অবশেষে ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে হারালাম। আফগানিস্তান ১৯ শতকের মধ্য ভাগ থেকেই ক্রিকেট খেলে; তবে ২১ শতক থেকে তারা সাফল্য পায়। আর ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী পরিচিতিও পায়। ২০০১ সালে আইসিসির সদস্য হয়। টেস্টে শামিল হয় ২০১৭ সালে।
ওয়ান ডে হলো পঞ্চাশ ওভারের খেলা, আপগানিস্তানের সাথে এই সিরিজকে অনেক দিন মনে রাখা হবে তামিম নাটকে। তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ১৩ রান করেছিলেন। তারপর আরো দুটো ম্যাচ ছিল। তবে তিনি ঘোষণা করলেন অবসরের। সিরিজের মধ্যে দলের অধিনায়ক অবসরে যাওয়া বিচিত্রই। ২০২২ সনে অস্ট্রেলিয়াতে টি-২০ বিশ্বকাপর সময়েও তিনি অবসর নিয়েছিলেন, খেলেন নি। এবার তিনি অধিনায়ক। একজন অধিনায়ক ক্রিকেট দলের নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, অপর দলকে যাচাইকরে তারপর তার দলকে পরিচালনা করা। আবেগকে প্রশ্রয় না দেওয়া আর তামিম আবেগে আর প্রচারের সাথে সন্ধি করে দল থেকে সরে গেলেন? তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মাত্রা যে দলের খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে এটা তিনি কি বুঝেন নাই? এবারের একদিনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট শুরু হল বলে, এই ড্রামার ছাপ সেখানে পরবেই। বলিলাম না আসছে সেপ্টেম্বরে হওয়া বিশ্বকাপ। তার অবসর নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ‘তুঘলকি’ কান্ড কারখানা।
তামিম কি দুঃখে অবসর নিলেন তা জানান নাই। কোচ হাতুরি সিং এবার তার দ্বিতীয় মেয়াদ, তিনি যদি এতই অপছন্দের তবে দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে নিয়োগ না দিলেইত হতো। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের বনিবনা সুখকর ছিল না। তবে তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা কোলকাতার মুখ্যমন্ত্রীর ময়দানে নামেন নাই ।
আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী পারিবারিকভাবেই খেলার সাথে জড়িত। শেখ জামাল ফুটবল খেলতেন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে। শেখ কামাল ক্রিকেট খেলতেন। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ছিল দেশ শ্রেষ্ঠ অ্যাথলিট। আমি সূর্যসেন হলের অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। আর ইউনিভার্সিটি মাঠে প্রায় বিকালেই অ্যাথলিট প্রাকটিসে সুলতানা কামালের সাথে দেখা হতো।
এমন ক্রীড়া পরিবেশই প্রধানমন্ত্রী ঘরোয়া জীবনে দেখেছেন। খেলার খোঁজ খবর তিনি রাখবেনই, ক্রীড়া উপদেষ্টা মাশরাফি বিন মুর্তুজা, সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক এখন এমপি। তিনি আর তামিম বন্ধু। তামিম জানেন তিনি অবসর নিলে মাশরাফির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ইনভলভ’করা যাবে। এতে তার দাপট, ক্ষমতা, মাতব্বরির পাল্লা আরো ভারী হবে। তার অবসর নিয়ে ক্রিকেট সভাপতি পাপন জানেনই না অথচ তা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌছে গিয়েছে মাশরাফির সৌজন্যে। আলোচনাতে মাশরাফি, তামিম বসে গিয়েছে পরে পাপন সাহেব যিনি ক্রিকেট সভাপতি তাকেও ডাকা হয়। যেখান আলোচনা হওয়া উচিত পাপন সাহেবের সাথে তামিমের। তামিম এখন ৩৫ বছরের এবং এখন তার গোধুলি সময় এ সময় তাকে নিয়ে এত লম্ফ-জম্ফ কেন, কিবা দরকার। পরন্তকালের প্রচার বেশ ভালই জমিয়েছেন, প্রচারেই প্রসার— তামিম সাহেব ভালই বুঝেছেন।
আফগানিস্তান গরমে প্রচুর গরম আবার বরফ ও পরে। এরা কষ্ট সহ্য করে ১৯৪০ সালেও কাবুলিওয়ালারা আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাতে ঘরে ঘরে ফেরি করে পণ্য সামগ্রী বেচত। অথচ এখন তারাই ক্রিকেটে একটি নাম। আফগানিস্তান দল বোলিং এ জবরদস্ত। স্পিনে রশীদ এখন বিশ্ব শ্রেষ্ঠ বলা যায়, মুজিব, লিয়াকতও যথেষ্ট পরিশ্রম করে। এদের ব্যাটাররা যদি ২৭০ রান করে দিতে পারে তবে বিশ্বকাপ ধরতে ওদের স্পিনাররা যেকোন দলের নাভিশ্বাস তুলে দিতেই পারে।
আমরা ক্রিকেট দুনিয়ায় এখন জ্বল জ্বলে তারা তবে মনে রাখতে হবে ‘ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’। পতন কখন আসবে সে নিয়ে সতর্ক হতেই হবে। হিন্দু শাস্ত্রে বলে, ব্রম্মা কাদা দিয়ে তালগোল পাকিয়ে পৃথিবি বানানোর পর হাতের কব্জি পর্যন্ত তারই তৈরি পৃথিবির সমুদ্রে পরিস্কার করলো, সমুদ্রে সেই যে ঢেউ উঠলো তা আজও চলমান। ‘ইটার্ন্যাল ফাইট বিটিউইন রক এন্ড ওয়েভ।’
আমাদের মাঝে যে আত্ম গরিমা তাও ওই সৃষ্টি থেকেই বহমান। যে কন্ট্রোলে রাখতে পারে সে মহান যিনি পারেন না তিনি যেখানেই থাকুন এক সময় পদস্খলন হবেই, হোক তা রাজনীতির ময়দান বা খেলার রাজ্য, ক্রিকেটও যার শামিল, যাকে দুনিয়া জানে ঝকমকে উজ্জ্বল শুভ্রতার প্রতীক হিসাবে। আর এই গৌরব বজায় রাখা ক্যাপ্টেনের প্রথম দায়িত্ব। কি জানি তামিমের হঠাৎ ছটফট আচরণে দায়িত্ববোধকেই প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত
পথরেখা/আসো