মামুন হোসেন : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন ক্রীড়াসংগঠক এবং দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবান্ধব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন। ফুটবল, দাবা, সাঁতার, গলফসহ বাংলার ক্রীড়াঙ্গনে নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গেল ২৬ আগস্ট ভারত থেকে ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন তরফদার রুহুল আমিন। ক্রীড়াঙ্গনে এমন বিরল সম্মাননা স্মারকটি (মাদার তেরেসা পুরস্কার) বাঙালি জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎর্সগ করেছেন তরফদার রুহুল আমিন।
জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ফোরামের ব্যানারে ১৫ সেপ্টেম্বর শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে তাকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ফোরামের সভাপতি এবং বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে মাদার তেরেসা পুরস্কার প্রাপ্তি নিজের একার নয় বাঙালি জাতির অর্জন বলে মন্তব্য করে তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি যে সম্মাননা পেয়েছি এটা আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার, স্বাধীনতা পরবর্তী যুবসমাজকে যিনি সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন; ১৯৭৫ সালের কালরাতে যিনি ঘাতকের বুলেটে শাহাদাত বরণ করেছেন সেই ক্রীড়াসংগঠক শহীদ শেখ কামালকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি। যেদিন আমি এই পুরস্কার পেয়েছি সেদিনই আমার মনের মধ্যে এটা ছিল যে পুরস্কারটি ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎসর্গ করব। আমাদের দেশ যদি স্বাধীন না হতো; শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের মতো সংগঠক যদি না থাকতেন তাহলে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন কিছুতেই এগুতে পারত না।’
অনুষ্ঠানে তরফদার রুহুল আমিন আরো বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন দেখে সত্যিই আমি অভিভূত, আনন্দিত। এতটাই আনন্দিত যে ভাষায় প্রকাশের নয়। আপনাদের উপস্থিতি দেখে আমি বাকরুদ্ধ। একটা কথাই বলতে চাই, আজকে ক্রীড়াঙ্গন কিন্তু এক জায়গাতে এসে দাঁড়িয়েছে। মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে আসলে এই অ্যাওয়ার্ড আমার একার না। আপনাদের সকলের, বাঙালি জাতির অ্যাওয়ার্ড এটা। আমি শুধু এটা ভারত থেকে বহন করে নিয়ে এসেছি মাত্র। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি- এটা আপনাদের সকলের প্রাপ্য।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ক্রীড়া সংগঠকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), কাবাডি, আরচারি, অ্যাথলেটিকস, জুডো, কারাতে, বক্সিং, সাঁতার, দাবা, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ভারোত্তোলন, উশু, খো খো, রেসলিং, বাশাআপ, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাছাড়াও বিভিন্ন জেলার ডিএফএ;র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ, সাবেক ফুটবলার, ক্লাব কর্তাগণসহ ক্রীড়াঙ্গনের সর্বস্তরের কর্তাব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতির জন্য তরফদার রুহুল আমিন নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ফেডারেশনের জন্য কাজ করছেন। ওনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) একজন কাউন্সিলর। এটা যেমন ক্রীড়াঙ্গনের জন্য; তেমনি আমাদের বিওএ’র জন্যও গর্বের।’ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কাবাডি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ওনাকে অভিনন্দন জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। এটা শুধু ওনার একার প্রাপ্তি নয়; এটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাপ্তি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ সংগঠক এবং সাইফ পাওয়ারটেকের অন্যতম পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনের সুযোগ্যপুত্র তরফদার রুহুল সাইফ বলেন, ‘এটা শুধু আমার বাবার একার সাফল্য নয়; এটা পুরো ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য। ওনার ছেলে হিসেবে অবশ্যই আমি গর্ববোধ করি।’ ক্রীড়া সংগঠক সিরাজ উদ্দিন মো. আলমগীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফোরাম সভাপতি বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর বলেন, ‘আমরা ক্রীড়াঙ্গনে একজন পথপ্রদর্শককে অনুসরণ করে সামনে এগুবো। তরফদার রুহুল আমিন হলেন আমাদের সেই পথপ্রদর্শক। সে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনেকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। মাদার তেরেসা কোনো ছোট পুরস্কার নয়। এটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এটার গুরুত্ব অনেক।’ আরচারির সাধারণ সম্পাদক রাজিব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন, ‘আমাদের প্রিয় ভাই বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক তরফদার রুহুল আমিন মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ওনি পুরস্কার পেয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন; ক্রীড়াঙ্গনকে গর্বিত করেছেন।’
ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, ‘তরফদার রুহুল আমিন ক্রীড়াঙ্গনকে জাগ্রত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার অনন্য অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তার মাদার তেরেসা পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। তরফদার রুহুল আমিন সুইমিং ফেডারেশন, দাবা ফেডারশন, ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।’ সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লাহ এম বি সাইফ বলেন, ‘তরফদার রুহুল আমিন আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। ওনার আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। আমাদের সুইমিং ফেডারেশনের জন্য ওনি অনেক কাজ করেছেন। ওনার কারণেই সুইমিংয়ে তৃণমূলে অনেক কাজ হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা এবং বাশাআপের সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, ‘ওনার মতো ক্রীড়া সংগঠক বাংলাদেশে বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জানাতে চাই তরফদার রুহুল আমিনকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করা হোক।’
দেশকণ্ঠ/আসো