হকির সব থেকে বড় সমস্যা টাকা। টাকা জোগাড় করতে স্পন্সর দরকার। গ্রিণ ডেল্টা প্রয়োজনীয় সাহায্য করছে। এ সাহায্য অনেকটা নিত্য দিনের খরচ বহন করা, ঈদ পার্বণে আলাদা জৌলুসের টাকা; দল বাইরে খেলতে গেলে যে অতিরিক্ত টাকা দরকার সেটা হয় না তাই এবার মমিনুল হক সাইদ সাহেব ফেডেরেশনের ‘ফিকস্ড ডিপোজিট’ভেংগে বিদেশগামী হকি দলকে দেন। এভাবে তহবিল ভেংগে টাকা নেওয়া এই প্রথম ঘটল। উনি ক্যাসিনো সাইদ নামেই পরিচিত। টাকার জন্য তহবিল ভাংগা এটা আশ্চর্যজনক। সেক্রেটারি জেনারেলের হকির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে টাকা-সরবরাহের প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা থাকতেই হবে। তহবিল ভেংগে দল পাঠাতে হকি ফেডারেশনের যেকোনো কর্মচারীই পারতেন এতে এত বড় বড় কর্তার মূল্যবান সময় নষ্ট না করলেও চলত। হকিকে সচল রাখতে বেশ কিছু স্পন্সর হাতের মুঠোয় রাখাই কর্তাদের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত।
হকির দরকার প্রথমত 'কোচ' প্রাধান্য দেখা। ঢাকাতে হকি খেলা এসেছে সেই ১৯০৭ সালে। কোচ সব সময়ই হাতে কলমে খেলা বুঝিয়েছে। আমি নিজে মরহুম সালাম ভাইর কথা বলব, তিনি জালের নেটের ভিতর ১৫ থেকে কুড়িটা বল নিয়ে মাঠে আসতেন । সকালের অনুশীলনের পর তিনি যে কোন একজনকে ডাকতেন, তার থেকে তিরিশ গজ দূরে দাড় করিয়ে ওই খেলোয়াড়ের বামে বা ডাইনোসর বা ডাইনে দেখিয়ে বায়ে বা বায়ে দেখিয়ে ডান দিকে বল ছুড়তেন। ডান বা বাম এর সীমানা পঁচিশ গজ এই বাম ডান দৌড়ে বল ফিরত দিতে দম শেষ। সালাম ভাইকে দেখলে আমরা যে যেখানে পারি লুকাতাম। আব্দুস সাদেক, ইব্রাহীম সাবের এই হকির কিংবদন্তিরা হাতে কলমে শেখাতেন, সেই আমরা আজ হাপিত্যেষ হয়ে বিদেশী কোচ নির্ভর। ক্রমান্বয়ে কর্তাদের বিদেশী কোচ নির্ভরতা আমাদের দেশী কোচদের দক্ষতা উপেক্ষা এবং অবজ্ঞার প্রকাশই প্রমান করছে। আমরা যতবার ভাল করেছি তা দেশী কোচদের তদারকিতেই। একজন ইউরোপীয় কোচ আনলে তার থাকা খাওয়া ২৪ ঘণ্টা গাড়িসহ বিভিন্ন খরচে তহবিল দুর্বল হকির যায় যায় অবস্থা। আজ পর্যন্ত বিদেশী কোচ কোনো আহামরি রেজাল্ট দিতে পারে নাই।
মনে রাখতে হবে প্রচারে প্রসার। দৈনিক পত্রিকাগুলো এক চক্ষু হরিনের মতন ক্রিকেট নিয়ে অন্ধ। ক্রিকেটের পর যতটুকু ক্রীড়া পাতাতে যায়গা থাকে তা ফুটবল খেলা আর সালাহউদ্দিন-কিরণ এই খবর ভরে থাকে। দেশের তৃতীয় নামী খেলা হকি তবে এখন হকির থেকে আর্চারির খবর পত্রিকার পাতাতেই বেশী দেখা যায়। পত্রিকার পাতাতে ছোট্ট একটু খবর কত যে একজন খেলোয়াড়কে উজ্জীবিত করে তার প্রমান আমি। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাতে একটি হকি ক্যাম্পে তিরিশ জনের নাম এসেছে। সেখানে শাহাব উদ্দিন নামও আছে। এই শাহাব উদ্দিন আমি কিনা সে টা জানতে আমি রামপুরা থেকে ওয়ারি ক্লাবে মমিন ভাইর কাছে যাই, মমিন ভাই বললেন, এই শাহাব উদ্দিন তুইই ভাল খেলছিস; তাই ডাকা হয়েছে। ভাল করার চেষ্টা কর যাতে যখন ছাঁটাই করে বিশ জন রাখব তাতে থাকতে পারিস।ঐ যে পত্রিকাতে নাম দেখা এটাও একটা প্রেরণা। তাই পত্রিকার উচিত সব খেলার উপর প্রাধান্য দেখা।
আমার নাম শাহাব উদ্দিন থেকে চাকলাদার হয়ে গেল বিএমএতে গিয়ে। শাহাব উদ্দিন আর একজনও ছিল। ডাইরেক্টিং স্টাফ যখন শাহাব উদ্দিন বলে কল করত; তখন হন্তদন্ত হয়ে হাজির হতাম দুজনেই। যাকে ডেকেছেন তার বাইরের জনকে সাথে সাথেই বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি দেওয়া হতো। হয়ত বলত রাত দুটার সময় অমুক অফিসারের কাছে রিপোর্ট করবে। শীতের রাত দলের সময় দরজাতে নক করা মানে দোযক ঘাড়ে পরা। কত ধরনের শাস্তিই ওঁত পেতে থেকে ঘাড়ে পরত। তাই নামের মর্যাদা পত্রিকা থেকেও হকি খেলোয়াড়রা চায়। তাদের নিতে পাতার আট ‘কলাম’ এর অন্তত এক ‘কলাম’ এই হকি বিষয়ে বরাদ্দ রাখা হোক। পাঠককে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ক্রীড়া সম্পাদকের মর্জি সব থেকে বেশী প্রয়োজন।
হকি ৭১ প্রবর্তিত সময়ে দেশকে বারংবার উজ্জ্বল করেছে। সেই হকি আজ মাঠ থেকে ফেডারেশনে শক্তিশালী। আগামীতে মাঠ আর খেলোয়াড় যাতে ক্রীড়া পাতাতে আলোচিত হয় সে আশা করব।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকিদল এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরুস্কারপ্রাপ্ত
এডিট/আসো