বিশেষ প্রতিবেদন :স্বপ্নের পদ্মায় খুলছে রেলসেতু। ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার নতুন রেল রুট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে গত বছরের ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে বাকি ছিল রেল যোগাযোগ। অবশেষে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ১০ অক্টোবর সকাল ১০টায় গণভবন থেকে সড়কপথে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বেলা ১১টায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেল স্টেশনে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন করবেন এবং সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। দুপুর পৌনে ১টায় মাওয়া থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে ট্রেনে যাত্রা করবেন। দুপুর ২টায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ভাঙ্গায় কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এই জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল ৪টায় ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল সাড়ে ৫টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন। পরে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে রাত যাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাদেশে বাড়ছে রেলপথ। আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা ও ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা নতুন করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম নতুন করে যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে। নতুন কোচ দিয়েই পদ্মাকেন্দ্রিক ট্রেনগুলো পরিচালনা করা হবে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে কমলাপুর (ঢাকা) থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে, এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই নতুন। কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। মাওয়া স্টেশনের পরে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় নির্মিত হচ্ছে ‘পদ্মা স্টেশন’। পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে ‘শিবচর স্টেশন’।
ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রুটের প্রস্তাবিত ভাড়া: ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায়। এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চললে ভাড়া কেমন হবে, সে নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নতুন রুটে ভাড়া প্রস্তাবনা করেছে। প্রস্তাবনাটি বর্তমানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আছে। জানা গেছে, ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের দৃশ্যমান দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেণ্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়াল রেলপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের প্রস্তাব কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার, গেণ্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। বিষয়টিকে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে গেণ্ডারিয়া স্টেশনের দূরত্ব ৩.৫ কিলোমিটার, আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। এই পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৫ টাকা, কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা, আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫০ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১০০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১১০ টাকা এবং এসি বার্থে ভাড়া ১৩০ টাকা। ভাঙ্গা স্টেশনের দূরত্ব ৮২.৩ কিলোমিটার, আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব ৩৫৯ কিলোমিটার। এই পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১২০ টাকা, কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ১৫০ টাকা, আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৭৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৮১৭ টাকা এবং এসি বার্থে ভাড়া ১ হাজার ২১৯ টাকা।
পথরেখা/আসো