পথরেখা অনলাইন : দেশের মিঠা পানি মাছের প্রধান উৎস চলনবিল যে শুধু মাছের জন্যই বিখ্যাত তা কিন্তু নয়, কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসা শীতের অতিথি পাখি ও দেশী প্রজাতি পাখির জন্যেও এ বিলের বেশ সুনাম আছে। অতীতে ইংরেজদের কাছে চলনবিলের পাখি আর মাছের বেশ কদর ছিল। এ বছর শীতের শুরুতেই চলনবিলের মাঠ জুড়ে অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, অবাধে পাখি শিকার বন্ধ হলে বিলে পাখির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
সম্প্রতি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত জোড়মল্লিকা, নিংগইন, সাঁতপুকুরিয়া, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি, কাউয়াটিকরিসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিলের পানি নেমে জেগে উঠা মাঠে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখিরা। তাদের কিচিরমিচির শব্দ আর পাখার ঝাপটানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলের পরিবেশ। কখনো ডানা মেলে আকাশে উড়ছে আবার কখনো মাটিতে নেমে খাবারের সন্ধান করছে। এ যেন এক অন্যরকম প্রকৃতি।
এসময় পাখি প্রেমিরাও হরেক রকম পাখি দেখতে আসছেন এ বিলে। চলনবিলে সাধারণত ছোট সারস পাখি, বড় সারস ,কাঁদোখোচা, রাতচরা, হারগিলা, ভাঁড়ই, নলকাক, ডাহুক, হুটটিটি, চখাচখি, বুনোহাঁস, বালিহাঁস, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তবে এ বছর বালিহাঁস, বক ও রাতচরা প্রজাতির পাখি বেশি দেখা মিলছে।
বিলতাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ও পরিবেশ কর্মীদের সচেতনতায় পাখি শিকার অনেকটাই বন্ধ হওয়ায় আগের চেয়ে বিলে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। তবে কিছু অসাধু শিকারী এখনও রাতের বেলায় পাখি শিকার করছেন। এসব বন্ধের দাবী জানাই। সিংড়া-বারুহাস সড়কে পাখি দেখতে আসা দিপু ও মনি নামের দুই পর্যটক জানান, আমরা বগুড়া থেকে এসেছি। শীতের এই মৌসুমে প্রতি বছরই পাখি দেখতে চলনবিলে আসি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মূলত চলনবিলে পাখির বিচরণ আর আগের মত নাই। চলনবিলে আগের মত দীর্ঘসময় পানি থাকে না। এছাড়া কৃষি আবাদে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করায় পাখিসহ বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাল খননের পাশাপাশি বিলের নিচু এলাকায় মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন বলেন, শীত প্রধান দেশ থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসব পরিযায়ী পাখি আমাদের চলনবিলসহ দেশের হাওর-বাওর ও নদী এলাকায় আসে। চলনবিলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। আমরা শুধু শীতের অতিথি পাখি নয় দেশী প্রজাতিসহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধে সবসময়ই মনিটরিং করছি। জনসচেতনতা বাড়াচ্ছি। আশা করছি আগামীতে চলনবিলে পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে। পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
পথরেখা/আসো