মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য দারুণ একটা দিন কেটেছে গত শনিবার। নতুন যুগে প্রবেশ করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটি। প্রথমবার নিজেদের এলিট একাডেমির খেলোয়াড়দের নিয়ে নিলাম আয়োজন করে বাফুফে। ১০ ফুটবলারকে বিক্রি করে ফুটবল ফেডারেশন আয় করেছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) এলিট একাডেমির ১০ ফুটবলারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক নিলাম। নিলামে সর্বোচ্চ ৬ জন ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। এছাড়া একজন করে খেলোয়াড় কিনেছে বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এবং ফর্টিস এফসি। তবে নিলামে কোনো খেলোয়াড় কিনতে পারেনি পুলিশ এফসি ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এবার নিলামে ১০ ফুটবলারকে ক্লাবগুলোর কাছে মোট ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে ফেডারেশন। তবে নিলামের পুরো টাকা নিজের কাছে পাবেন না ফুটবলাররা। বিক্রিত মূল্যের প্রাপ্ত অর্থ ফেডারেশন পুরোপুরি পাবেনা।
খেলোয়াড় ও বাফুফের মধ্যে ভাগাভাগি করা হবে। বাফুফের নিয়ম অনুযায়ী, এলিট একাডেমির ফুটবলারদের নিলামে প্রাপ্ত মূল্যের ৬০ ভাগ পাবে বাফুফে, আর ৪০ ভাগ পাবে খেলোয়াড়। সে হিসাবে এলিট একাডেমির ১০ ফুটবলারকে নিলামে তুলে ৪১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাবে ফেডারেশন। আর বাকি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাবেন ফুটবলাররা। এলিট ফুটবল একাডেমি করে লাভের মুখ দেখেছে বাফুফে। সর্বশেষ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশীপ লিগ (বিসিএল) খেলেই মুলত নিজেদের প্রমাণ করে কিশোর ফুটবলাররা। তাতেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলের ক্লাবগুলোর নজরে পড়ে যায় তারা। শুরুতে এই লিগের তিন ক্লাব একাডেমিতে থাকা ফুটবলারদের দলে নেওয়ার প্রস্তাব করে। পরে বাফুফে থেকে সিদ্বান্ত নেওয়া হয়, খেলোয়াড়দের নিলামে তোলার বিষয়টি। এখন নিলাম থেকেই তিনটিসহ বাকি ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের দলে নিতে পেরেছে। বিশ্বে বিভিণ্ন দেশের ক্লাবগুলো একাডেমি গড়ে ফুটবলার তৈরি করে থাকে।
যেমন বার্সেলোনার একাডেমিতে থেকে বেড়ে উঠেছেন আজকের মহাতারকা লিওনেল মেসি। অন্যদিকে এডরিনহারে গড়ে উঠেন সিআর সেভেন খ্যাত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অথচ বাংলাদেশের শীর্ষ লিগে খেলা ক্লাবগুলোর কোনো একাডেমিই নেই! প্রতি মৌসুমে খেলোয়াড় কেনার পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও একাডেমি তৈরিতে কোন মনোযোগই নেই ক্লাবগুলোর। কয়েক বছর আগে বাফুফে খেলোয়াড় বাছাই করে একটি এলিট একাডেমি পরিচালনা করে আসছে। এবার সেখান থেকে খেলোয়াড় চেয়ে তিন ক্লাব আবেদন করে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাফুফের ডেভলপমেন্ট কমিটি একাডেমির ফুটবলারদের উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটনা ঘটে। গত বছর এলিট একাডেমির একজন ফুটবলারকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল মোহামেডান। এবার সাদা-কালোদের পাশাপাশি চিঠি দিয়েছে শেখ রাসেলও। এই দুই ক্লাবের মতো করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন চেয়েছিল এলিটের ফুটবলারদের দিয়েই এবার দল গড়তে। যার মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন ফুটবলারের জন্য বাফুফেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে সম্মত হলেই কেবল সমালোচনার মধ্যে পড়তে পারত ফুটবল ফেডারেশন।
কারণ ব্রাদার্সের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজন বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে থাকাই এর মূল কারণ। বাফুফে একাডেমির খেলোয়াড় পেতে তিন ক্লাব চিঠি দিলেও আসন্ন বিডিং অন্য সকল ক্লাবের জন্যও উন্মুক্ত থাকছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, তিন ক্লাব আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে খেলোয়াড় নেবার আগ্রহ দেখালেও বাকি ক্লাবগুলো আগ্রহী থাকলে বিডিংয়ের দিন অংশগ্রহণ করতে পারে। নিলামটি খুব শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। নিলাম প্রক্রিয়ায় খেলোয়াড়দের প্রাথমিক মূল্য নির্ধারন করার পাশাপাশি বেস প্রাইস ও আরো কিছু বিষয় নিয়ে কয়েকদিন কাজ করার পরই আনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসবে। ২০২১ সালে চালু হওয়ার পর বাফুফের এলিট একাডেমিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ জন ফুটবলার রয়েছেন। নিলামে ২০ জনের মতো ফুটবলার উঠলেও এলিট একাডেমির বিসিএলে খেলতে সমস্যা হবেনা বলে ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার মতো অনেক ফুটবলার একাডেমিতে রয়েছে। নতুন খেলোয়াড় সন্ধানের জন্য ডেভলপমেন্ট কমিটি একটি রুটিন করেছে। খুব শিগগিরই এলিট একাডেমিতে নতুন ব্যাচ প্রবেশ করানো হবে বলে জানা গেছে। কারণ বর্তমানে একাডেমিতে থাকা অর্ধেক খেলোয়াড়ও বিক্রি করবেনা। ২০ জনকে নিলামে তুললে আরও ৪৩ জন থাকবে, তাতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিসিএলে একাডেমির দলটা খেলার সিদ্বান্তটা বেশ সময়োপযোগী। মূলত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার কারণেই এলিট একাডেমির খেলোয়াড়দের নৈপুন্য দেখা সম্ভব হয়েছে। যা ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী করে তুলেছে।
পথরেখা/আসো