মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে কিছু ঘটনা চিরকালীনভাবে স্থান করে নিয়েছে। যার মধ্যে সবার উপরের ঘটনা হিসেবে বলতে হবে ২০১২ সালের এশিয়া কাপ। মাত্র ২ রানের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জয় থেকে বঞ্চিত হয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই হতাশা মেয়েরা কাটায় ২০১৮ সালে এসে। ভারতকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে দেশকে শিরোপা উল্লাসে ভাসায়। এরপরও ম্যাচ কিংবা শিরোপা জয়ের কাছ থেকে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি ঘটনা আবারও নাড়িয়ে দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমি মানুষকে। আবারও মনসংযোগ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মনোবিদ নিয়োগ দিয়েও সমাধান আসছেনা। দিনে দিনে যেন হতাশা বেড়েইে চলেছে।
ফাইনালেই ডুবলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে নারী অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় হোঁচটটা যে ফাইনালের জন্য অপেক্ষা করছিল, কে জানত! শ্রীলঙ্কার মেয়েদের বিপক্ষে ৩৬ রানের হারে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। ডাবল লিগ পদ্ধতির প্রথম পর্বে বাংলাদেশের কাছে দুই ম্যাচই হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই লঙ্কানদের কাছে ফাইনালে ব্যাটে-বলে লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করে ৩ উইকেটে ১৪৮ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়ায় নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাটিং করেও ৮ উইকেটে ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরু থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। নিয়মিত বিরতিতে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন রাবেয়া। এই হতাশা যেন ছেলেদেরন মতোই হয়ে গেল। সেটা থেকে বের হতে সময় লাগবে হয়তো আরও কিছুদিন।
এদিকে অনুর্ধ্ব-১৯ দলও সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় একেবারে শেষ মুহুর্তে। শেষ উইকেট পতনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের উদ্বাহু উদযাপন আর বাংলাদেশের বেদনায় মুষড়ে পড়া দেখে মনে হতে পারে, এ বুঝি শিরোপা নিষ্পত্তির ম্যাচ। কিন্তু ফাইনাল দূরের পথ, বেনোনির দ্বৈরথটি ছিল সেমিফাইনালের টিকিট জয়ের। তবে উত্থানপতনের ম্যাচ এতটাই শ্বাসরুদ্ধকর ছিল যে, ম্যাচ শেষে দুই দলের ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া ছুঁয়ে গেছে দর্শকদেরও। ৫ রানের এই হারে প্লেট লড়াইয়ে নেমে যেতে হলো বাংলাদেশকে। আর এই গ্রুপ থেকে সেমিতে ভারতের সঙ্গী হলো পাকিস্তান। জয়ের জন্য দরকার ১৫৬ রান। আর সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে হলে এই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে পৌঁছাতে হতো ৩৮.১ ওভারের মধ্যে। আধুনিক ক্রিকেটে এই অঙ্ক মোটেও জটিল নয়। কিন্তু পাকিস্তানের দুই পেসার উবাইদ শাহ ও আলী রাজা মিলে সেই অঙ্কটাকে ভীষণ জটিল করে তোলেন। উইকেটে পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল।
সেই সহায়তার সঙ্গে নির্দিষ্ট একটা চ্যানেলে অবিরাম বল করে বাংলাদেশি ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন উবাইদ। তাঁর বোলিংয়ে ক্যাচ পড়েছে, তবু স্পেল শেষ করেছেন তিনি ৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে, যাঁকে দেখে কমেন্ট্রি বক্স থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপের উচ্চাশা, ‘ভবিষ্যতের তারকাকে দেখে রাখুন।’ উবাইদের ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির সুবাদে অপর প্রান্ত থেকে ৪৪ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন রাজা। ম্যাচের গতিপথ স্মৃতি হয়ে থাকবে মারুফ মৃধা প্লেইড অন হতেই পাকিস্তানের তরুণ ক্রিকেটারদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। কারণ ওই মুহূর্তের আগে সেমির টিকিটের জোর দাবিদার ছিল বাংলাদেশও। তবে ক্যাচ ফেলার পরের ওভারেই জেমসকে তুলে নেন উবাইদ। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১২৭ রান। তবে ক্রিজে তখন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। শেষ ব্যাটারদের নিয়ে পারবেন না বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে? এই ভাবনায় যতি পড়ে পরের ওভারেই, রাজার তৃতীয় শিকার হন মাহফুজ। পরের ওভারে ইকবাল হোসেন রান আউট হতেই গ্যালারির বাংলাদেশ অংশে আশাহত মুখ দেখা যায় টিভি পর্দায়।
সেই মুখে হাসি ফিরিয়ে আনেন রোহনাত দৌলা বর্ষণ। মারুফের সঙ্গে তাঁর ২৩ রানের জুটির সময় স্নায়ুচাপে দিশাহারা দেখাচ্ছিল পাকিস্তানকে। সেমিতে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে বল স্টাম্পে টেনে আনেন শেষ ব্যাটার মারুফ। অপর প্রান্তে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রোহনাত, যাঁকে সম্ভাব্য ম্যাচসেরা মনে হচ্ছিল। পাকিস্তানের ১৫৫ রানের ইনিংসে ২৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার অলরাউন্ডার। অফস্পিনার শেখ পারভেজ জীবনও ৪ উইকেট নিয়েছেন ২৪ রানের বিনিময়ে। এর আগে ২০০৯ সালে ত্রিদেশিয় সিরিজের বাংলাদেশের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে নিজের করে নেন শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন। এরপর তিন বছর পর ২০১২ সালে হতাশার এশিয়ার কাপ হয় লাল সবুজ প্রতিনিধিদের। ওয়ানডে ক্রিকেটে সমীহ করার দলে পরিণত হওয়ার আগেই বাংলাদেশ দলের সামনে এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে মাত্র ২ রানে পাকিস্তানের কাছে হার কাদিঁয়েছিল পুরো বাংলাদেশকে।
পথরেখা/আসো