মাঠ বাদে খেলা অসম্ভব। অথচ বাংলাদেশে মাঠ সব সময়ই থাকছে উপেক্ষিত। আমাদের কিছু মাঠত আছেই তবে তা আধুনিক মাঠ-মর্যাদার ধারে কাছেও নেই। কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী স্পেন সফরে সাথে সৌরভ গাঙ্গুলি ছিলেন, ছিলেন তিন প্রধান ক্লাব মোহামেডান, মোহনবাগান আর ইস্ট বেংগল ক্লাবের প্রতিনিধিরা। স্পেনের ‘ লা-লিগা’ কর্তৃপক্ষের সাথে এনারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ‘লা-লিগা’ কলকাতাতেই একাডেমি গড়বে। রাজ্য সরকার যাবতীয় সহযোগিতা করবেন। এমনকি খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য মেসিও আসবেন কোলকাতাতে। আমাদের ক্রীড়া বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘেরাও দেয়া অল্প কিছু ব্যক্তির দ্বারাই প্রিয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত হন। সরকার প্রধানের কাছের বলে এই ক্রীড়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা এক একজন মহারাশভারি মুখোশ চেহারাতে আটকে চলা ফেরা করেন, ভয় পাছে কেউ তাদের স্থান দখল করে ফেলে। পাকিস্তান আমল থেকেই মাঠ ঢাকার সব চেয়ে বড় সমস্যা। পুরানা পল্টন মাঠ সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যবহার করা হতো খেলার জন্য এরপর নাগরিক কা অনেক রাত এই পল্টনে শুয়ে-বসে ইয়ার বন্ধুদের নিয়ে গাল গল্পে ‘দিল-খুশ’ করে বাসা বাড়িতে প্রস্থান করত।
আইস্টাইন বড় বৈজ্ঞানিক তবে ছোট খাট জিনিসে ভুল করে বসতেন, তেমনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ক্রীড়া- বৈজ্ঞানিকরা পল্টন মাঠ দখল করলেন বিরাট এক স্টেডিয়াম বানিয়ে। এটা কোন খেলার জন্য? ক্রিকেট মাঠ- বাউন্ডারি ছোট সুতরাং ক্রিকেটের দেয়া যাবেনা। ফুটবল, না দর্শক যায়গা হবেনা। মাঠ মাঠ করে বহুদিন ধরে ‘আমাশা’ হয়ে যাওয়া হকিকে দেয়া হল। কেউ বিয়ে দিতে না চাইতে না চাইতে প্রায় বৃদ্ধে কে ঘটক বিয়ের কথা বল্লে যেমন বংশ, চেহারা দেখার চিন্তা ভাবনা না করেই উদ্বাহু নৃত্য করতে করতে সম্মতি দেয় তবে মাঠ বিহীন হকি এ মাঠ পেয়ে ফুর্তির সাগরে আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দোকানের নামে স্টেডিয়াম তৈরি করে তা গছাতে পেরে স্বস্থির সাগরে অবগাহন। আচ্ছা ভাই, প্রতিটি স্টেডিয়ামে দোকান, এই সব দোকানের সেলামি, মাসিক ভাড়া এ সব যায় কোথায়? প্রতিটি ফেডারেশন; ক্রিকেট আর ফুটবল বাদে ঠিক মতন এক কাপ চা খাওয়াতে পারেনা আর এই দোকানস ভাড়ার কিছু অংশও ফেডারেশন পেলে ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশ পাল্টে যেত। সেই কথা, ‘আমারি বধুয়া আং বাড়ি যায় আমারি আংগিনা দিয়া।’ বিশ্বের সব দেশের ক্রীড়াঙ্গন দেখে আমাদের পাল্টান... আমরা এখন আর শিশু নই ১৯৭১ থেকে আজতক হেটে হেটে ৫২ বছর।
স্পেনের সান্তিয়াদো লা-লিগা মাঠে কোন মিটিং থাকলে খেলার মাঠটি ভাজ হয়ে নীচে চলে যায় বৃষ্টি হলে অটোমেটিক কাভার মাঠ ঢেকে দেয়, এই ব্যবস্থা এশিয়া কাপ ক্রিকেটে থাকলে এত বৃষ্টি-ঝামেলা পরতে হতো না। অর্ধশত বছর হেলায় পার করে বিশ্ব দরবারে ‘ইস্ট-ফার ইস্টের’ এক বিস্ময় জাগানিয়া উপস্থিতি আমার বাংলাদেশের। অফিস ব্যবসা সব যায়গায় গোপন আঁতাতের টাকা নয় ছয় শুনেছি কিন্তু দিনে দুপুরে স্টেডিয়ামে দোকান বসিয়ে তার ভাড়া-সেলামি আদায় এ এক ‘সিন্দাবাদের’ দৈত্য কাহানী। লড়াকু ক্রীড়াঙ্গন জিতবেই তবে বহু লড়াই করতে হবে।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকিদল এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত
পথরেখা/আসো