পথরেখা অনলাইন : লিওনেল মেসি যেখানে যান সেখানেই মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর সাথে থাকে তার ট্রেড মার্ক ফ্রি কিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লিগেও অব্যহত রয়েছে সেই চমক। গোল করেছে বা পায়ের যাদুতে। ২০০৪ সালেল ১৬ অক্টোবর মেসির পেশাদার লিগে অভিষেক হয়। লা লিগায় বার্সেলোনার হয়ে এস্পানিওলের বিপক্ষে মাঠে নামেন। বার্সায় মেসি খেলেছেন ২০২০-২১ মৌসুম পর্যন্ত। এরপর ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট পিএসজির হয়ে অভিষেক হয় মেসির। মেসির সঙ্গে এদিন মায়ামির হয়ে অভিষেক হয়েছে সার্জিও বুসকেটসেরও। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বুসকেটস জানিয়েছেন, তিনি পুরো ৯০ মিনিট খেলবেন না। মেসির বেলায়ও বিষয়টি একই হতে পারে। কারণ ইউরোপে ২০২২-২৩ মৌসুম শেষের পর থেকে মাঠের বাইরেই আছেন মেসি। এ সময়ে নিজ দেশে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন অল্প সময়ের জন্য। মেসিরা ২৪ জুলাই খেলবে ঘরের মাঠ ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে। লিগস কাপ ম্যাচের সব টিকিট শেষ জানিয়েছে মায়ামি। এর আগে মেক্সিকোর লিগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে আজুলের শুরুটা ভালো হয়নি। তিন ম্যাচ খেলে তিনটি হেরেছে তারা। তবু সতর্ক থাকছেন মার্তিনো। মেক্সিকো জাতীয় দলের হয়ে খেলেন মিডফিল্ডার রদ্রিগেজ ও উইঙ্গার আনতুনা।
মায়ামিও নিজেদের লিগে ভালো অবস্থানে নেই। এমএলএস-এ ইস্টার্ন কনফারেন্সে ২২ ম্যাচ শেষে সবার শেষে আছে মায়ামি। লিগস কাপ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে মায়ামিও। লিগস কাপ ভিন্ন একটি টুর্নামেন্ট। এ টুর্নামেন্টে খেলে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার ক্লাবগুলো। এবার ৪৭টি ক্লাব অংশ নিচ্ছে লিগস কাপে। মেজর লিগ সকারের ২৬ ক্লাব, ১৮টি ক্লাব লিগা এমএক্সের আর কানাডার ৩টি। ১৫ গ্রুপে ৪৫টি দল ভাগ হয়ে আছে। প্রতিটি গ্রুপে তিনটি করে দল। সেরা দুটি দল যাবে রাউন্ড ৩২-এ। গ্রুপ থেকে ৩০ দলের সঙ্গে এমএলএস চ্যাম্পিয়ন লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি ও লিগা এমএক্স চ্যাম্পিয়ন পাচুয়া সরাসরি খেলবে নকআউট পদ্ধতির ৩২ দলের রাউন্ডে। এরপর নকআউট ভিত্তিতে এগোতে থাকবে টুর্নামেন্ট। লিগস কাপে ফাইনাল ছাড়াও আছে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এই আসরের সেরা তিনটি দল খেলবে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে। মেসির দল ইন্টার মায়ামির টার্গেট ওই টুর্নামেন্টে খেলা। এদিকে এত সহজে ফ্রি-কিক কীভাবে নেন মেসি সেই প্রশ্ন রয়েছে।
এখন বেশিরভাগের মনে প্রশ্ন জাগে না, লিওনেল মেসি এত নিখুঁত ফি-কিক নেন কী করে? জাগবেই। সত্যিই এর এক গল্প আছে। মেসি শুরু থেকেই কিন্তু এমন ফ্রি-কিক নিতে পারতেন না। ক্যারিয়ারে মোট ৬৩টি ফ্রি-কিক গোল করেছেন মেসি। ইন্টার মায়ামির হয়ে শনিবারের ফ্রি-কিকের আগে পিএসজির হয়ে ২টি, বার্সেলোনার হয়ে ৫০টি আর আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১০টি অবিশ্বাস্য ফ্রি-কিক নিয়েছেন মেসি। আর এর সব শুরু হয়েছিল তার জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার পর। মেসির যে দক্ষতা ২০১০-এ ডিয়েগো ম্যারাডোনা কোচ হওয়ার পর আরও প্রস্ফুটিত হয়েছে দিনে দিনে। বলা হয়, ২০১০ বিশ্বকাপ উপলক্ষে আর্জেন্টিনার কোচ হয়েই ম্যারাডোনা মেসিকে ফ্রি-কিকের গোপন রহস্য শেখান। দলটির ওই সময়কার ফিজিক্যাল ট্রেনার ফার্নান্দো সিনোরিনি ম্যারাডোনাকে একদিন অনুশীলনের বাইরে কিছু সময় আলাদা বের করতে বলেন। তখন মেসিকে নিয়ে যান ফ্রি-কিকের সময় বিশেষ কী করতে হবে তা জানানোর জন্য। ম্যারাডোনা ওই সময় ২২ বছরের মেসিকে বলেন, ‘একটা কথা সবসময় মনে রাখবে, ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় দ্রুত বল থেকে পা সরাবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলটিকে পা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করবে যেখানে তোমার মাথা ও মন সায় দেয়’।
এখানেই মেসি তার প্রিয় সতীর্থ রিকুয়েলমে থেকে ফ্রি-কিকের কৌশল শিখেছিলেন। ২০০৬ সালে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার আগে থেকেই রিকুয়েলমেকে কাছ থেকে অনুসরণ করেছেন মেসি। দেখে শিখেছেন আর্জেন্টিনার ফ্রি-কিক মাস্টারের দক্ষতা কোথায়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ আলফিও বাসিলে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। ওই সময় রিকুয়েলমের সঙ্গে থেকে মেসিকে ফ্রি-কিক শেখার জন্য আলাদা সময় দিতেন তিনি। এ ব্যাপারে মেসি বলেন, ‘হুয়ান রোমান রিকুয়েলমেকে দেখে আমি একটা জিনিস শিখেছিলাম, শট নেওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করা যাবে না। যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ধীরে শট (পা চালানো) নিতে হবে।’ ম্যাচের ৯৪ মিনিট। বক্সের খানিকটা বাইরে থেকে ফ্রি-কিক পেল ইন্টার মায়ামি। তার আগে ৫৪ মিনিটে মাঠে নেমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হয়ে গেছে লিওনেল মেসির। তাই গোল না পেলেও মেসির অভিষেক দেখার স্বাদ নিয়েই বাড়ি ফিরত মাঠে আসা ভক্ত-সমর্থকরা। সেই তালিকায় ছিলেন সেরেনা ইউলিয়ামস, লেব্রন জেমস, কিম কার্দাশিয়ানের মতো তারকারা। কিন্তু তিনি যে মেসি! ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকে গোল করে দলকে জয় এনে দিলেন। গোলে রাঙালেন অভিষেক। ম্যাচের আগে কোচ জানিয়েছিলেন, মেসি লিগস কাপে ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে মাঠে নামলেও পুরো ম্যাচ খেলবেন না। তবু এদিন মাঠের সব আয়োজন যেন ছিল মেসির জন্যই। অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের’।
পথরেখা/আসো