সেনাবাহিনী হকি দল প্রথমবার জাতীয় হকি চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৭৯ সালে সিলেটে। সময় আমি লেফট্যানেন্ট, জেনারেল মবিন সেও লেফটানেন্ট আর ফেরদৌস স্যার তখন ক্যাপ্টেন। প্রথম খেলা ছিল ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। হাফ টাইমের একটু আগে আমার চক্ষুর উপর স্টিকের গুতা লেগে ভ্রুর অনেক খানি কেটে গেল। কাছের ফার্মেসিতে গিয়ে সেলাই করাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমার সাথে প্রায় বারোজন অফি
সার। ফার্মেসিতে যিনি ছিলেন তিনি এত আর্মি অফিসার দেখে ঘাবড়ে সারা। আমার ভ্রু সেলাই করবে। মনে হয় পরিবেশ হাল্কা করতে বললেন। দেখছেন আর্মি অফিসারের কত বুদ্ধি- সেলাই করার জন্য ভ্রু আগেই ‘ছাইচ্ছা’ আইছে। আমি কইলাম- ব্যাটা তাড়াতাড়ি সেলাই কর। গিয়াই খেলতে হবে। আর ভ্রু ছাইচ্ছা আসি নাই আমার ভ্রু ই অতটুকুই।
আসিকুল্লাহ কায়েস, গড গিফটেড সিটির ওয়ার্ক। তুমুল ফর্মে; ওকে আটকান দুঃসাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয় দলের আক্রমণ ওর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কায়েস লেফট আউট, আমি রাইট হাফ। ওকে আটকান আমার দায়িত্বেই পরে। কায়েস দুইবার লাইনের তুলার উপর দিয়ে বল নিয়ে বের হয়ে গেল। আমি আর কায়েস দুই জনেই ঢাকা মোহামেডানে খেলি। এখানে দুইজন দুই দলে। কায়েসের কাছে বল। তুখোড় ড্রিবলিং করে বের হয়ে যাচ্ছে, যেতে দিলাম। আমাকে পার হবার সময় ওর স্টিকের সাথে বল। ঝুকে বের হচ্ছে, ডান পা, হাটু পরিস্কার দেখছি , মোক্ষম সুযোগ, স্টিক হাঁটুর উপর চালিয়ে দিলাম। গতিতে ছিল দুই তিন কদম আগ বাড়িয়ে চিত হয়ে পরে গেল।
আমিও কায়েসকে আটকানোর নামে ওর মাটিতে পরে থাকা শরীরে বাঁধা পেয়ে ওর উপর পরে গিয়ে শুয়েই রইলাম। আম্পায়ার আমাকে কার্ড দেখানোর সুযোগ পেলই না। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ছিল সব থেকে বড় বাঁধা। তারা হারল ২-০ গোলে। ১৯৭৯ সনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুরু। আমি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত খেলেছি আর্মি প্রতিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টিমের কোচিং আমিই করাতাম। মোহামেডান ক্লাবে ১৯৭৯ সনে খেলার আর্মি আর বাইরে খেলার অনুমতি দেয় নাই।
আর্মিতে যাবার আগে ১৯৭৬ সনে আবাহনীতে খেলি। লীগ চ্যাম্পিয়ন হই। ১৯৭৯ সনে মোহামেডানে খেলে লীগ চ্যাম্পিয়ন হই। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের সালাহ উদ্দিন আর বুলু পাঠান এসে বলে ফরিদপুরের কালেক্টরেট টি মের হয়ে আর খুলনাতে মুসলিম স্পোর্টিং হয়ে খেলতে যেতে হবে। দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন করি । কবে খেলেছি, স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালই লাগে।
লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত
পথরেখা/আসো