স্পোর্টস রিপোর্টার : প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে পরাজয়ের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল ডু অর ডাই। বাচাঁ মরার এ ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প ছিলনা জামাল ভুইয়ার দলের। সাথে ছিল গত ২০ বছর সাফে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে হারাতে না পারার বাজে রেকর্ড। সবমিলিয়ে অনেকটা পিছিয়ে থেকেই শুরু করে লার সবুজ প্রতিনিধিরা। তবে ভাল কিছুর আভাষ শুরুতেই পাওয়া গিয়েছিল। ব্যাঙ্গালুরুর শ্রী কান্তেরাভা স্টেডিয়ামে ভাল খেলে বাংলাদেশ শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও দ্রুত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে ০-২ গোলে হারের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-১ গোলের দারুণ এক জয় পেয়েছে হ্যাভিয়ের কাবরোর শীষ্যরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপকে সবশেষ হারিয়েছিল ২০০৩ সালে, ২০ বছর পর রবিবার আবার তাদের হারাল বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ২০০৯ সালের পর সাফের সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ, এবার সুযোগ তৈরি হয়েছে সেমিতে ওঠার। এক জয়ে বাংলাদেশ ৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে লেবানন ও মালদ্বীপের সঙ্গে সমান অবস্থানে রয়েছে। শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে।
বিশেষ করে লেবানন ম্যাচে বাংলাদেশ দুটি ভুলের খেসারত দিয়েছে। এদিন অবশ্য বাংলাদেশ কোনো ভুল করেনি। ১৭ মিনিটে মালদ্বীপ হামজার গোলে লিড নিলেও তাতে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের সেই অর্থে দায় ছিল না। হামজার ঐ আচমকা শট ছাড়া পুরো ম্যাচে বাংলাদেশকে ভীতি ছড়ানোর মতো তেমন কিছুই করতে পারেনি মালদ্বীপ। উল্টো পুরো ম্যাচজুড়ে নিয়ন্ত্রিত ফুটবল খেলেছে জামালরা। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মিনিট তিনেক আগে রাকিব হোসেন গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন। বিরতির পরও ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের হাতে থাকে। কোচ ক্যাবরেরা মজিবুর রহমান জনি, মোরসালিন আহমেদ ও মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নামান। এই তিনজন নামার পর বাংলাদেশের আক্রমণের ধার আরও বাড়ে। ৬৭ মিনিটে লিড নেয় বাংলাদেশ। এই গোলেরও যোগানদাতা তপু বর্মণ। কর্নার থেকে তার নেওয়া হেড জটলার মধ্যে পড়লে তারিক কাজী কয়েক দফা চেষ্টা করে বল জালে পাঠান। দাপুটে ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ।
এদিকে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা আনার মতো আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মালদ্বীপ। বাংলাদেশের রক্ষণ সেভাবে ভাঙতেই পারেনি দ্বীপরাষ্ট্রটি। তাদের ইতালিয়ান কোচ কয়েকটি বদল করলেও এতে ম্যাচে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো বাংলাদেশ এই ম্যাচের মাধ্যমে নতুন তারকা খুঁজে পেয়েছে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মোরসালিন দুর্দান্ত গোল করেছেন। ইনজুরি সময়ে তিনি বক্সের মধ্যে দারুণভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। এত সুন্দর ফিনিশিং অনেকদিন পর দেখা গেল জাতীয় দলে। পরিসয়ংখ্যানের বিচারে এটাই বাংলাদেশের সেরা কামব্যাক। বাংলাদেশকে এমন আগ্রাসী ফুটবল খেলতে দেখা গেছে কবে? মাথা চুলকেও মনে করতে পারছেন না তো! স্বাভাবিক। একের পর এক ব্যর্থতা যাদের নিত্যসঙ্গী, তারাই মনে করিয়ে দিল সোনালি দিনগুলোর কথা। নানা কারণেই মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি ‘অলিখিত ফাইনাল’ হয়ে দাঁড়াত না জামাল ভুঁইয়াদের। এমন বাঁচা-মরার ম্যাচেই স্মরণকালের সেরা ফুটবল খেলল বাংলাদেশ।
১৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়েও দমে যায়নি লাল-সবুজরা। ৪২ মিনিটে হেড থেকে রাকিব হাসানের সমতায় ফেরানো গোলের পর বাংলাদেশ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তবে দুর্বল ফিনিশিংয়ে কারণে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করায় এগিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না। ৬৭ মিনিটে সেই সুযোগ আসে। জটলার ভেতর তারিক কাজীর গোলে উদ্যাপনে মেতে ওঠে বাংলাদেশ শিবির। স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে থাকলে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে বাংলাদেশ। তবে এবার একেবারে ভিন্ন কিছু দেখালেন তপু বর্মণরা। ম্যাচের শেষ মিনিটে গোলপোস্টের কাছে দুর্দান্ত ডজে মালদ্বীপের এক খেলোয়াড়কে ছিটকে ফেলে বল জালে পাঠান শেখ মোরসালিন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশকে এমনভাবে খেলতে দেখা যায়নি। ২০১৯ ইডেন গার্ডেনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার পরও না জেতার আক্ষেপ আছে বাংলাদেশের। সেই ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন জামালরা। পিছিয়ে পড়েও ড্রয়ের অনেক গল্প আছে বাংলাদেশের। এই তো,২০১৮ সালে লাওসের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও ড্র করেছিল তারা। তবে একবিংশ শতাব্দীতে পিছিয়ে পড়েও জয় নেই। বাংলাদেশি কোচ ও সাবেক স্ট্রাইকার আলফাজ আহমেদও মনে করেন, মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়টি বাংলাদেশের সেরা প্রত্যাবর্তন, ‘পরিসংখ্যানের বিচারে আমরা অবশ্যই বলতে পারি এটাই সেরা কামব্যাক।’ দুই দশক আগে মালদ্বীপকে হারিয়ে সাফের একমাত্র শিরোপাটি জিতেছে বাংলদেশ।
তবে দুঃসংবাদ আছে বাংলাদেশের। দেশকে জিতিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে তারিক কাজীকে। ডাগআউটে তার উদ্যাপনটা ছিল স্মরণীয়। ১-১ গোলে সমতায় থাকা বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচটা হেলে যেতে পারত যে কারও দিকেই। কঠিন একটা পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখিয়েছে তারিক রায়হান কাজীর দ্বিতীয় গোলটি। সেই গোলের পর প্রাণখোলা উদ্যাপন করেও অবশ্য ম্যাচটি হাসিমুখে শেষ করতে পারেননি তারিক। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি তারিকের। সেই গোলের পর বেশ খারাপ একটা চোটই পেয়েছেন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। ম্যাচের ৮২ মিনিটের পর মাঠ ছাড়তে হয়েছে ফিজিওর কাঁধে ভর করে। জয়ের পর দলের সঙ্গে উদ্যাপনটাও করা হয়নি তারিকের। সোজা চলে গেছেন হাসপাতালে। বাংলাদেশের রক্ষণে তারিকের সতীর্থ তপু বর্মণ বললেন, ‘তারিক এখন হাসপাতালে। কিছুক্ষণ আমরা হয়তো বুঝতে পারব তারিকের কী অবস্থা।’ ঠিক কী ধরনের চোট পেয়েছেন, কতটা খারাপ অবস্থায় আছে সেটা জানা যাবে তার মেডিকেল রিপোর্টের পাওয়ার পরই। ভুটানের বিপক্ষে বুধবার গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।
এডিট/আসো