সকাল ১০ টার উপর। সৈনিক ক্লাবের মাঠে আমি। সাথে গোল কিপার বজলু। অহেতুক রিস্ক নিত তাই অমরা ওকে সাইড লাইনেই রাখতাম। তবে দুর্দান্ত অ্যাক্রোবেটিক।
সৈনিক ক্লাবের মাঠের পাশে বড়সর একটা আম গাছ। বেশ মোটাই গোড়া। গাছটা সাইজ লাইনের সাথেই। দেখি ক্যাপ্টেন সিনা (আমার কোর্সমেট) জেনারেল এরশাদের এডিসি ঐ গাছটার ছায়া থেকে আমাকে ডাকছেন। বললাম ছায়ায় কি কর। রৌদ্রে চলে আস। ওখান থেকে আমাকে বলল- দৌড়ে আয় গাড়িতে তোর বস বইসা রইছে। এমনিতেই দলের প্রাকটিস শেষ হবার পর তপ্ত রৌদ্রে প্রায় ঘণ্টা খানেক পেনাল্টি স্ট্রোক আর টপ অব দ্য ডি শট মারছি। দল চলে গেছে কখন। বস দেখতে আইতাছি। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি জেনারেল এরশাদ গাড়িতে। কাছে গেলাম। প্রাকটিস শেষে এমটি ডাইরক্টরেটে যেতে হয়। ঘাবড়ে গিয়ে বললাম স্যার,আমার স্ট্রোক আর শট আরো ভাল করতে বেশি প্রাকটিস করছিলাম। ঝড় ঝড় করে ঘাম পরছে। ওনি গাড়ি থেকে নামলেন। ভিজা শরীর। তার মধ্যেই ঘাড়ে হাত দিলেন বললেন, ‘প্রাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট।’
দিল্লী এশিয়ান গেমসে হকি দল যাবে। জেনারেল এরশাদ সকালের প্রাকটিস দেখতে হকি স্টেডিয়ামে গেলেন। হকির সভাপতি জেনারেল মতিনকে বললেন চাকলাদার কোথায়? ও নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল রহমানের ৩/৪ জন আত্মীয়কে হকি স্টিক দিয়ে ধুমছে মেরেছে। তাই ক্লোজ অ্যারেস্ট করা হয়েছে। চলে যাওয়ার সময় বললেন, বিকালে আবার প্রাকটিস দেখতে আসবেন, চাকলাদারকে যাতে মাঠে দেখা যায়। ১১টার দিকে হন্ত-দন্ত হয়ে ৪/৫ অফিসার আসলেন। পরে আমার ভায়রা ভাই হয়েছেন মেজর বাশার তিনি ও ছিলেন। তার শালীর প্রতি আমার দুর্বলতা তার না পছন্দ। বললেন এখনই জেনারেল রহমানের কাছে পেশীতে যেতে হবে। গেলাম। আচ্ছা মতন ঝাড়লেন। পুল আপ ইওর সকস, ফ্যাসেন ইওর বেল্ট এন্ড ওয়েক আপ।
হকির সভাপতি জেনারেল মতিন ডেকে নিয়ে বললেন, ভাল খেলোয়াড় তবে জিদ কন্ট্রোল কর। বললেন, সাদেককে দেখ। এত প্রেসার খুব সাধারণ; উত্তেজিত পর্যন্ত হয়না। জেনারেল এরশাদ স্যার আমাকে বহুবার বাসাতে ডেকেছেন। স্পোর্টসম্যানকে আদর করার। সম্মান করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন এক দৃষ্টান্ত। আমার দেখা রাজনীতির বাইরের জেনারেল এরশাদ এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং কলামিস্ট