পথরেখা অনলাইন : এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ঢাকায় বড় শোডাউন করেছে বিএনপি। ২৮ জুলাই পূর্বঘোষিত নয়াপল্টন ও তার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের প্রায় প্রত্যেক জেলা থেকে নেতাকর্মী-সমর্থকরা পল্টনের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
জনতার সমাবেশে নেতাকর্মীরা বলছেন, এক দফা আন্দোলনে টানা কর্মসূচি আসবে। সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া হবে না। যেকোনো মুহূর্তে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। তাই রাজপথে থাকার বিকল্প নেই। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যদি নিজেদের ভালো চান, এখনো সময় আছে। আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিন আর পদত্যাগ করুন। কারণ, সমগ্র বাংলাদেশ আজ জেগে উঠেছে। যদি পদত্যাগ না করেন, এ দেশের মানুষ আপনাদের পতন ঘটিয়েই ছাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘সারাদেশ থেকে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুবসমাজ, নারী, প্রবীণ মানুষ আজকের এ মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের পরিবর্তনের মাইলফলক।’ প্রশাসনের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। সংবিধান অনুযায়ী, আইনের শাসন মেনে কাজ করেন। গ্রেফতার, হয়রানি বন্ধ করুন, কারাগারে যাদের আটক রেখেছেন, তাদের মুক্তি দিন।’ তিনি বলেন, ‘অসাংবিধানিক, ভোট চোর আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। তারা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চায়। এই গণবিরোধী, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন না। এজন্য মানুষ ভোটেও অংশগ্রহণ করেন না। নির্বাচনব্যবস্থার ওপর এখন জনগণের কোনো আস্থা নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে শরিক ৩৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একমত হয়েছি যে এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ, তাদের অধীনে নির্বাচন হলে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রযন্ত্র— সবকিছুকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এ দেশের জনগণ আর এটা মেনে নেবে না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।
জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত মহাসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা দুই-তিন দিন আগেই ঢাকায় চলে আসেন। সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরপরই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেই নয়াপল্টন সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার ভোর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী জড়ো হন পল্টন এলাকায়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নয়াপল্টন এলাকা ছাড়িয়ে ফকিরাপুল ও নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অন্যদিকে শান্তিনগর, মৌচাক, কাকরাইল মসজিদ, সেগুন বাগিচাসহ বিজয় নগর কালভার্ট রোডে ছড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুই দফায় বৃষ্টিতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে সমাবেশে। এক পর্যায়ে ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলে সমাবেশের কার্যক্রম। মঞ্চ থেকে স্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা হয়।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সব শক্তির উৎস কর্মীরা। আপনারা আমাদের নতুন মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা যারা ঢাকায় আছেন তারা ঢাকায়ই থাকবেন। অন্যদিকে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের কয়েক হাজার সদস্য উপস্থিত ছিল বিভিন্ন মোড়ে। রাখা হয় প্রিজনভ্যান, আর্মড ভেহিক্যাল, সাঁজোয়া যান ও জলকামান। বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মালিবাগ, মৌচাক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি সাধারণ মানুষকে।
পথরেখা/আসো