৪ বছর আগের ঘটনায় গিয়েছিলাম পুরান ঢাকার দায়রা জজ আদালতে। ২০২০ এর ৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটা। টিভি দেখছি। রিনা এসে বলল, চার তালাতে বাড়ি ওয়ালার বাসাতে খুব চিল্লামিল্লি হচ্ছে, তুমি একটু যাও। আমি বললাম তাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলানো কি উচিত। রিনা চলে গিয়েই মিনিট দুয়েক পরে আবার এসেই জিদের সাথে বলল, টিভির ছাইপাশ দেখা বন্ধ কর আর উপরে যাও। হেলে দুলে দুলকিচালে সিঁড়ি ভেংগে উঠতে থাকলাম। ফ্যামিলি ফিউড আমাকে এর মধ্যে দেখলে কি ভাববে! এখন আর আওয়াজ পাচ্ছি না। ধীরে ধীরে চার তালার দরজাতে টোকা দিলাম। কেউ খুলল না। অথচ সব দেখে আসতে বলেছে। বউর আদেশ, শিরো ধার্য্য। এবার ধাক্কা দিলাম। দরজা ছিটকানি দেয়া ছিল না। দুই পার্ট খুলে গেল। ভিতরে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সরওয়ার সাহেব আর তার বউ ফ্লোরে শোয়া। আর সরওয়ার সাহেবের বুকে এক জন বসা। পাশে তার স্ত্রীও শোয়া ওই লোকটা এক হাঁটু দিয়ে তাকেও চেপে রেখেছে। সরওয়ার সাহেবের গলা হাত দিয়ে চেপে রেখেছে।
আমি বললাম, এই কি হচ্ছে? ঐ লোকটা সাথে সাথেই সরওয়ার সাব আর তার বউর শুয়ে থাকা অবস্থায় তাদের পাশ থেকে একটা ছুরি নিয়েই দাঁড়িয়ে গেল। ইউ এ সি (আন আর্মড কম্ব্যাট) করা আছে। তবে প্রাক্টিক্যাল সিচুয়েশনে ঐ সব ট্রেনিং কাজির গরু কেতাবে থাকার অবস্থা। তাই হাতের কাছের চেয়ারটা তুলে নিলাম। ঐ লোকটা ছুরি হাতে ওয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে। ফ্লোরে শোয়া থেকে বাড়িওয়ালা সাহেব আর তার বউ উঠে দূরে দাঁড়িয়ে। এমন সময় আমার বড় ছেলে সজিব এসে হাজির। এক মুহূর্ত অবস্থাটা দেখেই পাশে থাকা টেবিল থেকে একটা গ্লাশ তুলে ছুড়ে মারল লোকটার মাথা লক্ষ্য করে। লোকটা দরজার দিকে দৌড় দিল। আমি হাত বাড়াতেই আমার হাতের তালুতে ছুরি মারল। সজিবের অনেক সাহস। ও ধরতে গেলে ওর কাঁধে ছুরি মেরে দরজা দিয়ে নেমে গেল। বাড়িরওয়ালার মেয়ের জামাই থাকেন তিন তালাতে। উনি খিল আটকে ঘরের ভিতরেই রইলেন। বেরই হলেন না।
প্রত্যেক ঘটনা থেকে মজা নিতে হয়। এ ঘটনার সপ্তাহের মধ্যেই বাড়িওয়ালা আমাদের বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিল। রিনাকে বললাম। বাড়াবেতই। সজিব ডাকাতের শরীর তাক করে গ্লাস ফিকে মেরে বাড়িওয়ালার গ্লাস ভাংগছে। ঐ গ্লাসের দাম দিবেনা। কি বলার আছে। বললাম তথাস্তু। ঐ যে বলে না- খানা দানা কুচ নেহি, গ্লাস তোড়া আট আনা।
এ ঘটনায় বিজ্ঞ জজ জান্নাতুল ফেরদৌসের কোর্টে যেতে হল। আমার ছেলে মোবাশ্বর সাক্ষী। সাক্ষী আমিও। যে ঘটনাতে উত্তরা থেকে আড়াই ঘণ্টা গাড়ি দাবড়িয়ে গেলাম,সেটা ০৫ জানুয়ারি ২০২০ সনের। গাড়িটা ওয়ার্কসপে দিতে হবে, গিয়ার বক্স, সাসপেনসন বিগড়েছে এসিও নষ্ট। তবে সাক্ষী দিতে না গেলে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করবে। সমন নামাতে এ লেখা দেখে গাড়ির দুই চাকা না থাকলেও হাজির হতাম কোর্টে।
মেজর ওয়াদুদ, বসুন্ধরার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ উনারই হাতে। সেনাবাহিনীর চৌকস, কর্তব্য পরায়ন হিসাবে নামি এই অফিসার বসুন্ধরাকে এসে আর পরিণত হয়ে তিনি যত দ্রুত সম্ভব গাড়িটা ওয়ার্কসপে পাঠাতে বললেও কোর্টের সমনতো আর এড়ান যায় না। তাই এসি নষ্ট গাড়ির ভিতরের এন্তার গরম অংগে মেখে চললাম কোর্টে। ভাই বিচারপতি শরিফ উদ্দিন ছিলেন নামজাদা বিচারপতি , এখন এডভোকেসি করেন। দেশ সেরাদের অন্যতম উকিল আমার ভাইয়া। সকাল সাতটায় যেতে হবে কোর্ট এলাকাতে। পুরান ঢাকার জগন্নাথ কলেজের কাছে।
গতকালের এজতেমার আখিরি মুনাজাত শেষে ঢাকার রাস্তাতে ফাঁক-ফোকর আছে। যানযট লাগে নাই। দুই ঘণ্টা লাগল। আবু রায়হান আর আওয়াল বসার জন্য ব্যবস্থা করল। বহু মানুষ সিমেন্ট করা বেদির মতন কিছু যায়গাতে বসে আছে। চারবছর আগে আমার বাড়িওয়ালার ড্রাইভার উনাকে জবাই করতে চেয়েছিল; সেই ঘটনাতে কেস হয়েছিল। আজ বসুন্ধরা থেকে ছুটি নিয়ে দুজনেই সাক্ষী দিয়ে আসলাম। সজিব সাক্ষী দেবার সময় আমাকে রুমের বাইরে যেতে হয়েছিল। কাঠ গড়াতে উঠব কখন চিন্তা করি নাই, সে অভিজ্ঞতাও হল।
কোর্ট এলাকাতে ঢুকলে বুঝা যায় দেশ ব্যাপী কত আইনি সমস্যা আর এতে কত ধরনের মানুষ জড়িত। কোর্টে গেলে বাস্তবতা বুঝা যায়। জীবন যে স্বপ্ন না তা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পথরেখা/আসো