• সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৮ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৭:২৪

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্বদাণকারী শহীদ ময়েজউদ্দিন

  • জাতীয়       
  • ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩       
  • ১২৪
  •       
  • ২৬-০৯-২০২৩, ২১:১৫:৪৭

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল 
শহীদ মো. ময়েজউদ্দিন গাজীপুর তথা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আত্বদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক, প্রথিতযশা আইনজীবি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সম্পন্ন সমাজসেবক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কতিপয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীর হাতে ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শাহাদাত বরণ করেন। তার পুরো নাম মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন। কিন্তু দেশ মাতৃকার জন্য জীবনদানের গৌরবময় উজ্জলতায় মৃত্যু পরবর্তী সময় থেকে তিনি শহীদ ময়েজউদ্দিন নামে সমধিক পরিচিত। বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বড়হরা গ্রামে ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার ঠিক ১০ বছর আগে একই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ময়েজউদ্দিনের পিতার নাম মো. ছুরত আলী আর মাতার নাম শহরবানু।
 
শিক্ষা জীবন
১৯৪৮ সালে কালীগঞ্জের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ন (আরআরএন) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৫৫ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে সি.এস.এস (বর্তমানে বিসিএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সরকারী চাকরি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই একজন খ্যাতিমান আইনজীবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
 
রাষ্ট্রীয় পুরস্কার
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভুমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ’স্বাধীনতা পদকে’ ভুষিত করে।
 
রাজনৈতিক জীবন
কলেজ ছাত্র থাকা অবস্থায় তার  রাজনীতিতে হাড়েখরি। ৫২’এর ভাষা আন্দোলন দিয়েই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তার বিশ্বাসভাজন হিসেবে প্রমাণ করেন। তৎপূর্ব সময়ে যখন পাকিস্তানী শাষকগোষ্টী বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে তখন মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন আইনী লড়াই করতে এগিয়ে আসেন। ’ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ পরিচালনা করার দায়িত্ব নেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ’মুজিব তহবিলের’ আহবায়ক নির্বাচিত হন। একজন বিচক্ষন আইনজীবি ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতায় সাথে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। শুধু পূর্ববাংলার জনগনের স্বাধীকার আন্দোলনে নয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মেঘালয় দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধে পরিচালনাকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি একযোগে কাজ করেন।
 
স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনের পর বিভিন্ন পর্যায়ের দল ও সরকারকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একজন সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হবার পর দলের চরম সংকময় দিনগুলিতে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করার দূরহ দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ আগষ্ট নির্মম হত্যাকান্ডের পর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক আহুত সংসদ সদস্যদের সভায় সর্বপ্রথম তীব্র প্রতিবাদ করেন মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন। তার বলিষ্ট এবং প্রতিবাদী আর দুঃসাহসিক ভুমিকায় উপস্থিত সকলেই সেদিন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তম ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি ঢাকা মহানগর এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটিরও নেতা ছিলেন।
 
সমাজসেবায় অংশগ্রহণ
দেশের নেতৃস্থানীয় একজন রাজনীতিবিদের পাশাপাশি সমাজ সেবক হিসেবেও তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি) নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি’র (এফপিএবি) মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান প্যারেনহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) এর দক্ষিণ পূর্ব এশীয় অঞ্চলের কার্যকরী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। এই সময়ে সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। এছাড়া মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজ সেবক হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে সভা, সেমিনার এবং সম্মেলনে যোগদান করেন তিনি। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার), জর্দান, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, রোমানিয়া, কেনিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, চীন, জাপান ও ফিলিপাইন উল্লেখযোগ্য।
 
শহীদ ময়েজউদ্দিনের আত্বদান
১৯৮২ সালে সামরিক বাহিনী অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে দেশব্যপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ধাপে ধাপে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন প্রবল গণ আন্দোলনে রুপ নেয়। মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন এ সময় অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে চলে যান। ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশে ২২ দল আহুত হরতালের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কালীগঞ্জ থাানর সামনেই তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেয়া কতিপয় সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। এই নির্মম হত্যাকান্ডে সমগ্র জাতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদ ময়েজউদ্দিনের আত্মত্যাগ ক্রমে ক্রমে গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে দেয়। শহীদ ময়েজউদ্দিন এর রক্তের সিড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা প্রবল গণ আন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। জয় হয় গণতন্ত্রের। শহীদ ময়েজউদ্দিন একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাধারন জন কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে ইতিহাসে এবং মানুষের হৃদয়পটে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।  
পথরেখা/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।