পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডামাডোলের মধ্যেই বিশ্ব ভ্রমান্ডের ২০২৩ সালের সেরা ফুটবলারের নাম ঘোষনা করা হয়। অনেকটা অনুমিতই ছিল লিওনেল মেসি বসতে যাচ্ছেন সেই আসনে। আর এমন দিনে এই সুপারস্টার সেরার মর্যাদা পেলেন, যেদিন জন্মেছিলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার ডিয়াগো ম্যারাডোনা। সেই ৩০ অক্টোবরই সাফল্যের অষ্টামার্য্যতে প্রবেশ করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন দুজন, যেখানে শেষ পর্যন্ত আর্লিং হালান্ডকে পেছনে ফেলে ব্যালন ডি আর জিতলেন লিও। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে বর্ষসেরার পুরস্কারটি আরও একবার জিতে নিলেন ফুটবলের এই মহাতারকা। এবার জয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে তার প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন বলতে গেলে শুধু ম্যানচেষ্টার সিটির হালান্ড। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল জয়ে বড় অবদান ছিল হালান্ডের। লিগে ৩৭ ম্যাচে জালের দেখা পান ৩৬ বার। ভেঙে দেন ৩৮ ম্যাচের লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে ১১ ম্যাচে গোল করেন ১২টি। তাকে ছাপিয়ে আরেকবার ব্যালন ডি অর হাতে তুললেন মেসি। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে গত মৌসুমটা সাফল্যমনিমব ছিল মেসির।
যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় অবশ্যই কাতার বিশ্বকাপ জয়। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফের বিশ্বকাপ জেতানোর ক্ষেত্রে আসর জুড়ে দুর্দান্ত খেলেন সাবেক বার্সেলোনা তারকা। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে জোড়া গোলসহ আসরে মোট ৭ গোল করেন মেসি। জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ‘গোল্ডেন বল।’ গত মার্চে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। পিএসজির জার্সিতে নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ ওয়ানের শিরোপা জেতেন মেসি। প্যারিসের দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। ইউরোপ সেরার মঞ্চে মেসি ৭ ম্যাচে চারটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান চারটি। পিএসজি ছেড়ে এই মৌসুমে তিনি যোগ দেন মেজর সকার লিগের দল ইন্টার মায়ামিতে। সেখানেও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন নিজের সেরাটা। অনেকটা স্বাধীনভাবে খেলতে পারবেন বলেই সকার লিগে যোগদান করেছিলেন।
এবারের ব্যালন ডি অর জেতার অনেক আগেই লিওনেল মেসির নাম ফাস হয়ে যায়। এর আগে সপ্তম বার জেতার সময়ও এমনটি হয়েছিল। তাইতো এবারের অষ্টম ব্যালন ডি’অর ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করলেন। লিওনেল মেসির জীবনে এমন পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্ত এসেছে বারবার। বিশেষ করে ব্যালন ডি’অর জেতা তো একরকম নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। সোমবার মধ্যরাতে জিতলেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ব্যালন ডি’অর। পুরস্কারটি এমন এক দিনে পেয়েছেন, যে দিনটা এমনিতেও স্মরণীয়। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে ম্যারাডোনার চলে যাওয়া পেরোতে চলল তিন বছর। তবে ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’ বলেও একটা প্রবাদ যে আছে। তাঁর নেতৃত্বেই আর্জেন্টিনা জিতেছিল ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনার ৬৩তম জন্মবার্ষিকীর দিনেই অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি, যেখানে ৩৬ বছর পর ২০২২ বিশ্বকাপে মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপখরা ঘুচেছে।
কাতার বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার স্মরণ করেছেন ম্যারাডোনাকে। অষ্টম ব্যালন ডি’অর পুরস্কার মেসি উৎসর্গ করেছেন ম্যারাডোনাকে। ব্যালন ডি’অর জয়ের পর মেসি বলেন, ‘আজ আমি ডিয়েগোর ম্যারাডোনার নাম উল্লেখ করতে চাই। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মতো এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হয় না। ফুটবল-পাগল অনেক মানুষ তাঁকে ভালোবাসে, এমনটা তিনি চেয়েছিলেন। ডিয়েগো আপনি যেখানেই থাকুন, শুভ জন্মদিন। এই পুরস্কার আপনার জন্য।’ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে একের পর এক পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন মেসি। লুসাইলে গত ফাইনালেও ফ্রান্সের বিপক্ষে করেছিলেন জোড়া গোল। জিতেছেন ২০২২ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলের পুরস্কার। তাতে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে দুই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বলের পুরস্কার জিতলেন আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে এক বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনালে গোল করার রেকর্ড গড়লেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সেখানে তিনি নিজেকে অনন্য এক অবস্থানে নিয়ে গেছেন।
এরপর বিবিসির ২০২২-এর বর্ষসেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ২০২৩-এর লরিয়াসের বর্ষসেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ফিফা দ্য বেস্ট জিতেছেন। আর গত রাতে সর্বশেষ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ব্যালন ডি’অর। এখন মেসি মানেই পুরস্কার। পুরস্কারও যেন মেসিকেই খুঁজে নেয় বারবার। আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্লাব ফুটবল, আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার জিতে চলেছেন একের পর এক শিরোপা। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পুরস্কারও পাচ্ছেন তিনি। রেকর্ড অষ্টমবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলারের কাছে এত পুরস্কার জয় একটু অকল্পনীয় মনে হচ্ছে। মেসি প্রথমে তার শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন একের পর এক শিরোপা। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জিতেছেন ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ থেকে ২০১২ টানা তিনবার, ২০১৫, ২০১৯ ব্যালন ডি’অর জিতেছেন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে অসংখ্য শিরোপা জেতা মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম শিরোপা জেতেন ২০২১ কোপা আমেরিকা জিতে। ২০২১ সালেই জিতেছেন ক্যারিয়ারে সপ্তমবারের মতো ব্যালন ডি’অর।
যারা জিতলেন ২০২৩ ব্যালন ডি’অর পুরস্কার
ছেলেদের ব্যালন ডি’অর: লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
মেয়েদের ব্যালন ডি’অর: আইতানা বোনমাতি (স্পেন)
কোপা ট্রফি (কনিষ্ঠতম ফুটবলার): জুড বেলিংহাম (ইংল্যান্ড)
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড: ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (ব্রাজিল)
সেরা গোলরক্ষক: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (আর্জেন্টিনা)
পথরেখা/আসো