পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় আর্জেন্টিনা সহজেই জিতলেও হেরে গেছে ব্রাজিল। লিওনেল মেসি রেকর্ড গড়ে দলকে জেতালেও ইনজুরিতে মাঠ ছাড়ার পাশাপাশি ম্যাচটাও হারতে হয়েছে। পেরুর ওঝারা নেইমারকে পারলেও আটকাতে পারেননি এলএম টেনকে। উল্টো তাঁদের তুকতাকে লাভই হয়েছে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে ২-০ ব্যবধানে জিতিয়েছেন পেরুর বিপক্ষে। গত মাসে নেইমারকে এই তুকতাক করেই আটকে দিয়েছিল পেরুর ওঝারা। অবশ্য নেইমার না পেলেও মার্কিনিওসের জয়সূচক গোলে ব্রাজিল ঠিকই জয় পেয়েছিল। আর বুধবার কারও ওপরেই ভর করতে পারেনি ওঝাদের কালো জাদু। উল্টো মেসি যেন ধারালো ছুরির মতো তাঁর পাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগালেন মাঠে। প্রতিপক্ষের মাঠে শুরু থেকেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দাপট দেখাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। তার ফল হাতেনাতেও পায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অবশ্য ম্যাচের ৩২ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে আলবিসেলেস্তাদের।
বাঁ প্রান্ত থেকে নিকোলাস গঞ্জালেসের পাস থেকে বল পেয়ে দারুণ শটে গোল করেন মেসি। আর দ্বিতীয় গোল করেন ঠিক ১০ মিনিট পর। মেসির গোলের আগে অবশ্য দুর্দান্ত এক ডামি করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজ। ৪২ মিনিটের সময় এনজো ফার্নান্দেজ বক্সে বল বাড়ালে শট নিতে গিয়ে ডামি করেন আলভারেজ। সেই ডামিতে শট নেওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ পান মেসি। বলকে জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। হ্যাটট্রিকও পেতে পারতেন মেসি, যদি ৫৯ মিনিটে তাঁর করা গোলটি অফসাইডে বাতিল না হতো। ২-০ গোলের জয়ে বাছাইপর্বের ৪ ম্যাচের প্রতিটিতেই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও জোড়া গোলে একটি রেকর্ডও গড়েছেন মেসি। বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন। ৩১ গোলে এখন মেসি শীর্ষে। আর উরুগুয়ের স্ট্রাইকারের গোল ২৯টি। আর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের গোলদাতার তালিকায় সব মিলিয়ে চতুর্থ স্থানে মেসি।
৩৯ গোলে শীর্ষে গুয়েতামালার কার্লোস রুইজ। ৩৬ গোলে দুইয়ে আছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর তিনে আছেন ইরানের আলী দায়ি। ৩৫ গোল করেছেন তিনি। এদিকে খুব বেশি দিন হয়নি চোট কাটিয়ে নেইমারের মাঠে ফেরা। গত মাসে বলিভিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে প্রত্যাবর্তনটা রাঙিয়েছিলেন। সঙ্গে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন। ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ডকে। কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও চোটে পড়লেন নেইমার। উরুগুয়ের বিপক্ষে বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে স্থায়ীভাবেই বাইরে চলে গেলেন। ৪৪ মিনিটের সময় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার নিকোলাস দে লা ক্রুজের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে চোট পান তিনি।
মাঠে পড়ে যাওয়ার পর যেভাবে হাত দিয়ে মাটি চাপড়াচ্ছিলেন, তাতে বোঝা যাচ্ছিল ব্যথাটা হয়তো ভালোই পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর যখন স্ট্রেচারে করে বাইরে নেওয়া হচ্ছিল, তখন কাঁদছিলেন নেইমার। মাটি চাপড়ানোর বড় শঙ্কাটাই হয়তো সত্যি হতে যাচ্ছে। আল হিলাল তারকা যেমন ফিরতে পারেননি, তেমনি ব্রাজিলও ম্যাচে ফেরেনি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে। মন্টেভিডিওতে শুরু থেকেই দুই দল ভালো খেলেনি। প্রথমার্ধে উরুগুয়ের করা গোল বাদে পুরো সময়ই দুই দল কোনো আক্রমণই করতে পারেনি। খেলায়ও ছিল না কোনো সৌন্দর্য। উল্টো বিরতিতে যাওয়ার আগে ফাউল করেছে ১৭টি। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ৪২ মিনিটে উরুগুয়েকে লিড এনে দেন ডারউইন নুনেজ। এর পরেই নেইমারের চোটে ম্যাচ থেকে আরও ছিটকে যায় ব্রাজিল। বিরতির পর গোল শোধ দেওয়ার বিপরীতে দ্বিতীয় গোল হজম করে বসে ব্রাজিল। ৭৭ মিনিটে গোলদাতা নুনেজের পাস থেকে গোল করেন নিকোলাস। বক্সের মধ্যে ব্রাজিলের দুই ডিফেন্ডারের সঙ্গে জড়াজড়ি করে পাসটা দিয়েছিলেন নুনেজ। এই হারে ব্রাজিলের টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার যাত্রায় ছেদ পড়েছে।
পথরেখা/আসো