বিশেষ প্রতিবেদন : জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে নানা শ্রেণী পেশার লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকেই নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ হাজার হাজার মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি নানা আনন্দে মেতে উঠেছেন। শিশুদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। মুখে, হাতে জাতীয় পতাকার ছবির পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের ছবি এঁকেছেন কেউ কেউ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীন দেশ, সেই শহীদদের স্মরণে শনিবার রাতের প্রথম প্রহরেই ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে স্মৃতিসৌধ এলাকায় আসতে থাকেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান- তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকরা, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি নির্বাচনের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে চায়। তাদের প্রতিরোধ করাই হবে আজকের দিনের অঙ্গীকার। জাতীয় স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানোর পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, যে কোনো মূল্যেই দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে যারা চেষ্টা করে তাদের প্রতিরোধ করা হবে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছর চেষ্টা করি স্মৃতিসৌধে এসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর। ১৬ ডিসেম্বর এখানে আসলে অন্যরকম ভালো লাগে। মনটা গর্ভে ভরে যায়। প্রতিবছর এখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মানুষের এমন উপস্থিত দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়।
এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ এলাকা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন স্মৃতিসৌধে। নানা শ্রেণী পাশে মানুষের উপস্থিতিতে দেখতে দেখতে ঢল নামে স্মৃতিসৌধ এলাকায়। অহংকারের প্রতীক লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে আসেন অনেকে। রাজধানীর মিরপুর থেকে বাবা রায়হানুল ইসলামের সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শিশু ফাতিহা। তিনি বলেন, আজ মহান বিজয় দিবস। দাদুর কাছে দেশ স্বাধীন হওয়া এবং যুদ্ধের গল্প শুনেছি। যারা আমাদের স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাবার সঙ্গে এখানে এসেছি।
স্মৃতিসৌধ এলাকায় মুখে জাতীয় পতাকার ছবি আঁকছিলেন শিশু নিলয়। তিনি বলেন, আব্বুর সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছি। এখানে অনেক মানুষ এসেছে। আমার খুব ভালো লাগছে। মুখে জাতির পতাকা আঁকিয়ে নিচ্ছি। কারণ এই পতাকা আমাদের অহংকার। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মধ্য বয়সী আবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু যুদ্ধ দেখেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যারা আমাদের স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন তাদের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।
পথরেখা/আসো