পথরেখা অনলাইন : রাখা ভালো কুলি বলতে সচরাচর আমরা বুঝি এক শ্রেণির দিনমজুর, যারা রেল স্টেশন বা লঞ্চঘাটে যাত্রীদের মালপত্র নামানো বা উঠানোর কাজ করে থাকে। কুলি নিয়ে ঢালিউড , টলিউড , বলিউডে নির্মিত হয়েছে একাধিক সিনেমা। যেখানে ফুটে উঠেছে কুলিদের জীবন-যাপনের নানা চিত্র।
দিন দিন সব কিছুর দাম বাড়ছে। তবে বাড়ছে না তাদের জীবন-যাপনের মান। অভাবে-অনটনেই কাটছে তাদের প্রহর। কখনো তিনশো কখনো চারশো ভাগ্য ভালো থাকলে কেউ কেউ বেশিও রোজগার করতে পারেন দিনে। কথার ছলে লাল পোশাক পরিহিত লোকটি জানালো,একসময় স্টেশনে ২৮ কেজির ব্যাগের জন্য ১৫ টাকা, দুটি ব্যাগ ২০ টাকা, ৩৭ কেজির দুটি ব্যাগ ২৫ টাকা, ৫৬ কেজি পর্যন্ত ব্যাগ ৩৫ টাকা। ট্রলি যাত্রী ব্যবহারে ১৫ টাকা, কুলি ব্যবহারে ২০ টাকা, হুইলচেয়ার কুলি ব্যবহারে ২০ টাকা নিতেন সবাই। তবে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই দাম এখন নামমাত্র সীমাবদ্ধ । এই টাকা আমাদের পোষায় না।
অনেকের ধারণা ঈদের সময় তাদের আয় বেশি হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য যাত্রীরা বাড়তি মালপত্র সঙ্গে আনেন না। তাই তাদের আয় এতটাও বাড়ে না যতটা মানুষ ভাবে। তবে তাদের আয় ভালো হয় ফলের মৌসুমে। দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই ফল পাঠায় তখন ভারী মাল মাথায় বইতে পেরে ফুটে উঠে কুলিদের মুখে হাসি।
করোনার সময় বন্ধ ছিল ট্রেন। তখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছিল খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো। সে সময় অভাবে থাকা মানুষ অনুদান পেলেও বঞ্চিত হয়েছিলেন অনেক কুলি। বাধ্য হয়ে পাততে হয়েছিল হাত। একটি তথ্য মতে, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রায় আড়াইশ কুলি রয়েছে। নিজের থাকা-খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তা পাঠান গ্রামে নিজের পরিবারের জন্য। যারা কুলির কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের দুই তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, এরপর তালিকায় নাম উঠিয়ে স্টেশন অফিস থেকে অনুমতিসহ নম্বর প্রদান করা হয়।
তবে বর্তমানে অনেকেই এই পেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। আমার বাসার সামনেই একটি বাজার। প্রতি মাসেই চালের বস্তা বাসায় দিয়ে যান পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব এক লোক। তিনি নাকি এক সময় রেল স্টেশনে কুলির কাজ করতেন। তবে আয় কম হওয়ায় এখন বাজারের মালপত্র, চালের ব্যাগ বহন করেন। তার মতে স্টেশনের কুলির কাজ থেকে এখানে আয় বেশি। তিনি জানান , তার মতো অনেকেই রেলের কুলির পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় ছুটছেন।
পথরেখা/অআ