পথরেখা অনলাইন : দেশের ফুটবলে এখন চলছে বসুন্ধরা কিংসের জয়গান। টানা চতুর্থবাররের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে। দেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে দারুণ এই অর্জন করেছে। অন্যদিকে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে আবাহনী লিমিটেড খুব একটা সুবিধা করতে পারছেনা। গেল দুই বছরে একটি ফেডারেশন কাপ ও একটি স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতেছে ধানমন্ডির জায়ান্টরা। এই অবস্থার মধ্যেই বুধবার মাঠের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে। এএফসি কাপের প্রাক্-বাছাইপপর্বে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের ঈগলস এফসির মুখোমুখি হবে। ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ৩.১৫ মিনিটে। আর সাম্প্রতিক সময়ে চলা বৈরি আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে চাইছে। কাদা-বৃষ্টিকে আশীর্বাদ মনে করছে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) নতুন নিয়মানুযায়ী ক্লাব পর্যায়ের টুর্নামেন্টগুলোয় যেকোনো ক্লাব প্রতি ম্যাচে খেলাতে পারবে ছয় বিদেশি। ক্লাব ইগলসের বিপক্ষে এএফসি কাপের প্রাক্-বাছাইয়ের ম্যাচের আগে তাই আবাহনী লিমিটেডের মাঠ বিদেশি ফুটবলারের আধিক্য। এএফসি কাপের জন্য যেখানে ছয় বিদেশি হলেই চলে আবাহনী সেখানে বিদেশি নিয়েছে ১০ জন।
সিলেটে ক্লাব ইগলসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচ বিদেশির ব্যবস্থা করেছে আকাশি-নীলরা। বাকি পাঁচ বিদেশি ধারে এসেছেন বিপিএলের অন্য দলগুলো থেকে। আবাহনী বাংলাদেশের ক্লাব, খেলাটাও হবে দেশের মাঠে। নিজের দেশের মাঠে এএফসি কাপে সেই বাংলাদেশিরাই দর্শক। ১১ ফুটবলারের খেলায় আবাহনী খেলাতে পারবে মাত্র ৫ স্থানীয় ফুটবলার। অনুশীলনেও বাংলাদেশিরা কিছুটা ‘কোণঠাসা’। এ বাস্তবতা মেনেই সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে নামতে হবে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম-মোহাম্মদ হৃদয়দের। দলের তারকা ডিফেন্ডার রহমত মিয়া বলেন, ‘১০ বিদেশির মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলছে। আবাহনীতে আমরা অনেক স্থানীয় ফুটবলার আছি। আমাদের মধ্যে সেরা পাঁচজন জায়গা পাবে। এখানেও প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা হলে সেটা দলের জন্যই ভালো।’
মালদ্বীপের ক্লাব ইগলসের সঙ্গে খেলতে এরই মধ্যে সিলেটে পৌছে গেছে আবাহনী। সেখানে আগেই অনুশীলন করেছে ইগলস। ১৬ আগস্ট ম্যাচ জিততে পারলে ২২ আগস্ট আবাহনীর প্রতিপক্ষ হবে ভারতের মোহনবাগান। বাংলাদেশে গত কদিন টানা বৃষ্টিতে সিলেট স্টেডিয়ামের মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে আছে। বিষয়টি ইতিবাচক বলেই মনে করেন আবাহনী কোচ মারিও লেমোস, ‘বাংলাদেশি খেলোয়াড়েরা কাদা-বৃষ্টির মধ্যে খেলে অভ্যস্ত। এটা আমাদের জন্য সুবিধার। আমাদের নতুন কয়েকজন বিদেশি আছে, তাদের দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।’ এদিকে আবাহনীর আগেই সিলেটে মালদ্বীপের ক্লাবের খেলোয়াড়রা পৌছে যায়। আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে সফরকারী দলগুলোকে তিন দিন আগে পৌঁছাতে হয়। মালদ্বীপের দলটি তার চেয়ে কিছুটা আগেই চলে এসেছে। সিলেটে ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ায় অনুশীলন মাঠের সংকট রয়েছে। এজন্য ঢাকা আবাহনী সিলেট যায় ১৪ আগস্ট। এএফসি কাপের প্রাক—বাছাইয়ের ম্যাচটি ছিল জাতীয় শোক দিবস ও আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের প্রয়াণ দিবস ১৫ আগস্টে। একই দিন ভারতের স্বাধীনতা দিবস হওয়ায় মোহনবাগানও খেলা পেছানোর দাবি জানায়। দুই ক্লাবের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচটি একদিন করে পিছিয়ে দেয় এএফসি।
ঢাকা আবাহনী গতবার এএফসি কাপের প্রাক্-বাছাইয়ের খেলায় মোহনবাগানের বিপক্ষে হেরেছিল। এবার মালদ্বীপের ক্লাব ঈগলসের বিপক্ষে জিতলে আবার ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে খেলতে হবে। তবে সুন্দর ফুটবল খেলতে চায় না আবাহনী। এই ঘোর বর্ষায় সিলেটে যে কাদা প্যাচপেচে মাঠে খেলতে হবে, সেটি খুব ভালো করেই জানেন আবাহনীর কোচ মারিও লেমোস। তিনি মনে করেন, এই ম্যাচে সুন্দর ফুটবল যে দল খেলবে, তাদেরই বিপদ। বৃষ্টিভেজা মাঠে মারকাটারি ফুটবলই খেলতে চান নীল-হলুদ শিবিরের পর্তুগিজ কোচ। কেন ‘সুন্দর ফুটবলে’ ভয় লেমোসের। সেটির ব্যাখ্যা দিলেন ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে দাঁড়িয়ে, ‘মালদ্বীপের ঈগলস ক্লাবের বিপক্ষে আমরা ম্যাচটা জিততে চাই। তবে বুঝতে পারছি, খেলাটা বৃষ্টিভেজা মাঠেই খেলতে হবে। এই মাঠে সুন্দর ফুটবল যে খেলতে চাইবে, হারবে তারাই। বৃষ্টিভেজা মাঠে ভালো ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। এমন মাঠে বল কাদাপানিতে আটকে যাবে। খেলোয়াড়েরা শরীরের ভারসাম্য হারাবে। তাই এখানে কার্যকর ফুটবল খেলতে হবে। সুন্দর ফুটবল বলতে যা বোঝায়, তা অবশ্যই নয়।’
পথরেখা/আসো