• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৯:১৪
৭ দিনের মধ্যে আবেদন নিস্পত্তির আদেশ হাইকোর্টের

রেডিও ডিভাইস ক্রয়ে পুলিশ টেলিকম সংস্থার ব্যাপক দুর্নীতি

  • জাতীয়       
  • ২০ মার্চ, ২০২৪       
  • ১৩৭
  •       
  • ২০-০৩-২০২৪, ২১:৩৩:৩৫

বিশেষ প্রতিবেদন : বাংলাদেশ পুলিশের রেডিও ডিভাইস ক্রয় ব্যাপক অনিয়ম অভিযোগ সংক্রান্ত একটি আবেদন ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেডের পক্ষে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ যে আবেদন করা হয়েছে তা নিষ্পত্তির আদেশ দেন আদালত। স্বরষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। গত ৩ মার্চ দেওয়া এ আদেশের অনুলিপি ১৩ মার্চ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
 
বিচারপতি মুস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আতাবুল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ প্রদান করেন। রিট পিটিশনের পক্ষে শুনানি করেন বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এবং তাকে সহায়তা করেন মিন্টু কুমার মণ্ডল। সরকার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তাকে সহায়তা করেন সহকারী এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সেলিম আজাদ ও সহকারী এটর্নি জেনারেল আনিস উল মাওয়া।
 
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২ আগস্ট ২০২৩ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ টেলিকম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের বেতার যোগাযোগ সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দুইটি দরপত্র আহ্বান করে [যার আন্তর্জাতিক দরপত্র নং : ৪৪.০১.০০০০.০৫৭.১১.০০৫.২৩/১২৬/বেতার, তারিখ: ০২/০৮/২০২৩ খ্রি. এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র নং : ৪৪.০১.০০০০.০৫৭.১১.০০৭.২৩/১২৯/বেতার, তারিখ: ০৩/০৮/২০২৩ খ্রি.। এই আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৩টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউকেশন্স এন্ড ইলেট্রোনিক্স পিটিআই লিমিটেড, চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড এবং চীনের কালটা টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড। স্যাম্পলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইপূর্বক ১৬ অক্টোবর পণ্য ডেমোনোস্ট্রেশনের জন্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। স্যাম্পল টেস্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড ১১ জন বিদেশি এক্সপাট; টেকনিক্স কমিউনিকেশন্স একজন এবং ক্যালটা টেকনোলজিস ৮ জন বিদেশী এক্সপার্ট আনে। হাইটেরাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্যাম্পল এবং ফিল্ড টেস্টের জন্য তাদের নিজ খরচায় টেকনিশিয়ান আনতে হয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা, যেমন ফ্লাইট টিকিট, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, খাবার  ইত্যাদি সম্পূর্ণ ব্যয়ভার প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করতে হয়েছে।
 
এডভোকেট মিন্টু কুমার মণ্ডল জানান, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড জানিয়েছে, পুলিশ টেলিকম সংস্থা একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি তথাকথিত সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউকেশন্স এন্ড ইলেট্রোনিক্স পিটিআই লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সর্বশেষ দরপত্রের তাদের সরবরাহকৃত পণ্য স্যাম্পল পরীক্ষায় বাদ পড়েছে।  দীর্ঘ ৯ বছর যাবৎ এমডিএম ট্রেডার্স এককভাবে টেন্ডার পেয়েছে এবং রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করছে। এমনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া আহ্বান করা হতো যেখানে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারত না। ২০১৫ থেকে ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ টেলিকম সংস্থার রেডিও ডিভাইস ক্রয়ের ৪১টি টেন্ডারের এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডই পেয়েছে ৪০টি। গত বছর ২০২৩ সালে চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকার একটি কার্যাদেশ পেয়েছে। ৯ বছরে টেকনিক্স কমিউকেশন্সের বাংলাদেশি প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড কাজ পেয়েছে প্রায় ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিস্ময়করভাবে গত দুই অর্থবছরে পুলিশ টেলিকম সংস্থা প্রায় ২২১ কোটি টাকার রেডিও ডিভাইস ক্রয় করেছে।
 
টেকনিক্স কমিউকেশন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের বিপক্ষে অভিযোগ অনেক দিনেরই। জানা গেছে, ডিএমডি ট্রেডার্সের মূল হোতাও পোশাকি বাহিনীর কয়েক অসাধু কর্মকর্তা। সম্প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের সরবারহকৃত মালামালের গুণগত মানও নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সঠিক পন্থায় তখনই তাদের ডিভাইসগুলো পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে; তখনই তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে রেডিও ডিভাইস এনেছে।
 
আইনজীবী মিন্টু কুমার মণ্ডল আরও জানান, পরবর্তীতে আমার ক্লায়েন্টরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শর্তপূরণ করতে না পারা একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে রিটেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। এরপর এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করে হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড। তবে দীর্ঘদিনেও আবেদনটি নিষ্পত্তি না করায় তারা হাই কোর্টে রিট করে।
 
টেকনিক্স কমিউকেশন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড মালয়েশিয়ার থেকে পণ্য আনে। আন্তর্জাতিক দরপত্র অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের কারখানা থেকে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু আসলে, এমডিএম মটোরোলা ব্যান্ডের যে রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করছে সেই ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনের কোনো কারখানা মালয়েশিয়ায় নেই। এ ক্ষেত্রে এর আগে যখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ সরেজমিনে কারখানা দেখতে মালয়েশিয়া গিয়েছেন; তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে এমনও।
 
আবেদনকারীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী মিন্টু কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবিচের কাছে আবেদন করেও এর কোনো প্রতিকার পাননি। তাই আমার মক্কেল আদালয়ের শরনাপন্ন হয়েছেন। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়েছেন। আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিবাদীদের পক্ষে উপস্থিত হয়ে আবেদনের বিরোধিতা করেছেন। বিজ্ঞ আদালত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আবেদনটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পাশাপাশি রিট পিটিশনের বিবৃতি এবং  জমা দেওয়া নথিপত্র বিবেচনা করেছেন। বিজ্ঞ আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে আবেদিত বিষয়টি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আদেশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর প্রদত্ত দরপত্র সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি করতে নিষ্পত্তি করার  নির্দেশ দিয়েছে।
 
গণমাধ্যমের কাছে তারা আরও জানিয়েছে সর্বশেষ ২০২৩ সালে টেকনিক্সকমিউকেন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড নৌবাহিনীর একটি টেন্ডারের অনিয়ম করায় তাদের আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে কালো তালিকাভুক্ত করার চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেডিও ডিভাইস বাংলাদেশের নিরাপত্তার যোগাযোগের অন্যতম রাষ্ট্রীয় মাধ্যম। এখানে মানহীন পণ্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিপন্ন হতে পারে সরকারের গোপনীয়তা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।