পথরেখা অনলাইন : প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইহসানুল করিম আর নেই। ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৮টার দিকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার প্রয়াতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গভীর শোক জানিয়েছেন।
ইহসানুল করিম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক এবং রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইহসানুল করিমের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ১৯৪৯ সালে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর হয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ নেন। ইহসানুল করিম ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সংবাদ সংস্থার বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের নয়া দিল্লিতে বাসসর ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি, পিটিআই এবং ভারতের দ্য স্টেটমেন্ট ও ইন্ডিয়া টুডেসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালনের পর তিনি ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বাসস থেকে অবসর গ্রহণের পর একই বছরের ২০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব হিসেবে প্রথমে এক বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তার চুক্তির মেয়াদ দুই বার-তিন বছর করে বৃদ্ধি করা হয়।
বাদ যোহর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তার নামাজে জানাজা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, করিম আমার প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "তার দুঃখজনক মৃত্যুতে গণমাধ্যমের লোকজন তাদের সহকর্মীকে হারিয়েছে এবং আমি আমার বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকে হারিয়েছি"। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মৃত্যুতে সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ পৃথক শোক বার্তায় তারা ইহসানুল করিমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তার মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি,ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মরতুজা আহমদ, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
পথরেখা/আসো