পথরেখা অনলাইন : নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বন্ধ হয়ে গেল বরগুনা-ঢাকা রুটের লঞ্চ চলাচল। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকেই এ নৌ-রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধের গুঞ্জন ওঠে। পরে পদ্মা সেতু চালু হলেও এই রুটে চলছিল লঞ্চ। তবে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন বিকেল ৩টা ও ৪টায় রাজধানীর উদ্দেশ্য দুটি লঞ্চ ছেড়ে যেত বরগুনা নদী বন্দর থেকে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত এক বছরে কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে তাদের। এছাড়াও আশানুরূপ যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।
বরগুনা নদী বন্দরে আসা আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসে না গিয়ে লঞ্চে যাতায়াত করতো। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধের খবরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। বাস ছাড়া তো আর উপায় নেই। আরেক যাত্রী লিমন বলেন, লঞ্চ যাত্রা তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক। নিরাপদ যাতায়াতের জন্য মানুষ এখনো লঞ্চে যাতায়াত করে। কিন্তু বরগুনায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অসুস্থ রোগীদের কম খরচে লঞ্চে ঢাকা নেওয়া যেত। এখন আর সে উপায় নেই। এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির বরগুনার ব্যবস্থাপক এনায়েত হোসেন বলেন, আগে এই পথে চলাচলকারী একেকটি লঞ্চে বরগুনা নদীবন্দর ঘাট থেকেই প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী হচ্ছে। তাছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধিতে লোকসান হচ্ছে কোম্পানির। তাই মালিকপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বরগুনা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি জহিরুল হক পনু বলেন, এই পথের লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন এই নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরগুনার ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার প্রভাব পড়বে বাজারে। এতে করে ক্রেতারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। বরগুনা নদী বন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ করার পর আমি এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির মালিককে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরপর আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মাসুম খান বলেন, আজ থেকে আমরা ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। আগে ৬ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করতাম। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে এখন ৩ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করি। তাতেও প্রতিটি ট্রিপে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার লোকসান হয়। গত মাসে ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তার ওপর কয়েক কোটি টাকার তেলের দাম বাকি রয়েছে। এতো লোকসান দিয়ে আর লঞ্চ চালাতে পারছি না।
পথরেখা/অআ