মোয়াজ্জেম রাসেল : রাজধানী ঢাকায় এমনিতেই মাঠ সমস্যা বেশ প্রকট। তারওপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এ চলছে সংস্কার কাজ। মূল কাজের বিল ও কাজের মেয়াদ বাড়ায় যেন সংকট আরও বাড়ছে। বাংলাদেশের ফুটবল এখন নানা সমস্যার পাশাপাশি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল মাঠের ফুটবলে ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। সর্বশেষ ঘরের মাঠে লেবাননের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠ বলতে অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে। কিন্তু আড়াই বছর ধরে এই মাঠে খেলতে পারছেনা ফুটবলাররা। নিজের মাঠ বলতে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাকেই বলতে হবে। মাঠ সমস্যার কারণে এখন দেশের প্রথম ক্লাবের নিজস্ব মাঠে খেলতে হচ্ছে। হোম অব ফুটবল হিসেবে খ্যাত স্টেডিয়ামে খেলতে না পারার ফলে কিছুটা কষ্ট কাজ করছে। নতুন বছরের মাঝামাঝিতে এসে হয়তো এই মাঠে খেলার সুযোগ পেতে পারে জামাল ভুইয়া, তারিক কাজী, শেখ মোরসালিনরা। সেখানেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে দুই মাঠ ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে ফুটবলপ্রেমিদের বারবারই প্রশ্ন করে থাকে, কবে তৈরি হবে দেশের ফুটবলের প্রধান এই ভেন্যু। কারণ এখন অনেকটাই যাযাবর তারা।
দেশের ফুটবলে মাঠ সমস্যা বেশ পুরনো। বরাবরই পাশে দাড়াতে দেখা গেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি)। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মাঠ সমস্যা কাটাতে বাফুফের পাশে দাঁিড়য়েছে দেশের ক্রীড়া নিয়ন্দ্রক প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে দু’টি মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাঠ দু’টি হলো, কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মতিঝিলের বাফুফে ভবন সংলগ্ন কৃত্রিম টার্ফে মাঠ। দু’টি মাঠেরই নতুন করে সংস্কার করার প্রয়োজন ছিল। সে কারণে এনএসসির কাছে ২৫ বছরের জন্য লিজ চেয়েছিল বাফুফে। এরপর আলোচনা-পর্যালোচনার পর বাফুফের সেই আবেদন আমলে নিয়ে মাঠ দু’টি লিজ দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় এনএসসি। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মতিপত্রের মাধ্যমে বাফুফেকে দুইটি মাঠ আগামী ২৫ বছর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে সরকারি ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
যদিও এনএসসি নতুন এই সম্মতিপত্রে অবশ্য একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বাফুফে দেশের ফুটবল উন্নয়ন ও পরিচালনা কর্মকান্ড করতে পারলেও বাণিজ্যিক কোনো কাজে মাঠ দু’টি ব্যবহার করা যাবেনা। এনএসসির এই শর্ত মেনেই ২৫ বছর এই স্থাপনা ব্যবহার করার সম্মতি দিয়েছে বাফুফে। এখন নতুন করে মাঠ দুটি পাওয়ার পর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থা ফিফার সঙ্গে আলোচনা করবে। কারণ এই দুই ভেন্যুতেই টার্ফ স্থাপন করা হবে ফিফার অর্থায়নে। ফিফার অন্যতম শর্তের মধ্যে রয়েছে, জমির মালিকানা বা ব্যবহার স্বত্ত্ব বাফুফের অধীনেই থাকতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় সকল ক্রীড়া স্থাপনাই এনএসসির অধীনে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমতি পাওয়ায় এখন ফিফার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে আর বাধা নেই বাফুফের। জানা গেছে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ মাসে দুই মাঠে টার্ফ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে ফিফার সঙ্গে বাফুফের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে আরো কয়েক মাস লাগতে পাশে। বর্তমানে দু’টি স্থাপনার মধ্যে একটির বরাদ্দের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, আরেকটি মাত্র এক বছর বাকি রয়েছে।
তাই ফেডারেশন পুনরায় বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। এনএসসি অনেক বরাদ্দ নানা কারণে বাতিল করতে পারে। তবে এই দুই স্থাপনা ২৫ বছরের জন্য পুরোপুরি বাফুফের অধীনেই থাকবে। এদিকে সংস্কার কাজ নিয়ে বাফুফের অসন্তুষ্টি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে সংষ্কার কাজ চলছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সে কারণে মাঠ সমস্যায় একবার এমাঠ থেকে ওমাঠ পর্যন্ত দৌড়াতে হচ্ছে বাফুফেকে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংষ্কার কাজ শুরু হয়েছে দেশের ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মাঠে। দুই দফা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এই কাজের। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। নতুন মৌসুমে মাঠ পাওয়া নিয়ে যে সংশয় বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল আদতে সেটাই হয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে হাতে পেতে পারে বাফুফে। এই মাঠে এবার নতুন করে যোগ হয়েছে মাঠে বসানো ফিফা অনুমোদিত স্প্রিং কুলার সিস্টেম। সম্প্রতি স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে বাফুফের সহ সভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বলেন, ‘এই মাঠে স্থাপন করা মাঠে পানি দেওয়ার জন্য স্প্রিং কুলার ফিফা অনুমোদিত নয়। তাই এটা তুলে ফেলতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই।’ যদিও এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শামসুল আলম বলেন, ‘ফিফা থেকে যদি এই পদ্ধতি অনুমোদিত না হয়, তাহলে বাফুফে আমাদেরকে কেন আগে থেকে বলেনি। ছয়টি স্প্রিং কুলার বসাতে অনেকদিন লেগেছে।’
পথরেখা/আসো