আসছে। এবং অনেক রোগীকে চার-পাঁচ মিনিট পর পাওয়া গেলে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যেতো। কিংবা আমরা যদি দেরি করতাম, বড় রকমের একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যেত পারতো”। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার মতো ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল (২৪ মার্চ) একজন রোগীকে মৃত আনা হয়েছে, তিনি পথেই মারা গেছেন।
 
ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, এবারে রোগী এত বাড়ার কারণে প্রথমে একটি অস্থায়ী তাঁবু করা হয়। পরে তাঁবু এক্সটেন্ড করতে বাধ্য হই, সেকেন্ড তাঁবুও শুরু হয়ে গেছে। পুরো ঢাকা শহর থেকেই রোগী আসছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তবে বেশিরভাগ আসছে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া আর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে। বর্ষার আগে এবং পরে সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা গেলেও এবারে সেটা আগেই হয়েছে জানিয়ে শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, সংখ্যাটা এবার বেশি। সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপের সময় ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী হয়, কিন্তু এবারে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে, ১২৭২ জন। তবে তা গড়ে ১২০০-এর বেশি। “আইসিডিডিআর,বির ইতিহাসে ১২৭২ জন রোগী ভর্তি হওয়াটাই রেকর্ড”।
 
এভাবে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, হঠাৎ গরম পড়েছে, সব স্কুল-কলেজ খুলে গেছে, সবাই এখন বাইরে বের হচ্ছে—এটা একটা কারণ। বাইরের খোলা খাবার, জুসের নামে যা বিক্রি হচ্ছে, পরিষ্কার পানি নেই… এমন অবস্থায় যারা এগুলো খাচ্ছেন তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। যথাযথ সার্ভে করলে বিষয়টি আরও বোঝা যাবে, বলেন শোয়েব বিন ইসলাম।
দেশকণ্ঠ/আসো    #   সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।