পথরেখা অনলাইন : বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ষষ্ঠ দফা অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল প্রায় স্বাভাবিক। রাস্তায় বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের গণপরিবহন দেখা গেছে। সঙ্গে সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও। তবে গণপরিবহনে যাত্রী সংকট রয়েছে। বেশিরভাগ বাসেই অর্ধেক আসন খালি দেখা গেছে।
২৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, নতুনবাজার, গুলশান, মহাখালী, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, শ্যামলি এলাকার সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানচলাচল কিছুটা কম দেখা গেছে। মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বরেও একই চিত্র দেখা গেছে। তবে সড়কে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশার অপেক্ষায় কোনো যাত্রীকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
অন্যদিকে অবরোধে রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, টিকাটুলী, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ ঘুরে দেখা গেছে, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করছে। তবে তা ছিল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কিছুটা কম। গাড়ির চাপ থাকলেও কোথাও যানজট দেখা যায়নি।যানবাহনের সংকটে যাত্রীদের ভোগান্তিও দেখা যায়নি এসব সড়কে।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে মহাখালী টিবি গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকতে দেখা যায় বৈশাখী পরিবহনের হেলপার রাকিবকে। যাত্রী কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সরকারে কয় গাড়ি নামাও, আমরা তো ঝুঁকি নিয়ে নামছি। এখন তো দেখি যাত্রী নাই। ডাইকা ডাইকা গলা শেষ, বাসে ওঠার লোক নেই।
অবরোধে রাস্তা ফাঁকা থাকলেও আয় কমেছে জানিয়ে রাকিব বলেন, সাভার থেকে সকালে নতুনবাজার গেছি। এখন আবার নতুনবাজার থেকে সাভারে যাইতেছি। ট্রিপে ১৫০০-১৮০০ টাকা ওঠে। এখন ৫০০ টাকাও উঠছে না। তেল খরচও হয় না। মালিককে দিয়ে ড্রাইভার-হেলপারের তো কিছুই থাকছে না। রবরব পরিবহনের চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, রাস্তা তো ফাঁকা, জ্যাম নাই। কিন্তু গাড়ি তো খালিই থাকতেছে। গাড়ি খালি লইয়া তো টানতে ভালা লাগে না। যাত্রী না থাকলে তো ভাড়াও নাই, ট্যাকাও নাই।
এদিকে, হরতাল-অবরোধে বাস সংকটে প্রথমদিকে পাঠাও চালকরা ভরপুর যাত্রী পেলেও এখন ভিন্নচিত্র। রাস্তা ও বাস ফাঁকা থাকায় কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে উঠতে চাইছেন না। ফলে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেল চালকরা ভাড়া পাচ্ছেন না। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে, ওয়্যারলেস গেট, মহাখালী রেলগেট এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল চালকদের অলস বসে থাকতে দেখা গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও যাত্রী সংকটের কথা জানিয়েছেন।
পাঠাওচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিকেলে আমি চাকরি করি। দুপুর ২টা পর্যন্ত রাইড শেয়ার করি। সকালে সাড়ে ৬টার দিকে বেরিয়েছি। এয়ারপোর্ট থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের একটা যাত্রী পাইছিলাম। ১১০ টাকায় আসছি। এরপর ৯টা বাজে কোনো যাত্রী নেই। বাস ফাঁকা, রাস্তাও ফাঁকা। কেউ বাইকে উঠতে চাইছেন না।
অন্যদিকে রাজধানীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। গুলশান, মহাখালী এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ সারি চোখে পড়েছে। গুলশান-১ চত্বরে সিগন্যালে অপেক্ষায় থাকা আব্দুর রহিম নামে একজন চালক জাগো নিউজকে জানান, তিনি একটি প্রাইভেট কনসালটেন্ট ফার্মের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি চালান। হরতাল-অবরোধে তার বস ও পরিবারের সদস্যরা বের হন কম। তবে গত দুইদিন তারা নিয়ম মেনে বাইরে বের হচ্ছেন। এজন্য তাকেও অবরোধের মধ্যে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।
তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তা ও গণপরিবহনে চাপ কম থাকায় খুশি যাত্রীরা। গুদারাঘাট থেকে আগারগাঁও যেতে বৈশাখী পরিবহনে ওঠেন সিরাজ উদ্দিন নামে একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাংলাদেশ বেতারে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করেন। সিরাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ রাস্তাটুকু যেতেই কোনো কোনো সময় ৪০-৪৫ মিনিট লেগে যায়। এখন ১৫-২০ মিনিটে চলে যাচ্ছি। রাস্তাটা এমন যানজটমুক্ত থাকলে পাবলিক বাসে যাতায়াতা করেও সুবিধা।’
২২ নভেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দগুলোর সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশি অভিযানে পণ্ড হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। এরপর সারাদেশে পাঁচ দফায় সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ও দুই দফা হরতাল পালন করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।
পথরেখা/অআ