পথরেখা অনলাইন : আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ মানেই বিশেষ কিছু। তবে এতটা বিশেষ সেটা আগে থেকে বোঝা যায়নি। ২২ নভেম্বর সকালের ম্যাচে মারামারি, হলুদ কার্ড, লাল কার্ড, গোল সবই হয়েছে। সেখানে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আর্জেন্টিনা। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটি ১-০ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে জয়ের ধারায় ফিরেছে। অন্যদিকে টানা তৃতীয় পরাজয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ছয় নাম্বারে নেমে গেছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা ফিরেছে পয়েন্ট তালিকার এক নাম্বারে। বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জোলিন্টন লাল কার্ড দেখায় ম্যাচের শেষের ১০ মিনিট দশ জন ফুটবলার নিয়ে খেলতে হয় ব্রাজিলকে। প্রথম হাফে অগোছালো ফুটবলের পর দ্বিতীয় হাফেও মাঝ মাঠেই ঘুরপাক খাচ্ছিল বল। প্রথম হাফের পর, দ্বিতীয় হাফেও আক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। তবে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় হাফে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে গোলের জন্য বারবার সুযোগ তৈরি করছিলো। শেষ পর্যন্ত কর্নার থেকে গোলটি আসে তাদের। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে লো সেলসোর নেয়া কর্নার থেকে হেড করে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন নিকোলাস ওতামেন্ডি। বল ঠেকাতে ব্যর্থ হন অ্যালিসন।
এই জয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইয়ে আবারও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করলো আর্জেন্টিনা। ৭ ম্যাচে ৬ জয় ১ হারে তাদের পয়েন্ট ১৮। এক ম্যাচ কম খেলে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেছে উরুগুয়ে। ৭ ম্যাচে ২ জয় ৪ হার ও ১ ড্রতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ছয়ে আছে ব্রাজিল। এদিকে, মারাকানায় ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচ শুরু হওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষেই শুরু হয় প্রথম ঝামেলা। ব্রাজিলের মারাকানায় উপস্থিত আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে ব্রাজিলের সমর্থকরা। দ্রুতই সেখানে ছুটে যান স্থানীয় পুলিশের সদস্যরা। ঘটনার জের ধরে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি পুরো দল নিয়ে চলে যান ড্রেসিংরুমে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ম্যাচের লাইভ বিবরণীতে জানায়, ‘আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত চলাকালে ব্রাজিলের সমর্থকেরা দুয়ো দিতে শুরু করলে ঝামেলার শুরু হয়। আর্জেন্টিনা দলের সদস্যরা এবং ব্রাজিলের অধিনায়ক মার্কিনিওস দর্শকদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এরপর মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনার বাকি খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে চলে যান। পরে ম্যাচের সময়েও ছিল এই উত্তেজনার রেশ।
প্রথমে এই মারামারির কারণ জানা না গেলেও, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবোর ধারাভাষ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত বাজার সময় ব্রাজিলের সমর্থকেরা দুয়ো দেয়ায় ঝামেলার শুরু হয়। পরে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আধা ঘণ্টা পর অবশেষে ম্যাচ মাঠে গড়ায়। ম্যাচের সময়েও ছিল এই উত্তেজনার রেশ। শুরুর ১৫ মিনিট যেন শারীরিক ভাষা প্রয়োগেই ব্যস্ত ছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। এরমাঝে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রাই অবশ্য চড়াও হয়েছেন বেশি। ম্যাচের ১৫ মিনিট না গড়াতেই কড়া ট্যাকল করে কার্ড দেখেন ব্রাজিলের গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং রাফিনহা। ৩৪ মিনিটে আবার কার্ড দেখেন ব্রাজিলের কার্লোস অগাস্টো।
এদিকে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ সালের আসরের দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইয়ে মাঠে নেমেছিল চিরবৈরি দেশদুটি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এর আগে ঘরের মাঠে হারের অতীত রেকর্ড ছিল না সেলেসাওদের। দীর্ঘ দিন ধরে বয়ে চলা সেই রেকর্ড অবশেষে ভেঙ্গে দিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল ম্যাচ খেলেছিল মোট ৬৪টি। যেখানে জয় ৫১ এবং ড্র বাকি ১৩ ম্যাচে। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেই রেকর্ড অক্ষুন্ন রাখতে পারেনি ফার্নান্দো দিনিজের দল। ২০০১ সালের পর এবারই প্রথম টানা তিন ম্যাচ হারল ব্রাজিল। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেন নিকোলাস ওতামেন্ডি। ৬৩ মিনিটে জিওভানি লো সেলসোর কর্নারে হেডে জাল খুঁজে নেন এই ডিফেন্ডার। উরুগুয়ে, কলম্বিয়ার কাছে হারের পর আর্জেন্টিনা ম্যাচ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল ব্রাজিল কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকে থাকতে হল সেলেসাওদের।
ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের সামনে মেসি বলেন, ‘আমরা দেখেছি পুলিশ কিভাবে মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছিল। আমাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও ওখানে ছিল। কোপা লিবার্তাদোরেসের ফাইনালেও একই কাজ করেছে ব্রজিলের পুলিশ। মাঠে খেলার চেয়ে সেসবেই তাদের মনোযোগ বেশি থাকে। আমরা একটা পরিবার। পরিস্থিতি শান্ত করতেই আমরা ফের মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
পথরেখা/আসো