হকির শক্তি মধ্য মাঠ। মধ্য মাঠ আবার সেন্টার হাফ নির্ভর। রোলিং সেন্টার হাফ হল দলের অক্সিজেন। দুটো ব্যাক, তিন হাফ আর পাঁচ ফরোয়ার্ড, একে পিরামিড পদ্ধতিও বলে। ১৯৮২ সনের থেকে চালু হয়। হকিতে ফুটবলের দল সাজানো মানে ৪-৩-৩ বা ৪-২-৪ এই সব পদ্ধতি চালু হয়, আমরা ২-৩-৫ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত ছিলাম। এই পদ্ধতি সেন্টার হাফ নির্ভর। আব্দুস সাদেক ছিলেন সেন্টার হাফ এবং সেন্টার হাফদের মধ্যে তিনি এত উচুদরের যে আজকের আলোচনাতে তাকে অন্তর্ভূক্ত করব না। জামাল হায়দার, সান্টা, সেনাবাহিনীর জহির সেন্টার হাফ হিসাবে যোগ্য হিসাবে আলোচিত এবং প্রতিষ্ঠিতিও।
জহির লম্বা এবং সুগঠিত। সেনাবাহিনী দলের মধ্য মাঠে রাইট হাফ আমি, সেন্টার হাফ জহির, লেফট হাফ মকলেস। রাইট হাফ মহসিন ভাই আবাহনীর, ২-৩-৫ পদ্ধতিতে রাইট হাফ কে সিক্স ফরোয়ার্ড বলা হয়। আমি রাইট হাফ হিসাবে সিক্স ফরোয়ার্ড হিসাবে সারাক্ষণ আক্রমণে যেতাম। প্রাতঃস্মরণীয় রাইট হাফ মহসিন ভাই কখনই আক্রমণে যেতেন না। তবে সেন্টার হাফ সাদেক ভাই থাকাতে মহসীন ভাইর ভূল চোখেই পরত না।
সেন্টার হাফ সান্টা, ওর আর্মির মতন অফুরন্ত দম তবে প্রয়োজনেও খুব একটা ‘স্কুপ’ করত না। জামাল হায়দার সেন্টার হাফ হিসাবে দুর্দান্ত। সেনাবাহিনীর খেলোয়াড় বাদে বাংলাদেশের প্লেয়ারদের মধ্যে নিঃসন্দেহে জামাল সব থেকে ফিট। জহিরের আমি বলেছিলাম, বিকালে প্রথম যাবে আবাহনীর প্রাকটিস দেখতে। সাদেক ভাইর প্রতিটি মুভ মুখস্ত করবে। জহীর সাদেক ভাইর অনুকরণ শুধু করেই নাই মাঠে ভালভাবেই প্রয়োগ করেছে।পাশে থেকে বলতাম জহীর স্কুপ কর, জহীর মাথার উপর দিয়ে চমৎকার ভাবে ‘ফিড’ করত। জামাল স্কুপ কমই করত তবে পুর মাঠ চষে খেলত। সান্টা বল পাবার পর একটু পিছনে টেনে কন্ট্রোল করার পর তারপর ডিস্ট্রিবিউট করত। এতে এ্যাটাক স্লো হত। সেন্টার হাফ ৪-২-৪ বা ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে দরকার পরে না। আমাদের সময় দর্শকদের ভীড়ে এমনিতেই উদ্দীপনা চলে আসত। দর্শকরা পজিশন নিয়েও আলোচনা করত।
সেনাবাহিনী ১৯৭৮ সালে সেমিফাইনালে মোহামেডানকে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার সময় খেলা শেষ তবে মোহামেডান সর্ট কর্নার (পেনাল্টি কর্নার) পাওয়াতে সর্ট কর্নার মারার জন্য খেলার শেষ বাশি বাজে নাই।সর্ট কর্নার মারার পর বল বারপোস্টের পাশ দিয়ে বাইরে, আম্পায়ার বশির ভাই পেনাল্টি স্ট্রোক দিলেন, বললাম, কোন দুঃখে পেনাল্টি স্ট্রোক? বশির ভাই বললেন তোমার পায়ে লেগে বল গোলে ঢুকে নাই, বলালা আমার গায়ে ত লাগেই নাই। আম্পায়ার তার ডিসিসনে একরোখা। মোহামেডানের হয়ে রামা লুসাই পেনাল্টি স্ট্রোক নিতে আসল বললাম, একটা মিথ্যা স্ট্রোক কেন মারবি? আর মারতে আয় মাথা দুই ভাগ কইরা দিমু।এমনিতেই অন্ধকার আর এ সবে আর অন্ধকার হয়ে গেল। খেলা শেষ। পরদিন দুপুরে খবর পেলাম ফাইনাল খেলবে আজই ওয়ারি ক্লাব আর মোহামেডান। ফেরদৌস স্যারকে বললাম, দলে পরবর্তিতে সেনা প্রধান মবিন ও ছিলেন। মাঠে গিয়ে দেখি ওয়ারি আর মোহামেডান ওয়ার্মআপ করছে। আমরাও ওয়ার্ম আপ শুরু করলাম। খেলবে দুই দল ওয়ার্ম আপ করে তিন দল। আম্পায়ার ডাকলে তিন দলের ক্যাপ্টেন টসে হাজির। টিম ক্যাপ্টেন ফেরদৌস স্যার হলেও টসে আমাকেই পাঠাত। মিলু ভাই আর সাবের আলি আম্পায়ার , মিলু ভাই আমাকে দেখে ভাব নিয়ে বল্লেন তুমি কে? আহত হলেন ভাল ভাবেই। আমাদের হকিতে সাসপেন্ড করা হল।কর্নেল সফি মির্জা তার ভাই। তিনি তার পাওয়ার খাটিয়ে আমাদের তিনজনকে ক্লোজ এ্যারেষ্ট করে এ এইচ কিউ ভিআইপি মেসে রাখলেন।
আজকের মন্ত্রী জেনারেল সালাম তখন ডিএমটি। তিনি নিজেই এএইচকিউ মেসে আসলেন। সব শুনে তখনই চলে গেলেন হকি ফেডারেশনে। রাত দশটায় আবার এএইচকিউ ভিআইপি মেসে আসলেন, বললেন কাল থেকেই নরমাল মেনু ফলো করে প্রাকটিস শুরু করবে। এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ সিলেটে, চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। সিলেটে আর্মি ই চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্যারের কথাতে সত্যে পরিনত করে ছিলাম।
জেনারেল সালাম, তার দৃঢ়তায় আর্মি হকি দল সুসংগঠিত হয়ে আজকের মহিরুহতে পরিনত হবার যাত্রা শুরু করে।
কলামিস্ট