মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশের খেলাগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি আশার আলো হয়ে আছে মেয়েদের ফুটবল। দারুণ ফুটবল খেলে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে সাবিনা খাতুনের দল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। প্রথম সেমিতে ভারত-নেপাল মুখোমুখি হবে।
দল হিসেবে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে এমন প্রত্যাশা যারা করছেন তাদের কাছে দিনের প্রথম ম্যাচটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়ে এখন সবচেয়ে আলোচিত দলের নাম বাংলাদেশ। তাই গোলাম রব্বানী ছোটনের শীষ্যদের হাতেই অনেকে শিরোপা দেখছেন। প্রতিপক্ষ ভুটান হলেও বাংলাদেশ বেশ সতর্কই আজকের ম্যাচে। সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়েও আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে চান না টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। যে কারণে ভারতের বিপক্ষে বড় একটি জয় পাওয়ার পরও বিশ্রামে না গিয়েও যথারীতি অনুশীলন সেরেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। প্রতিদিনের মতো নেপালের কাঠমান্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার্স মাঠে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে সাবিনা বাহিনী।
সেমিফাইনালের আগে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অনুশীলন করেছে গোটা দল। যেহেতু এবারের দলটির মূল লক্ষ্য শিরোপা জয় করা। তাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই তৃপ্ত নয় দলটি। যদিও টুর্নামেন্টের সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে সাবিনা খাতুনরা। তার পরও ফাইনালে আরো শক্তি নিয়েই বাংলাদেশের পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারে উপমহাদেশের শক্তিশালী ভারত। এ ছাড়া ‘বি’ গ্রুপ থেকে শেষ চারে আসন নিশ্চিত করা ভুটানকেও বেশ দক্ষ প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছে বাংলাদেশ দল। যে কারণেই সবার এমন সতর্কতা পুরো দলের। সেমিফাইনালের আগে অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না বলেন, ‘বড় ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতকে হারানোর পর উল্লাস যা করার এখানেই করেছি। হোটেলে যাওয়ার পর ডিনার করেছি এবং অনেকের পায়ে ব্যথা ছিল, তারা আইস বাথ করেছে আর চিকিৎসা নিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আমাদের লক্ষ্য সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুত হওয়া’। এই মুহূর্তে দলেল মূল্য লক্ষ্য তাই ফাইনাল। যেহেতু বাংলাদেশের লক্ষ্য ফাইনালে খেলা, তাই সেটি পূরণ করতে হলে অবশ্যই সেমিফাইনালের বাধা টপকে যেতে হবে। ভুটানও অনেক ভালো দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো দলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আগের ম্যাচের মতো ধারাবাহিকতা রেখে সেমিফাইনালেও খেলাই লক্ষ্য।
এর আগে স্বাগতিক নেপালের কাছে ৪-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্টে যাত্রা করে ভুটান। অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫-০ গোলের বড় জয় পায় তারা। ওই একটি জয়েই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে তারা। এর আগে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে উচ্ছ্বসিত সাবিনা খাতুনরা। তবে এই উচ্ছ্বাস অতীতের খাতায় তুলে রাখছেন তারা। এখন তাদের ভাবনায় কেবলই সেমিফাইনালের লড়াই। ভুটানের বিপক্ষে খেলার নানা কৌশল নিয়েই কাজ করে চলেছেন তারা। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভুটানের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন। হবে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। এদিকে দলের সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটা মেয়েদেরই দিলেন কোচ ছোটন। ভারতের বিপক্ষে এর আগের ১০ বারের দেখায় নিজেদের সম্বল বলতে একটি মাত্র ড্র। অথচ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে যে কত অবলীলায় সেই ভারতকে গুড়িয়ে দিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। কৃষ্ণা রানীর ১টি আর সিরাত জাহান স্বপ্নার জোড়া গোলে শক্তিশালী ভারতকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে গ্রুপ সেরা হয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে সাবিনারা। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ নেপাল।
আর ভারতের বিপক্ষে এমন জয়ের পর তার পুরো কৃতিত্বটাই মেয়েদের দিলেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। নেপালের দশরথ রঙ্গশালায় গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতকে হরানোর পর বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন মেয়েদের প্রতি নিজের প্রতিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারের সাফে মেয়েদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল ভাল ফুটবল খেলবে। দেশের জন্য ও মা বাবার জন্যই ভাল ফুটবল খেলেছে। বাংলাদেশের নারী ফুটবলে পরিবর্তন এসেছে। এখান থেকেই শুরু হয়ে গেল তাদের জয়যাত্রা।’ ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শুরুতেই বাংলাদেশের কোচ বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ একটি ম্যাচ খেললো সাবিনারা। তাদেরকে অভিবাদন জানাই। প্রথমবার মেয়েদের জাতীয় দল হারিয়েছে ভারতকে। এটা সম্ভব হয়েছে মেয়েদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে।’ দীর্ঘ পাঁচ বছর মেয়েরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে ক্যাম্প করেছে এই টুর্নামেন্টের জন্য। এটা তাদের সেই অনন্য ত্যাগের ফসল। ভারতের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস আগেই জন্মেছিল জানিয়ে বাংলাদেশের কোচ বলেন, ‘মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পরই আমার আত্মবিশ্বাস জন্মেছিলো। মনে হয়েছিল এই মেয়েরা ভারতকে হারাতে পারবে। সেটাই করে দেখিয়েছে তারা। যদিও কেউ কেউ বলেছিলেন কয়েকজনকে বিশ্রামে দিতে। কিন্তু আমি তা দিইনি।’ সাবিনা-সানজিদাদের নিয়ে গবির্ত কোচ।
বাংলঅদেশের বয়সভিত্তিক দল থেকে নিয়মিত অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রমের ধারাবাহিকতায় আজকের নারী দলের এই সফলতা। যার শুরুটা হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ ও ১৯ এর এএফসি ও সাফের প্রতিযোগিতা দিয়ে। এদিকে সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে এক চুলও ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভুটান বলে এই মুহূর্তে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চায় না ভারতকে হারানো বাংলাদেশ। তাদের লক্ষ সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে জয়। এই ম্যাচে একচুলও ছাড় দিতে চান না খেলোয়াড়রা। দেশবাসীকে জয় উপহার দিয়ে শিরোপা জয়ের কাছে যেতে চায় বাংলাদেশ দল। লক্ষ্য আপাতত সেটাই।
দেশকণ্ঠ/আসো