পথরেখা অনলাইন : নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভাইস অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। বিক্রমপুরের কৃতি সন্তান নাজমুল হাসানের পৈত্রিক বসতবাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর থানার সরদারপাড়া গ্রামে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৫ জুলাই নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবালের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। নৌ সদর দপ্তরে নৌবাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার হস্তান্তর ও গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নৌপ্রধানের কার্যালয়ে কমান্ড হস্তান্তর ও গ্রহণ বইতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নৌ সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসাররা, সকল আঞ্চলিক কমান্ডার, ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এবং ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তারা।
নব নিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম নাজমুল হাসান নৌবাহিনীতে ১ জুলাই ১৯৮৬ সালে কমিশন লাভ করেন। সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন স্টাফ, ইন্সট্রাকশনাল এবং কমান্ড দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি নৌ-সদরে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স), সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশন্স ও নৌ গোয়েন্দা এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অসামরিক-সামরিক সংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ওমর ফারুকসহ চারটি যুদ্ধজাহাজের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কমান্ড্যান্ট এবং নেভাল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স সোয়াডস কমান্ড করেন। গৌরবময় সামরিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে কমান্ডার বিএন ফ্লিট এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় তিনি ভাসানচরে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ামনার নাগরিকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সুচারুরূপে অব্যাহত রাখেন। তা ছাড়া দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে বিশেষ অবদান রাখেন। পাশাপাশি কক্সবাজারের ইনানীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর) ২০২২ এর প্রধান আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এ সময় মালদ্বীপ সরকারের টিকাদান কর্মসূচীতে সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিম প্রেরণ, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথমবারের মত মালদ্বীপে দ্বি-পাক্ষিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চাকরী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় নেতৃত্বের গুণাবলি, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ বজায় রেখেছেন।
রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ, মিরপুর এবং নেভাল ওয়ার কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র হতে কৃতিত্বের সাথে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র হতে সম্মানসূচক নেভাল কমান্ড কোর্স এবং বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি প্রাক্তন যুগোস্লোভিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। শৃঙ্খলাবোধ, সাহসিকতা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকগণের নিকট সুপরিচিত। চাকরী জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অসামান্য সেবা পদকে (ওএসপি) ভূষিত হন।
৩৮ বছরের কর্মজীবনে তিনি জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও সামরিক সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে সর্বদা বদ্ধপরিকর।
পথরেখা/আসো