মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : জাতীয় দলের কোচের সাথে কিছু খেলোয়াড়ের সম্পর্ক ভাল থাকে আবার কারও কারও ক্ষেত্রে হয় তার উল্টো। বিশেষ করে কাউকে অতিমাত্রায় পছন্দ করার কারণেই এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। রাসেল ডোমিঙ্গো থেকে এখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, সর্বশেষ এই দুই কোচের মেয়াদেই ক্রিকেটপ্রেমিরা দেখেছে পছন্দ অপছন্দের খেলা। যা এখনো অব্যহত রয়েছে। বিশেষ করে এই লংকার কোচ সিনিয়ল খেলোয়াড়দের সেভাবে পছন্দ না করে তাদেরকে দলের বাইরে রাখতে চান। তেমনি একজন তামিম ইকবাল। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক থাকলেও তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। এই যেমন, হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার পেছনেও দায়ী করা হয় হাথুরুকে। অনেক সংকট পেরিয়ে আবারও জাতীয় দলে ফিরেছেন তামিম। তবে কোচ হাথুরুসিংহের সাথে তার সম্পর্কটা আগামীদিনে কেমন হবে সেই চিন্তাই করছেন সবাই। তবে তামিমের সঙ্গে কোচের দূরত্ব থাকবে না, এমনটাই আশা বিসিবির। দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে তামিম ইকবাল ফিরেছেন অনুশীলনে। পিঠের চোটের চিকিৎসা নিতে লন্ডনে গিয়ে ইনজেকশন নেন ওয়ানডে দলের সাবেক অধিনায়ক। এরপর ফিরে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম শেষে প্রথমবারের মতো করেছেন অনুশীলনে। যদিও সেটি ছিল কেবল ১৫ মিনিটের। এই সময়ে থ্রোয়ারের বল খেলেছেন তামিম। নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে অভিজ্ঞ ওপেনারের ফরার কথা রয়েছে জাতীয় দলে।
আর ম্যাচ খেলে ফিট কি না সেটি দেখবেন, আফগানিস্তান সিরিজের আগে তামিমের এমন মন্তব্যে চটেছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এখন কি ওই দূরত্বে কোনো সমস্যার তৈরি হবে? বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘তামিম ইকবাল হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা জাতীয় দলের খেলোয়াড়। এটা আমাদের সবারই একটা চিন্তা, আমি একা না। ক্রিকেট অপারেন্স না এটা পুরো বোর্ডের চিন্তা। আমরা সবাই চাই যে, তামিম আবার আগের মতো ফিরুক। তবে হ্যাঁ, সে বড় একটা ইনজুরি কাটিয়ে উঠছে। সবারই কিন্তু একই কামনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাই কিন্তু তাকে সমর্থন দিচ্ছে, শুধু ক্রিকেট অপারেশন্সই না। আমাদের মাননীয় প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন, উনি ফোন করছেন। ফিজিওদের সঙ্গে কথা বলছেন, হেড কোচের সঙ্গে কথা বলছেন। তার সব সময় খবর নিচ্ছেন। এখানে কোনো দূরত্ব নেই। এখানে কোনো দূরত্ব হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি থাকে সব জায়গায়, দলের মধ্যেও থাকে’।
তবে এটা বড় কোনো ইস্যু না। তামিম দলে ফিরলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেও বিশ্বাস জালালের। তিনি বলেন, ‘আশা করি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দিক থেকে সবধরনের চেষ্টা থাকবে। আই থিংক দেয়ার উইল বি নো গ্যাপ।’ তামিমের চোট নিয়ে এর আগে জলঘোলা হয়েছে অনেক। বিসিবির মেডিকেল বিভাগের দিকে আঙুল তুলেছিলেন তামিম নিজে। লন্ডনে অস্ত্রোপচারের বদলে তিনি বেছে নেন ইনজেকশনকে। ব্যথা কমিয়ে বিশ্বকাপেও খেলতে চান তিনি। অনুশীলনে ফেরা তামিমকে নিয়ে ভালো কিছুর আশা বিসিবিরও। জালাল বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম তামিম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরত আসুক। আমরা আগেই ক্যালকুলেট করেছিলাম যে ১৮-১৯ তারিখে ব্যাক করবে, এরপর ব্যাটিং শুরু করবে। সে তাড়াতাড়ি রিকভার করে জাতীয় দলে ফিরবে। আমরা আশা করি, সে ভালো করছে। ব্যাটিংয়ে নেমেছে, ইন্টেন্সিটি বাড়ানোর পরে বোঝা যাবে।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে কিছুটা চোট নিয়েই খেলেছিলেন তামিম ইকবাল।
নিজের ইনজুরি নিয়ে খেলার বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এমনকি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলেন প্রধান কোচ-এটা ওপেন সিক্রেট। টিম ম্যানেজমেন্টের এমন আচরণের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেন তামিম। এরপর অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। ক্রিকেটে ফিরলেও হাথুরুসিংহের সঙ্গে তামিমের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সমস্যার সমাধানে এবার এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে হুট করে অবসর, এক দিনের ব্যবধানে অবসর ভেঙে ফেরা, এরপর ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো, গত দেড় মাসে এসব নিয়ে তামিম ইকবালকে দেখা গেছে তিনবার সংবাদ সম্মেলনে। ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা থেকে এই কদিন বেশ দূরেই ছিলেন ৩৪ বছর বয়সী তারকা। অবশেষে দেড় মাস পর ব্যাট হাতে অনুশীলন করলেন তামিম। বিসিবির একাডেমি মাঠে অনুশীলনে দেখা যায় তাঁকে। সেখানে ছিলেন এশিয়া কাপের ঘোষিত দলের বাইরে থাকা আরও ছয়-সাতজন ক্রিকেটার। তাঁদের নিয়ে বিশেষ অনুশীলন ক্যাম্প ব্যবস্থা করেছে বিসিবি।
এই ক্যাম্পে আছেন তাইজুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সৌম্য সরকার, সাঈফ হাসান, জাকির আলীরাও। সাইফ-জাকিররা রয়েছেন ইমার্জিং দলেও। তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন এশিয়ান গেমসের জন্য। এই ক্যাম্পে থাকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন তামিম। শুরুতেই স্বভাবসুলভ মারমুখী কোনো ব্যাটিং নয়, নেটে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন তামিম। এই অনুশীলনে বাংলাদেশি ওপেনারকে সাহায্য করছেন বিসিবির কোচ মাহবুবুল আনাম, সোহেল ইসলাম, বাংলাদেশ দলের ট্রেনার নিক লি। তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন তামিমের ব্যাটিং। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে তামিমকে সর্বশেষ দেখা গেছে গত ৫ জুলাই, চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচে। সেই ম্যাচের পরদিন আকস্মিকভাবে চট্টগ্রামের এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে পরদিন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে এই বাঁহাতি ব্যাটারকে কয়েক সপ্তাহ ছুটিও দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তামিম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর আরও কয়েক দিনের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার দরকার ছিল। এখন পুরোদমে অনুশীলন করে নিজেকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করছেন তামিম ইকবাল।
পথরেখা/আসো