পথরেখা অনলাইন : নীলফামারীর ডোমারের হরিণচড়া ইউনিয়নের রয়েছে বিশাল এক বিল। ইউনিয়নের চার গ্রামের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত বিলটির নাম কঞ্চনা বিল। তবে অবাক করা বিষয় হলো এই বিলের শুকনো মাটি আগুনে জ্বলছে আর পানিতেও ভাসছে। বিলের আশপাশের অনেক পরিবার জ্বালানি হিসেবে এবং মশা তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে এই মাটি। কেউ আবার এই মাটি জমির সার হিসেবেও ব্যবহার করছেন। এই মাটি নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। স্থানীয়রা এই মাটির নাম দিয়েছেন অবাক করা মাটি। তাদের দাবি- অবহেলা আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এই মাটি ও এখানকার জীববৈচিত্র্য। জেলা প্রশাসক বলেছেন, এই মাটি ভিন্ন প্রকৃতির। তাই আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলে ওপরে উঠে আসে পুরো এলাকা। শুষ্ক মৌসুমে নিচে দেবে যায়। মাছ চাষের জায়গা বের করতে প্রতি বছর এলাকাবাসী এই মাটি সরিয়ে নেয়। কিন্ত বষার্য় নিচ থেকে ফের ভেসে ওঠে মাটি। এই বিলের ভেতরে থাকা চোরা বালিকে স্থানীয়রা ডাকে ‘ভুল’। ভুলে পড়লেই বেঁচে ফেরা মুশকিল। তবে সবই এখন উজাড় হওয়ার পথে। আগামী প্রজন্ম এই বিল চোখে দেখবে কিনা এই নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা। শেওটগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ খাইরুল আলম বলেন, আমরা বিলে ভেসে ওটা শুকনো মাটিগুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গোয়ালঘরে জ্বালিয়ে রাখলে মশা থাকে না। ভাতও রান্না করা যায় মাঝে মাঝে। এখানে প্রচুর পরিমাণে খিলকদমের গাছ ছিল, বন্যপ্রাণী বাস করতো, পাখি আসতো। প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। এখন আর সেই সব নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, বৃষ্টি হলেই বিলের মাটি ভেসে ওঠে। পরে আবার সেই মাটি দেবে যায় ও শুকনায় আগুনে জ্বলে। আর আগে তো বিলের ভুলে পড়ে গরু-ছাগল মারা গেছে। রওশন বেগম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, চৈত্র মাসে বিলের মাটি বস্তায় করে বাড়িতে এনে রাখি। সেগুলা দিয়ে চুলা জ্বালাই, চুলা ভালো জ্বলে ওই মাটি দিয়ে। তাছাড়া গরুর ঘরে ও নিজের ঘরে মশা তাড়ানোর জন্য জ্বালাই। দোলাপাড়ার বাসিন্দা জহির উদ্দীন বলেন, কঞ্চনা বিল আগে অনেক বড় ছিল। অনেক মোটা মোটা গাছ ছিল। এখানকার মাটি বাড়ি নিয়ে জ্বালাই। এতে মশা আর থাকে না। আর যখন বিলে পানি বাড়ে তখন মাটি ওপরে ভাসে। এটা তো আমাদের আমলেও দেখছি। এদিকে সরকারি ভূমি রেকর্ডেও দেখা যাচ্ছে এই বিলের উজাড় হওয়ার প্রমাণ। শত শত একর জমি সংকোচনের পরও ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত ৮৪ বিঘা জলাভূমি ছিল। ১৯৯০ সালে উঁচু জমি স্থানীয়দের লিজ দেওয়ার পর এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬৯ বিঘায়। এছাড়াও লিজ নেওয়া অংশে মাটি ফেলে কৃষি জমিতে রূপান্তর করে এই মাটির বৈশিষ্ট্যকে নষ্ট করা হচ্ছে।
পথরেখা/অআ