দ্বিতীয় এশিয়া কাপ। ঢাকাতে। অধিনায়ক ছিলাম। টিম ম্যানেজার প্রতাপ শংকর এবং কোচ এহতেশাম। আমি অধিনায়ক হবার পর গোস্যাতে পদত্যাগ করে প্রতাপ দা তার জোরে এহতেশাম ভাইকেও পদত্যাগ করায়। সভাপতি ছিলেন জেনারেল মতিন, সাথে আলমগির আদিল ভাইসহ সভাপতি আর মুমিন ভাই সাধারন সম্পাদক, আব্দুস সাদেক ভাই উপদেষ্টা হিসাবে আছেনই।এমন কোর মন্ডলি থাকাতে প্রতাপ আর এহতেশামের পদত্যাগে মতিন স্যার আমলেই নিলেন না।
ছিলাম হোটেল পূর্বানিতে। প্রথম খেলা ইরানের সাথে। আমাদের মাইক্রোবাস ইসলামিয়া হোটেলের কাছ পর্যন্ত আসার পর গাড়ি করে আর এগুতে দিল না পুলিশ, হেঁটেই তিন শত গজ যেতে হল। ঢোকার সময় দেখি ইরান দলের গাড়ি মাঠে ওই গেটে। ইরান হারল তিন গোলে জুম্মনের হ্যাটট্রিকের জন্য টিসা আর কিসমতকে গোল দিতে বারণ করেছিলাম নইলে ৬/৭ গোল হত। পরের খেলাতে ইসলামিয়া গেটে গাড়ি থামিয়ে নামলাম, হেটে যাব, পুলিশ এসে বলল, নামবেন না আপনারা গাড়িতে করেই যাবেন। আপনারা দুর্দান্ত দল। মন খুশিতে ভরে গেল। এশিয়া কাপের খেলা দেখতে হকিতে এমন দর্শক ভর্তি ঠাসা মাঠ বিশ্বে আজতক হয় নাই। আবার বলছি বিশ্বে এত দর্শক হকিতে আজতক দেখা যায় নাই।
দুঃখ একটাই, প্রতাপ দা ছিলেন গ্রাউন্ডের দায়িত্বে। আমাদের এমন রেজাল্ট তার হিংসা হয়ে ছিল। মালয়্শিয়ার সাথে খেলার আগের রাতে ফায়ার ব্রিগেড এনে সমগ্র মাঠ পানিতে ডুবিয়ে দেন। আমরা খেলেছি ক্যাডস পরে আছার পাছার খেয়েই সারা আর মালয়েশিয়া দল এ্যাস্ট টার্ফে খেলার বুট পরে, এ্যাস্ট টার্ফ মানেই ভিজা মাঠে খেলা। সেই বুটে স্টাড থাকে। ফলে ভিজা মাঠে খেলা সহজ। প্রতাপ দা শয়তানি করে দেশকে হারাল। উনাকে এক বছর সাসপেন্ড করা হয়, পরে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চায়।
ক্যাপ্টেন দলকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অনেক পেপ-টক করতে হয়। পিরুর বয়স টেনে টুনে ১৬ বছর, পাকিস্তানের সাথে খেলার আগের রাতে ওর রুমে গেলাম। বললাম মুক্তিযুদ্ধ কি, তুমি দেখনি, বুঝনি। কাল তোমার মুক্তিযুদ্ধ দেখব। পিরু পৃথিবী শ্রেষ্ঠ রাইট আউট কলিমুল্লাহকে একবারও বের হতে দেয়নি।
গোলরক্ষক ওসমান যদি গোল লাইন ছেড়ে এক কদম বেড় হয়ে আসে। তবে আংগেল ছোট হয় আর হাসান সরদার টপ অব দ্য ডি সটমারতে পারেনা। তার আরো এক দুই কদম ভিতরে ঢুকতে হত। এই দেরির সুযোগে আমাদের ডিফেন্স ট্যাক্যল করার সুযোগ পেতই। গোলরক্ষক গোল লাইন না ছাড়াতেই হাসান টপ অব দ্য ডি থেকে শট নেয়। ঢাকা আসলে সোনারগাঁও হোটেলে উঠে কল দিলে যাই অনেক কথা হয়। ওই হোল নিয়েও কথা হয়। দ্বিতীয় এশিয়া কাপ আমাদের হকি ইতিহাসে মাইল স্টোন হিসাবে আজীবন ধ্রুবতারা হয়ে জ্বল জ্বল করবে।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং সদস্য আন্তর্জাতিক স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশন
পথরেখা/আসো