মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ঢাকায় পৌঁছেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সেই সঙ্গে বাড়চ্ছে ক্রিকেটের উত্তাপ। লাল সবুজের বাংলাদেশও পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন অপেক্ষা মাঠে নামার। এই সিরিজ সাজানো হয়েছে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। বিশ্রাম শেষে শনিবার ২৫ জানুয়ারি সকালে মিরপুরের একাডেমি মাঠে প্রথম অনুশীলন করবে ইংলিশরা।
১ মার্চ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশ- ইংল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। একই ভেন্যুতে ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ম্যাচ। এরপর ৬ মার্চ সিরিজের শেষ ওয়ানডেটি অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
ওয়ানডে শেষে ৯ মার্চ চট্টগ্রামের ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি শুরু করবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড। সিরিজের বাকী ম্যাচ দুটি যথাক্রমে ১২ ও ১৪ মার্চ মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
সিরিজ শুরুর আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও সমঝোতার মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। এ ব্যাপারে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছিলেন, ‘আমরা সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটা সিলেটে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ইংল্যান্ড দল শুধু আনুষ্ঠানিক ম্যাচগুলো খেলতে চাইছে। কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ এবার হচ্ছে না।’ ওয়ানডে সিরিজটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় দুপুর বারোটা থেকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ শুরু হবে বেলা তিনটা থেকে। দ্বিপাক্ষিক এ সিরিজকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দল ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ উভয় দলই। টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য অবশ্য এখনও দল দেয়নি টাইগাররা। ২০১৬ সালের পর আবার বাংলাদেশ সফরে এসেছে ইংল্যান্ড। দুই দেশের ওয়ানডে সিরিজটি বিশ^কাপ সুপার লিগের অংশ। তবে দুই দলই ইতোমধ্যে ২০২৩ বিশ^কাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড। সেবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল তারা। তবে চট্টগ্রাম টেস্ট হারলেও ঢাকা টেস্ট টাইগাররা ১০৮ রানে জিতেছিল। প্রথমবার দেশের মাটিতে এবার ইংলিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। ইংল্যান্ড সিরিজ সামনে রেখে গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল গতকাল বিশ্রাম নেবে।
এদিকে ১৫ বছরের বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে চায় ইংল্যান্ড। প্রথম টেস্ট জিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে সফরকারী ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ড্র বা জয় পেলেই সিরিজ জিতবে ইংলিশরা। ১৫ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব এবার ঘোচাতে চায় ইংল্যান্ড। অন্যদিকে, প্রথম টেস্টে হারের লজ্জা ভুলে সিরিজ সমতায় শেষ করার লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডের। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিলো ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের টেস্ট ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংলিশরা। এরপর তিনবার নিউজিল্যান্ড সফর করলেও, টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। একবার ড্র ও দু’বার হেরেছে তারা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত জয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৫ বছর ধরে সিরিজ জিততে না পারার গেরো কাটানোর পথ তৈরি করে ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডকে ২৬৭ রানের বড় ব্যবধানে হারায় ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান বিবেচনায় এটিই সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড ইংল্যান্ডের। এর মাধ্যমে মাধ্যমে ২০০৮ সালের পর আবারও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বেন স্টোকসের দল।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ওভার প্রতি সাড়ে পাঁচের উপর রান নিয়ে ৯ উইকেটে ৩২৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। জবাবে ১৮২ রানে ৭ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। শেষদিকে অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে (১৩৮) নিউজিল্যান্ডকে ৩০৬ রানের সংগ্রহ এনে দেন উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেল। ১৯ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং অব্যাহত ইংল্যান্ড। ওভার প্রতি পাঁচের বেশি রান নিয়ে সব উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রান করে নিউজিল্যান্ডকে বড় টার্গেট দেয় ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য ৩৯৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের দুই অভিজ্ঞ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিং তোপে পড়ে ১২৬ রানেই গুটিয়ে যায় কিউইরা। এই ইনিংসে ৪টি করে উইকেট নেন অ্যান্ডারসন ও ব্রড। এতে টেস্ট ইতিহাসে বোলিং জুটিতে সর্বোচ্চ ১০০৯ উইকেট শিকারের বিশ্বরেকর্ড গড়েন অ্যান্ডারসন ও ব্রড। ব্যাটার-বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দ্বিতীয় ম্যাচেও অব্যাহত রেখে সিরিজ জয়ে চোখ ইংল্যান্ডের।
ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেন, ‘আমরা যেভাবে খেলছি, এভাবেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবো। আমাদের লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা। তাহলেই আমাদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে। সিরিজ জয়ের জন্য দ্বিতীয় ম্যাচেও জিততে চাই আমরা।’ সিরিজ হার এড়াতে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না নিউজিল্যান্ড। আরও ভালো ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশায় কিউইরা। অধিনায়ক টিম সাউদি বলেন, ‘প্রথম টেস্টে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। আমাদের আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। সিরিজ হার এড়াতে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবার অবকাশ নেই আমাদের।’ এ পর্যন্ত ১১১ টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। জয়ের পাল্লাটা ইংল্যান্ডের দিকেই ভারী। ৫২ ম্যাচে জয় পেয়েছে ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডের জয় মাত্র ১২টিতে। ড্র হয়েছে ৪৭টি ম্যাচ।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্যূচি
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু সময়
১ মার্চ প্রথম ওয়ানডে মিরপুর দুপুর ১২টা
৩ মার্চ দ্বিতীয় ওয়ানডে মিরপুর দুপুর ১২টা
৬ মার্চ তৃতীয় ওয়ানডে চট্টগ্রাম দুপুর ১২ টা
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু সময়
৯ মার্চ ১ম টি-টোয়েন্টি চট্টগ্রাম বেলা ৩ টা
১২ মার্চ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি মিরপুর বেলা ৩ টা
১৪ মার্চ তৃতীয় টি-টোয়েন্টি মিরপুর বেলা ৩ টা
দেশকণ্ঠ/আসো