মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা এখন বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে। মাঠের খেলায় যদিও লড়াইটা আগের মতো একপেশে হয়না। সু-সম্পর্ক থাকার পরও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের লড়াইটা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেট আসলেই মাঠের দ্বৈরথটা পৌছে যায় গ্যালারীতে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে টাইমড আউট বিতর্কের পর দুই দেশ যখনি মাঠে নামে সবার সামনে চলে আসে এসকল বিষয়। সে হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে উত্তাপ ছড়ানো দ্বৈরথের নাম বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। দুই দলের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। এক সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ মানে একপেশে ছিল। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে মাঝেমাঝেই জয় এসেছে বাংলাদেশের ভাগ্যে। ২০১৮ সালের পর পরিস্থিতি বদলেছে। দুই দলই সাম্প্রতিক সময়ে লড়েছে সমানে সমান। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় লঙ্কানদের ছিটকে ফেলেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড় থেকে।
এখন দিন যত গড়িয়েছে এই দুই দলের লড়াইয়ে উত্তাপ ততই মাত্রা ছাড়িয়েছে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হয়। সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ ১৫ ও ১৮ মার্চ একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এই ম্যাচের আগে পরিসংখ্যান কিছুটা হলেও স্বস্তি দিবে বাংলাদেশ দলকে। এখন পর্যন্ত দুই দল একে অন্যের বিপক্ষে খেলেছে ৫৪ বার। তাতে ১০ জয় বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৪২ ম্যাচে। আর বাকি ২ ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত। দেশের মাটিতে রেকর্ড কিছুটা আশাজাগানীয়া টাইগারদের জন্য। ২০ ম্যাচের মধ্যে ৬ ম্যাচে জয় এসেছে। ১৪ ম্যাচ জিতেছে লঙ্কানরা। দুই দলের সবশেষ দেখা ছিল বিশ্বকাপে। যেখানে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে জয় পায় টাইগাররা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার আগের ৯টি সিরিজের মাত্র একটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। দুই দলের মুখোমুখি হওয়া সর্বশেষ সিরিজেই এসেছিল সেই সাফল্য। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসের পারদ উঁচু রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। দুই দলের মধ্যেকার ৯টি সিরিজের ২টি হয়েছে ড্র। বাকি ৬ সিরিজের ট্রফি গিয়েছে লঙ্কানদের দখলে। ৬ বছর আগের নিদাহাস ট্রফি থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট মাঠের লড়াই ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ’টাইমড আউট’ কান্ড ওই মাত্রাকে চরম উত্তেজনায় নিয়ে গেছে। এখন ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের মতোই উত্তাপ ছড়ায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বৈরথ। ব্যাপারটি দারুণ উপভোগ করেন লঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড। তার কাছে এই দ্বৈরথ ’গ্রেট’ হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে। দুই দলের গত সপ্তাহে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে ঝাঁঝালো লড়াইয়ের সব উপাদানই ছিল মাঠে। কোন সন্দেহ নেই ওয়ানডে সিরিজও সেই রকম আবহ পেতে যাচ্ছে। লঙ্কানরা তার প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে চ্যাম্পিয়ন প্লাকার্ড নিয়ে করে রেখেছেন টাইমড আউট ভঙ্গিতে উদযাপন করে। এবার ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ কী জবাব ফিরিয়ে দেয় তা দেখার অপেক্ষা। উপভোগ্য লড়াইয়ের অপেক্ষাটা সিলভারউডেরও। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেরা ৮ দলের বাইরে থাকায় ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট পায়নি শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডে সুপার লিগের প্রতিদ্বন্ধীতাও এখন নেই। তবুও ২০২৭ বিশ্বকাপে চোখ রেখে শিষ্যদের তৈরি করতে চান সিলভারউড। ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পারদ একদম সপ্তমে ছিল। জিতলেই ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত হবে। এমন ম্যাচে উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দেয় ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট এর ঘটনা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে ওই ম্যাচ স্মৃতিতে ভাসছে তাওহিদ হৃদয়ের। ৭ বলে ১৫ রান করে বিশ্বকাপের ম্যাচটিতে বাংলাদেশের জয় সহজ করেছিলেন এই ব্যাটার। বিশ্বকাপের ম্যাচটিতে পরে ব্যাট করে দ্রুত জিততে হতো বাংলাদেশকে। তখন রান রেট বাড়বে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা লড়াই মানেই বাড়তি রোমাঞ্চ। কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। নিদাহাস ট্রফিতে নাগিন ড্যান্স থেকে শুরু করে সব শেষ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের করা লড়াইয়ে বাড়তি রসদ জুগিয়েছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে এবার ওয়ানডে সিরিজে মাছে নেমেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে বাংলাদেশ কেমন করবে, সেটাই দেখার। ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে প্রথম দেখা হয় দুই দলের। টানা ১৫ ম্যাচ হারার পর ২০০৬ সালে বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ। দুই দল ওয়ানডেতে ৫৪ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের জয় ১০ ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার ৪২ ম্যাচে। সবশেষ মুখোমুখিতে বাংলাদেশ অবশ্য জয় পেয়েছিল। বিশ্বকাপ মঞ্চে দিল্লিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপূণ্যে সেই ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
পথরেখা/আসো