পথরেখা অনলাইন : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’-এ পরিণত হয়েছে। সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে বাতাসের গতি বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে এর মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ১৬ নভেম্বর মো. মনোয়ার হোসেন দুপুর ১২টায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে বাতাসের গতি ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে। এটি আরও অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি বাড়ছে। আগে এটি ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। এখন এর গতিবেগ ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার হয়ে গেছে। সন্ধ্যার মধ্যেই এর মূল অংশ খেপুপাড়ার দিকে আঘাত হানতে পারে।
এই ঘূর্ণিঝড় খুব বড় ধরনের হবে না বলে এখনো মনে করছেন আবহাওয়াবিদ এবং সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘মিধিলি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করেছে। বেলা দুইটার দিকে এর মূল অংশের প্রভাব শুরু হবে। এটি ‘এ’ ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়। এটি বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় হবে না।’
তবে ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় কিছু প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫ হাজার ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব জেলার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে দেশের আট উপকূলীয় জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ইতিমধ্যে এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টি ১৬ নভেম্বর ভোর ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পথরেখা/আসো