ঢাকার হকি মানেই আরমানিটোলা। এক সময়ে পুরান ঢাকার এ অঞ্চলের প্রায় সব বাড়ির ছেলেরাই হকি খেলত। আরমানিটোলা সরকারি স্কুলের ছোট মাঠ তাই হিট বা পাস না করে এরা ড্রিবলিং মাস্টার। কাছেই নবাব বাড়ি। এরাও হকি খেলে এবং ঐ ড্রিবলিং মাস্টার। হকি সেই ১৯০৭/৮ সন থেকেই ঢাকায়। নবাব সলিমুল্লাহ কোলকাতার হোয়াইট ওয়েজ ডিপারমেন্ট শপ থেকে নবাব বাড়ির উঠতি যুবকদের জন্য হকি স্টিক কিনে এনে ছিলেন। হকির যাদুকর বলা হয় ধ্যানচাঁদকে তিনি তার ঝাসি হিরোজ ইউনিট নিয়ে ঢাকার পিলখানায় ছিলেন। অনুশীলন করতেন ইউনিভার্সিটি মাঠে। আমার বাবা শামসুদ্দিন চাকলাদার ছিলেন ইউনিভার্সিটি দলের ক্যাপ্টেন, প্রায়ই ম্যাচ খেলতেন ঝাসি হিরোজের সাথে, ধ্যানচাঁদ্রলভাই অলিম্পিয়ান রূপচাঁদ ও খেলত।
হকির বাংলাদেশের প্রবাদ পুরুষ আব্দুস সাদেক আরমানিটোলা ছেড়ে হকির স্রোত ধানমন্ডির দিকে ঘুরিয়ে দেন তৈরি হয় আবাহনী ক্লাব। ফার্মগেটে কাঞ্চন, টিসা, আশরাফরা হকির অনুশীলন শুরু করে, দুই ভাই মুনির আর সাইফ ওরা বেশির ভাগ ক্যান্টনমেন্টে আর্মি হকি দলের সাথেই খেলত।
কাঞ্চন টিসা আর জুম্মন প্রতি সপ্তাহে আমার বাসাতে ভোর পর্যন্ত আড্ডা দিত। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার যাবার ইরাদা, কাঞ্চন প্রতিবার কক্সবাজারে সংগী হত। ও চলে যাবার পর আর যাইনি। এবার বড় ছেলে মোবাশ্বরের ইচ্ছায় যেতে হবে।
কাঞ্চনের বন্ধু কক্সবাজারের সানু ভাই আমারও বন্ধু। তাকে আসছি বলে কল দিলাম, শত স্মৃতি কাঞ্চনকে নিয়ে ভাগ করলাম। জুম্মন নাই, কাঞ্চন নাই। আমি আর টিসা আছি। টিসা আমেরিকাতে। আমরা দেশবাসিকে ১৯৮৫ সনের হকি উপহার দিয়েছি। বিশ্ব জয়ী পাকিস্তানকে নাকানি চুবানি দিয়েছি। আমি সেরা হয়েছি। সব পেরেছি দলে অটুট বন্ধুত্বের জন্যই। মনে পরে— যখন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বটে /তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে।
এই ছন্দ মিথ্যে প্রমাণ করে কাঞ্চন জুম্মান তোরা সব সময় আমার কাছেই আছো।
লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত এবং কলামিস্ট
পথরেখা/আসো