পথরেখা অনলানইন : রাজধানীর পল্লবীর আদর্শনগর এলাকায় সম্প্রতি পুলিশি অভিযানের সময় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য ওই তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। তবে স্বজনরা বলছেন, ওই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। হত্যা বা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা না নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা ও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন। গত ২৪ জুলাই রাতে পল্লবীর কালশী আদর্শ নগর এলাকার ১১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসা থেকে পুলিশের ভাষায় ‘মাদক কারবারি’ লাভলী আক্তারকে ধরতে গেলে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। ঘটনাস্থলে যাওয়া দুই পুলিশ সদস্যের একজন এসআই জহির ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করেন। সেখানে দেখা যায়, লাভলীর বাসা থেকে বেশকিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
ওই রাতে পুলিশের অভিযান চলাকালেই লাভলীদের বাড়ির তিন তলায় একটি ফাঁকা ঘরে মারা যান লাভলীর মেয়ে বৈশাখী আক্তার। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে ‘পল্লবীতে কিশোরীর আত্মহত্যা : পরিবারের অভিযোগ পুলিশের দিকে’ এমন সংবাদ প্রকাশের পর বৈশাখীর মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল কি না সেটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশের মিরপুর বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশের কাছ থেকে নতুন কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যা বলেছেন এর বাইরে কোনো তথ্য বা বক্তব্য দিচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। বলতে গেলে একরকম মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে- লাভলী আক্তার, তার মেয়ে বৈশাখী ও বৈশাখীর বাবা ইশতাক মাদক ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু বৈশাখী হত্যার শিকার হয়েছেন নাকি আত্মহত্যা করেছেন সেটির সুরাহা হয়নি। তার আগেই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পরদিন সাদা কাগজে বৈশাখীর বাবা ইশতাকের স্বাক্ষর নিয়ে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
নিহত বৈশাখীর স্বজনরা বলছেন, বৈশাখী আত্মহত্যা করেছেন নাকি হত্যার পর তাকে ঝুলানো হয়েছিল তা তারা দেখেননি। তাদের প্রশ্ন, পুলিশ যেখানে উপস্থিত সেখানে বৈশাখী কীভাবে আত্মহত্যা করল? এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত চান তারা। স্বজনদের দাবি, তারা থানায় অপমৃত্যু নয়, আত্মহত্যার প্ররোচনা কিংবা হত্যা মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পল্লবী থানা পুলিশ ও প্রভাবশালীদের চাপে নেওয়া হয়েছে অপমৃত্যুর মামলা। আবার ভাঙচুরের মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহত বৈশাখীর আত্মীয়-স্বজনদের। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে পুলিশ বদ্ধপরিকর। পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে স্পষ্ট হবে ঘটনা। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তদন্ত কমিটির প্রধান মিরপুর পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজের ব্যবহৃত সরকারি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই কমিটির সদস্য পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শাহিদুল ইসলাম থানায় এসে কথা বলা কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।
পথরেখা/অআ