পথরেখা অনলাইন : দীর্ঘদিন পর হলেও পরাজয় দেখেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, সেই একই পথে হেটেছে চিরপ্রতিদ্বন্ধী ব্রাজিলও। শুক্রবার একই সময়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দুই দলই পরাজিত হয়েছে। একই সময়ে ম্যাচ শুরু হওয়ায় একসাথে দুটি ম্যাচের দিকেই নজর ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। দুই ম্যাচই উপহার দিয়েছে হতাশা। লাতিন অঞ্চলের ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে উরুগুয়ের কাছে হেরে গেছে আর্জেন্টিনা, আর ব্রাজিল হেরেছে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। নিজেদের মাঠ বুয়েন্স আইরিসের এন্তাদিও আলবের্তো জে. আর্মান্দোয় বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারায় উরুগুয়ে। আর কলম্বিয়ার এস্তাদিও মেত্রোপলিতানোয় ব্রাজিল হারে ২-১ গোলের ব্যবধানে। প্রতিপক্ষের মাঠে লম্বা সময় এগিয়ে ছিল নেইমারকে ছাড়াই খেলতে নামা ব্রাজিল। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে সেলেসাওদের এগিয়ে নেন গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। ৭৫ ও ৭৯তম মিনিটে লুইস দিয়াসের জোড়া গোল হৃদয় ভাঙে ব্রাজিলের। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হারের পর টানা ১৪ ম্যাচ জিতে উড়ছিল আর্জেন্টিনা। তাদেরকে মাটিতে নামাল উরুগুয়ে; আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো বিয়েলসার কৌশল কাজে লাগে। ম্যাচ জুড়ে আধিপত্য দেখিয়েও জয় পায়নি তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
দুই অর্ধে উরুগুয়ের হয়ে গোল করেন রোনালদ আরউহো ও দারউইন নুনেজ। ম্যাচের ৬৪ শতাংশ সময়ই বলের দখল ছিল আর্জেন্টিনার অনুকূলে। গোলের উদ্দেশে তারা ১২টি শট নেয়, যার মধ্যে ৩টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু জালের দেখা মেলেনি। বিপরীতে পোস্টে রাখা দুই শটেই লক্ষ্যভেদ করে উরুগুয়ে। পায়ের কিছু কারিকুরি, দারুণ কিছু মুভ দেখালেও এ অর্ধে উরুগুয়ের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারেননি প্রায় এক মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার মধ্যে না থাকা মেসি। রেকর্ড আটবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের একটি ফ্রিকিক ক্রসবারে লাগে। আর্জেন্টাইন তারকাকে কড়া পাহারায় রাখার কৌশল নিয়েছিলেন উরুগুয়ে কোচ বিয়েলসা। ম্যাচে মোট ফাউল হয় ৩৩টি। এর মধ্যে ২২বার ফাউল করে উরুগুয়ে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা ছড়ায় মাঠে। ১৯তম মিনিটে একটি ফাউলের ঘটনায় মেজাজ হারায় দুই পক্ষই। জড়িয়ে পড়ে ধাক্কাধাক্কিতে। তাতে খেলা একটু সময় থাকে বন্ধ। রেফারির দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি গড়ায়নি বেশি দূর।
দুই মিনিট পর মেসিকে বক্সের একটু বাইরে মানুয়েল উগারতে পেছন থেকে ফাউল করলে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। আর্জেন্টাইন তারকার ২১ মিটার দূর থেকে নেওয়া ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে লেগে কর্নার হয়। বার্সেলোনার সাবেক দুই সতীর্থ ও বন্ধু লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের মিলনের ম্যাচ ছিল এটি। যেখানে শেষ হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন উরুগুইয়ান তারকা সুয়ারেজ। ৪১তম মিনিটে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় উরুগুয়ে। বাঁ দিকে মলিনার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বাইলাইনের একটু উপর থেকে বক্সে ক্রস বাড়ান মাতিয়াস ভিনা। ক্লিয়ার করতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোনো ডিফেন্ডার। রোনালদ আরাউহোর কোনাকুনি শটে পরাস্ত এমিলিয়ানো মার্তিনেস। আর্জেন্টিনা যখন গোল শোধে মরিয়া তখন ৮৭তম মিনিটে উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত করে দেন নুনেস। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে এক ছুটে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে জাল কাঁপান এই ফরোয়ার্ড। ব্রাজিল অবশ্য গোলে খেতে পারত আরও। বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও ঘরের মাঠে দারুণ ফুটবল উপহার দেয় কলম্বিয়া। গোলের উদ্দেশ্যে ২৩টি শট নেয় তারা, এর মধ্যে ১০টিই ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ৬১ শতাংশ বলের দখল রেখেও ১২টি শটের মধ্যে কেবল তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পারে ব্রাজিল।
বাছাইয়ে প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর গত মাসে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ১-১ ড্রয়ের পর উরুগুয়ের মাঠে ২-০ গোলে হেরে বসে ব্রাজিল। ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো আবারও হেরে বসল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমার্ধেই অনেক বড় এক ধাক্কা খায় ব্রাজিল। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন আক্রমণভাগের মূল তারকা ভিনিসিউস। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তার বদলি নামেন ব্রাইটনের ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রো। আক্রণের ঢেউ তুলেও গোল পাচ্ছিল না কলম্বিয়া। অবশেষে ৭৫তম মিনিটে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফেরান দিয়াস। বাঁ দিক থেকে সতীর্থে ক্রসে ছয় গজ বক্সে লাফিয়ে হেডে স্কোরলাইন ১-১ করেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড। চার মিনিট পর আবারও ডি-বক্সে দিয়াসের হেড এবং গোল। শুরু হয়ে যায় কলম্বিয়ার সমর্থকদের জয়োৎসব। চলমান বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার প্রথম হার এটি, ব্রাজিলের দ্বিতীয়। ৫ রাউন্ড শেষে চার জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে আর্জেন্টিনা। দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ব্রাজিল। তিন জয় ও এক ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে উরুগুয়ে। দুই জয় ও তিন ড্রয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে কলম্বিয়া। ৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে রয়েছে ভেনেজুয়েলা।
পথরেখা/আসো