পথরেখা অনলাইন : অনেক কষ্টেসৃষ্টে ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইয়ের প্রাথমিক ধাপ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ধাপে খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় পৌছে জামাল ভুইয়ার দল। সেখানেই নতুন করে জন্ম হয়েছে সমালোচনার। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যখন ধারাবাহিক ভালো খেলার চেষ্টা করছে, দর্শকদের অনেকেই যখন এক উড়ন্ত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফের বিতর্কিত কর্মকান্ড দেখা গেল। ২২ জন মানুষ অতিরিক্ত যাচ্ছেন অস্ট্রলিয়ায়, কেউ কেউ তাদের ছেলে-ভাতিজা সহ, শুধু দেশটা অস্ট্রেলিয়া বলেই খেলা দেখতে যাওয়ার যত তাল-বাহানা। অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যে এতো মানুষজনকে মাঠে কখনো আগে দেখা যায়নি। এই নীতি আবার ভারত, ভুটান, মালদ্বীপের বেলায় থাকে না? দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই বেসামাল। যারা বিদেশে যেতে চায় নিজের টাকা খরচ করে গেলেই কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তারা বাফুফের ব্যানারে কেন যাবে? ফুটবলকে ভালোবেসে রাতদিন সাধারণের মাঝে ফুটবলকে প্রমোট যারা করছেন, তরুণ প্রজন্মকে ফুটবলে উদ্বুদ্ধ করছে তাদের লজ্জা লাগে যখন শুনি বাফুফের বেতনভুক্ত কর্মকর্তারা জানেন না আগামী ম্যাচগুলো কাদের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এতো অব্যবস্থাপনার মাঝেও খেলোয়াড়রা আনন্দ ও ভালো ফলাফলের চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে বইতে শুরু করেছে বাতাস। সব শঙ্কা উড়িয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা জায়গা করে নিয়েছে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে। অক্টোবরে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে মালদ্বীপকে হারানো বাংলাদেশের ফুটবল খুঁজে পেয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি। যার কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের সঙ্গে দিতে হবে কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরাকে। ২০২২ সালে দায়িত্ব পাওয়া কাবরেরার অধীনে আট ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি হেরেছিল বাংলাদেশ। ড্র দুটি আর জয় এসেছিল কম্বোডিয়ার বিপক্ষে। ২০২৩ সালে সেই দলটাই যেন বদলে গেছে। স্প্যানিয়ার্ড হ্যাভিয়ের কাবরেরার প্রশিক্ষণে ১৪ বছর পর খেলেছে সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে। চলতি বছর জিতেছে আবার ছয়টি ম্যাচ। পরিবর্তনের ছোয়া তখন থেকেই লাগা শুরু।
এরপর ধারাবাহিক সাফল্যে উন্নতি ঘটেছে ফিফা র্যাংকিংয়ের ১৮৩তম স্থানে। অথচ ২০২২ সালের সমাপ্তিতেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯২। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ‘এইচ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন আর লেবানন। ১৬ নভেম্বর মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের মিশন। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ দুই ম্যাচে ৯ গোল হজম করেছে সকারুজদের কাছে। এবার মেলবোর্নের মাটিতে খেলা কঠিন করে তুলেছে পরিস্থিতি। বাস্তবতা হচ্ছে, ফিফা র্যাংকিংয়ের ২৭তম স্থানে থাকা দলটির বিপক্ষে সম্মানজনক হারই কাম্য কাবরেরার দলের জন্য। ২১ নভেম্বর কিংস অ্যারেনায় লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ। লেবাননের ফিফা র্যাংকিং ১০১। কিন্তু লেবাননের বিপক্ষে তিন মোকাবিলায় একটি জয়ের রেকর্ড আছে লাল-সবুজের দলের। ২০১১ সালের জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে লেবাননকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে না হলেও নিজেদের মাঠে লেবাননকে হারানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে অপ্রত্যাশিত বিতর্ক। মেলবোর্নে খেলা দেখতে যাবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্তাব্যক্তিদের বিশাল বহর, যাদের বেশিরভাগেরই নেই জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা! অভিযোগ উঠেছে, কর্তাদের সঙ্গে নিকট আত্মীয়দের জোগাড় করে দেওয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা। কেউ কেউ তো সরাসরি বলছেন, এটা হচ্ছে বাফুফের আগামী নির্বাচনের আগে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের কাছ থেকে বিশেষ উপহার! মালদ্বীপের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে কোনো ম্যাচেই বাফুফের কর্তাদের দলবেঁধে মাঠে উপস্থিতি দেখা যায়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য পড়ে গেছে হুড়োহুড়ি। নারায়ণগঞ্জ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, উত্তর বারিধারা ক্লাবের সভাপতি, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটি, ঢাকা মেট্রোপলিস লিগ কমিটির সদস্য, বাফুফের ডেভেলপমেন্ট ফুটবল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং তার ভাতিজা সবাই আছেন সফর ইচ্ছুক তালিকায়। শোনা যাচ্ছে সংখ্যাটা প্রায় ২২ জন!
কিন্তু জাতীয় দলে তাদের কাজ কী, সেটাই রহস্য। বাফুফের সঙ্গে জড়িত কর্তাদের অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের পাঁয়তারা নিয়ে ফুটবলমোদীরা সমালোচনায় মুখর। সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু অভিযোগ করে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াগামী দলের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ২২ অনাহূত সফরসঙ্গী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। জবাবদিহিতা না থাকায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। বিশেষ করে ফুটবলে। তাই তো এত কেচ্ছা-কাহিনি হচ্ছে।’ এখনও বিদেশ সফরের জন্য কর্মকর্তাদের এমন আবদার আদতে ক্ষতি করছেন দেশের ফুটবলের।
পথরেখা/আসো