হকি খেলার পাশাপাশি এ্যাথলেটিক্স করতাম। বাবা মরহুম শামসুদ্দিন চাকলাদার ছিলেন খেলা অনুরাগী। নিজে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি ব্লু, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবল আর হকির ক্যাপ্টেন ছিলেন, ক্রিকেট খেলতেন ওয়ারি ক্লাবে। দেরাদুন আর্মি একাডেমিতে সিলেক্ট হয়ে যোগ দিবার মাস খানেক পরে দাদীমা চিঠি দিয়ে একাডেমি থেকে বাবাকে ফেরত নিয়ে আসেন। দাদী মা ছিলেন সূর্যসেনের ভক্ত, তাই বাবা আর্মিতে যাক, অপছন্দ ছিল। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক পারিবারিক ভাবে পরিচিত হওয়াতে, দাদী মা তাকে বলে আব্বাকে সাবরেজিষ্ট্রার করান।সাবরেজিষ্ট্রারের বড় যায়গা নিয়ে বাসা, আব্বা সেই যায়গায় হপ স্টেপ জাম্প, লংজাম্প পিট তৈরি করে আমাদের জন্য অ্যাথলিট হবার ব্যবস্থা করতেন। বাবা ভীষন চুজি ছিলেন, হরিন পালতেন, বিরাট বাগান করতেন। এক দিন বাগানে গরু ঢুকাতে ঘরে রাখা হকি স্টি ক দিয়ে পিটাতে গেলে ঐ ছোট্ট আমাকে বাবা হকিস্টিক যে খেলার সামগ্রি আর ব্যবহার দেখালেন, শিখার সেই শুরু। সেই হকি ঢেউ আমাকে জাতীয় হকি দলের ক্যাপ্টেন আর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের গৌরব এনে দেয়।
এক দিন দেখি বাবা ধুতি পরা এক লোকের সাথে বাগানের পাশে কথা বলছে, আমাকে ডাকলেন, ঐ ব্যক্তি গনক।হাত দেখলেন বল্লেন এ ছেলে সেনাবাহিনীতে যাবে। যখন এম এ পড়ি তখন গনককে গালিই দিলাম যে এমএ পড়ে কেউ আর্মিতে যায়। আমার দাদু ওসমান উদ্দিন চাকলাদার ছিলেন বৃটিশ আমলে পুলিশ ইন্সপেক্টর, ভোলাতে পোস্টিং ছিল, মেজর হাফিজের বাবা ডা. আজাহার আর আমার বাবা ছিলেন ক্লাসমেট। বাবা ভোলার সাবরেজিষ্ট্রার হয়ে আসাতে মেজর হাফিজ পরিবারের সাথে আবার যোগাযোগ ঘটে। মেজর হাফিজ বলে আমি এমএ করে আর্মিতে গেছি, তুমিও পারবে। মেজর হাফিজ নিউমার্কেট থেকে ডগার ব্রাদার্সের বই এনে আমাকে পড়াত এবং আর্মিতে গেলাম। গনক ব্যাটা ঠিকই বলেছিল।
হকি তে আদেল গুষ্ঠি এক অতি পরিচিত পরিবার। আলমগীর আদেল আর মমিন ভাই তখন হকির কর্তা, আবার ওয়াসিম আদেল, সাজেদ আদেল, শোয়েব আদেল মাঠ কাপানো তুখোর খেলোয়াড়। হকি প্রশাসনে আলমগীর আদেল বাদে সাজেদ ছিলেন তবে সাজেদ আদেল যে কোন কারণে হকি থেকে সরে আছেন। হকিকে এগিয়ে যেতে হলে সাজেদের মতন হকি লাভার এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্বকে দরকার। আর্মিতে সিলেক্ট হয়েছিলাম থার্ড সর্টের সাথে। ১৯৭৬ সনে জাতীয় হকি চ্যাম্পিয়নশিপ রাজশাহীতে ছিল তাই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খেলার জন্য আর্মিতে আবেদন করে এক কোর্স পরে মানে এস এস সি-৪’ এ যাই। ঐ ‘৭৬ সনে ফরিদপুরের হয়ে খেলে ন্যাশন্যাল চ্যাম্পিয়ন আর লিগে আবাহনীর হয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হই।
জাতীয় ক্রীড়া পুরুস্কার পেতেও ঝামেলা হয়। আমি সেই কলেজে থাকতেই লেখালেখি করি, চালু রয়েছেও। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তখন পটল সাহেব। লিখেছিলাম কোন এক আর্টিকেলে, নামের সাথে কাম মিলিয়ে পটল সাহেব ক্রীড়াঙ্নেগর পটল তুলে ছাড়বেন। ক্রীড়া লেখকদের লেখা মন্ত্রীরা দেখে ঠ্যাকে না, তবে আমার লেখার এই মন্তব্য কেউ না কেউ পটল সাহেবকে দেখান। আমার নাম জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকা থেকে তিনি কেটে দেন। এ সব দেখে ক্রীড়া সাংবাদিকরা সম্ভাব্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারদের তালিকা প্রস্তুত করেন, সেখানে এক নম্বরে (মৃত) মোমেন মুন্না আর দ্বিতীয় নাম আমার। পুরস্কার নিবার দিন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাশে পটল সাহেব ছিলেন, পুরস্কার নিয়ে চলে এসে মাঝ পথে আবার ফিরত গিয়ে পটল সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে হাত মিলিয়ে ফিরত এসে বসলাম।
ক্রীড়াঙ্গনে খবর অফুরান। এটা এক খবরের খনি, খুদলেই খবর উঠে আসে।
ক্রীড়াংগন স্বর্গ নয়,
ঐ যে বলে না,
স্বর্গের প্রেমে নাই বিরহ অনল
সুন্দর আখি আছে নাই আখি জল।
আরে ভাই রাগ অভিমান না থাকলে কিসের প্রেম কিসের ভালবাসা?
ক্রীড়াঙ্গনে রাগ মারামারি খিস্তি কি নেই, জীবন-নদীর সব মোহনা এক হয়ে মিশেছে ময়দানে-ক্রীড়া মাঠে। জয়তু ক্রীড়াঙ্গন।
লেখক : কলামিস্ট
পথরেখা/আসো