পথরেখা অনলাইন : শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার আর নেই। সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেণ্য লেখক এবং গবেষক শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৪ আগস্ট রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক পান্না কায়সার শহিদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের সহধর্মিণী এবং অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিনেত্রী শমী কায়সার। অধ্যাপক পান্না কায়সার ১৯৫০ সালের ২৫ মে জন্মগ্রহণ করেন।
শহিদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ আগস্ট সকালে প্রধানমন্ত্রী এ শোক জানান। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এর আগে ৪ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিনি। জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানে মেয়ের বাসায় রাতে ছিলেন তিনি। সকালে শরীর খারাপ লাগলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সকালে মারা যান পান্না কায়সার।
পান্না কায়সার শহিদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লা কায়সারের সহধর্মিণী এবং অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে শহীদ জায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারের অবদান অপরিসীম। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা’ খেলাঘরের মাধ্যমে এই শ্লোগান সারাদেশের শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ২৫ মে ১৯৫০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আরেক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী।
পান্না কায়সার বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। ১৯৬৯ সালে শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি স্বামীকে হারান। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কিছু সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তাঁর ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেনের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফিরে আসেননি। স্বামীকে হারিয়ে পাগল পারা হয়ে যান পান্না কায়সার। অসংখ্য লাশের মাঝে খুঁজে বেড়িয়েছেন প্রিয় স্বামীকে। কিন্তু তার কোনো হদিস পাননি। এরপর ছোট্ট দু’সন্তানকে নিয়ে পাড়ি দেন দীর্ঘপথ। যে পথটি ছিল তার অজানা। শপথ নেন বধ্যভূমির তীরে দাঁড়িয়ে। আজীবন চলবেন স্বামীর দেখানো পথে। তাই নানা ঝড়ে আক্রান্ত হলেও কখনো দমে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন নতুন সংগ্রাম। যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে।
১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন পান্না কায়সার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখায় ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
পথরেখা/আসো