পথরেখা অনলাইন : বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত অ্যাথলেটদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সেখানে নতুন নাম হতে পারে জিনাত ফেরদৌসের। লাল সবুজ দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এদেশে এসেছিলেন। এরই মধ্যে ট্রায়াল দিয়ে ফিরে গেছেন জন্মভিটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আগামী এশিয়ান গেমসে খেলার জন্য এই নারী বক্সার বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার লক্ষ্যেই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। বক্সিং ফেডারেশনের কর্মকর্তারা তার পারফরম্যান্সে খুশি হয়েছেন। তবে সমস্যা যা সেটা হলো জিনাতের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। নতুন পাসপোর্টের আবেদন করে ঢাকা ত্যাগ করেছেন জিনাত। এখন যা করেছেন তাতে করে বড় স্বপ্ন নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশের বক্সিং।
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর চীনের হাংজুতে এবারের এশিয়ান গেমসে অনুষ্ঠিত হবে। এশিয়া সেরা আসরে ২৩ বছর বয়সী জিনাত ফেরদৌসকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বক্সিং ফেডারেশন। এরই মধ্যে তার গেমসের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের আবেদনের সকল প্রক্রিয়াও শেষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন জানিয়েছেন, ’জিনাতের বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া গেলে এশিয়ান গেমসের দলে তার থাকা নিয়ে কোন সংশয় নেই। তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে আমরা পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছি’।
জিনাত ফেরদৌসের বাবা বেলায়েত হোসেনের বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জে আর মা শাহানাজ ফেরদৌসের বাড়ি পাবনা জেলায়। আশির দশকে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় তারা স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। রাজধানী নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহন করেন জিনাত ফেরদৌস। প্রিয় শহরেই জিনাতের বক্সিং এ হাতেখরি। প্রায় দুই বছর আগে খেলাটি শুরুর পর এরই মধ্যে তার বক্সিংয়ের জোর বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের যেসব নারী বক্সিং এ হাত পাকিয়েছেন, তাদের তুলনায় মার্কিন মুল্লুক থেকে আসা বক্সারের শক্তি তুলনামুলক বেশি হওয়ার কথা। জিনাত কেমন খেলেন, তা দেখার জন্য জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তানজিলাকে রিংয়ে তুলে দেওয়ার পর আসল দৃশ্য দেখা গেছে। মাত্র দেড় মিনিটেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নকে রিংয়ে কুপোকাত করে দিয়েছেন জিনাত। এর আগে নিজম্ব কোচের অধীনে তিন দিন ট্রায়াল দিয়েছিলেন। এই সময়ে দিনে মাত্র দই থেকে তিন ঘণ্টা করে অনুশীলন করেছেন। বাংলাদেশে আসার সময় জিনাত তার কোচ কলিনকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। অনুশীলন দেখে বক্সিং ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। ট্রায়ালে উপস্থিত অনেকে তো বলেই ফেলেছেন, বাংলাদেশি বক্সারদের চেয়ে অনেক এগিয়ে জিনাত। কোন কোন ক্ষেত্রে তো ৬০/৭০ গুন বেশি বলেও মন্তব্য করেছেন। এখন যদি এশিয়ান গেমসে খেলতে না পারে, তাহলে তাকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসহ অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোতে খেলানো হবে। তাতেই জিনাতের যোগ্যতার প্রমাণ মিলবে।
বাংলাদেশের বক্সিংয়ে সোনালী দিনের তারকা বলা হয়ে থাকে মোশাররফ হোসেনকে। ১৯৮৬ সালে সবশেষ তার হাত ধরে এশিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক এসেছিলো। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে পদক খরা চলছে। এশিয়ান গেমস থেকে গেল ৩৭ বছরে আর কোনো পদক আনতে পারেননি লাল-সবুজের বক্সাররা। এবার সেই খরা ঘুচাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে আসার পর জিনাত ফেরদৌস বলেন, ‘আমি অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আসার আগে কি কি করতে পারব এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তবেই এসেছি। আমার বাবা-মায়ের দেশকে পদক এনে দেব বলেই এখানে এসেছি।’ এর আগে ১৯৯৩ সালের সাফ গেমসে অনেক আশা করেই ইংল্যান্ড থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল ব্রায়ান আহমেদকে। মূল আসরে এসে চরম হতাশ করেন এই প্রবাসী বক্সার। এরপর ২০০৪ ইসলামাবাদ এসএ গেমসের জন্য দুই ইংল্যান্ড প্রবাসীকে উড়িয়ে আনা হলেও তাদের কাউকে চূড়ান্ত দলে জায়গা দেওয়া যায়নি। মূলত পারফরম্যান্স আহামরি কিছু না হওয়ায় বাদ দেয়া হয়।
সে সময় যদিও বলা হয়েছিল দুই বক্সারের পাসপোর্ট করতে সমস্যা হওয়ায় কারণে দলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু পরে জানা গেছে পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত পর্যায়ে না হওয়ায় দলে নেওয়া হয়নি। কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক বক্সার আল সাফওয়ান উদ্দিনকে আনা হলে তিনি জাতীয় বক্সিংয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন। এশিয়ান গেমসে পদক ও সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণখরা ঘুচাতে এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে জিনাত ফেরদৌসকে। এবার ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। যদিও এবারই প্রথম খেলার জন্য আসা। মূলত বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ও বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুনের প্রচেষ্টায় জিনাতের বাংলাদেশে আসা। জিনাত খেলেন ৫০ কেজি লাইটওয়েট ওজন শ্রেণিতে। নিউইয়র্ক রিজিওনের চ্যাম্পিয়ন দাবি করেছেন তিনি। এখন তাকে নিয়ে পদক জয়েল স্বপ্ন দেখছেন বক্সিং ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। ২৯ বছর বয়সী এই বক্সারও আশা দেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রবাসী অ্যাথলেট আসা এবারই প্রথম নয়। এর আগে জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাইক সিজার, ফুটবলে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া, ফিনল্যান্ডের তারিক কাজী, লন্ডনপ্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ, অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানও খেলছেন লাল সবুজ দেশের হয়ে। সেই ধারবাহিকতায় এবার নাম লেখাতে চান জিনাত, বাংলাদেশের পদক খরা ঘোচানোর পাশাপাশি অলিম্পিকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্য। এখন যদি সুযোগ পান তাহলে ব্রায়ান কিংবা সাফওয়ান উদ্দিন যা পারেননি সেটাই করে দেখানোর বড় মিশনে নেমেছেন জিনাত। এখন স্বপ্নপূরণে সবার দোয়া চাইছেন সবাই।
পথরেখা/আসো