• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:২৬

লেভারকুজেন এখন উইনারকুজেন

পথরেখা অনলাইন : বায়ার্ন মিউনিখের সাম্রাজ্য ভেঙ্গে জার্মান লিগের সেরা হয়েছে বেয়ার লেভারকুসেন। না লেভারকুজেনকে বিকৃত করে এখন আর ‘নেভারকুজেন’ ডাকার অধিকার আপনার নেই। একটি দৃশ্যের জন্ম দিতে ১২০ বছরের যে অপেক্ষা, গত রাতে সেটি ঘুচে গেছে তাদের। পাঁচ রাউন্ড হাতে রেখেই নিশ্চিত করে ফেলেছে বুন্দেসলিগা শিরোপা। এখন থেকে তারা ‘উইনারকুজেন।’ বায়ার্ন মিউনিখের একচ্ছত্র দাপট ভেঙে দিয়েছে লেভারকুজেন। ১১ মৌসুম পর মিউনিখ থেকে বুন্দেসলিগা যাচ্ছে জার্মানির অন্য কোনো শহরে। সেই শহরের নাম লেভাকুজেন। জার্মানির বিখ্যাত রাইন নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এ যে শুধু জার্মানির নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় নতুন সংযোজন! শীর্ষ লিগের শিরোপা জিততে এত লম্বা সময় কাউকে অপেক্ষা করতে হয়েছে কী? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জিতে শত বছরের বেশি অপেক্ষার ইতি টেনেছিল লেস্টার সিটি। লেস্টার অবশ্য অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। লেভারকুজেন সেখানে অনন্য। নিজেদের মাঠ বে অ্যারেনায় ফ্লোরিয়ান উইর্টজের হ্যাটট্রিকে ভেরডের ব্রেমেনকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে শিরোপা নিষ্পত্তি করল লিগে অপরাজিত থেকে। এ মৌসুমে কোনো প্রতিযোগিতায় যে একটি ম্যাচও হারেনি তারা!
 
টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকা দলটির এ মৌসুমে ট্রেবল জেতারও রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা। সেই পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিরোপাটি জিতল লেভারকুজেন। নিজেদের ১২০ বছরের ইতিহাসে জার্মান ফুটবলের শীর্ষে লিগের প্রথম শিরোপা। লেভারকুজেন এমন রূপকথা লেখার নায়ক জাবি আলোনসো। বে অ্যারেনায় নিজের প্রথম মৌসুমেই অমরত্ব পেয়ে গেলেন স্প্যানিশ কোচ। ২০১০ সালে স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা মিডফিল্ডারের অধীনে জার্মানির ফুটবলে ইতিহাস লিখল লেভারকুজেন। শিরোপা নিশ্চিত করতে একটি জয় হলেই চলত তাদের। আগেরদিন বায়ার্ন আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায় কোলনের কাছে হারলে সেটিরও আর দরকার পড়ত না। বাভারিয়ানরা জিতে লেভারকুজেনের শিরোপা উৎসব একদিন পিছিয়ে দিতে পারলেও সাম্রাজ্যের পতনের বিউগল ঠিকই শুনল। ২০১১-১২ মৌসুম থেকেই বুন্দেসলিগা ছিল তাদের হাতে।
 
শিরোপা নিষ্পত্তি হবে, এর জন্য আগেভাগে লেভারকুজেনে সাজসাজ রব পড়েছিল এমন নয়। তবে সেই উৎসব লালে লাল হলো ব্রেমেনের বিপক্ষে শেষ বাঁশি বাজার পর। বে অ্যারেনায় নেমে এলো লেভারকুজেনের হাজার হাজার দর্শক। উৎসবের রঙ যে লাল! খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা মিশে গেলেন একই স্রোতে একই রংয়ে। এ ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া হাজারো দর্শক গ্যালারিতে বুন্দেসলিগা শিরোপার ডামি হাতে জয়ধ্বনি দিলেন লেভারকুজেনের নামে। কেউ আবেগে কাঁদলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শিরোপা উৎসব লিগের শেষ ম্যাচে করবে লেভারকুজেন। তার আগে এ মৌসুমে শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে প্রথম শিরোপা নিষ্পত্তিটা বাঁধভাঙাই হলো তাদের। লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে বিশাল গ্লাসে করে জার্মানির বিখ্যাত বিয়ার পানের যে রীতি সেটি পান করলেন লেভারকুজেনের খেলোয়াড়েরা। নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মাঠে উৎসব করার ভিডিও পোস্ট দিয়ে লেখা হলো, ‘উইনারকুজেন’। আর আলোনসো বললেন, ‘অবিশ্বাস্য অনুভূতি’। বায়ার্নের এত দিনের সাম্রাজ্য পতনের নায়ক আলোনসো হাসিমুখে ‘টাইটেল’ হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন শিষ্যদের সঙ্গে।
 
খেলোয়াড়ি জীবনটা তিনি শেষ করেছিলেন আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায়। এরপর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। আর শীর্ষ লিগে প্রথমবার ডাগআউটে দাঁড়িয়ে জিতলেন লিগ শিরোপা। লেভারকুজেন ও আলোনসো গল্পটা যে রূপকথাকেও হার মানায়। ২৯ ম্যাচে ২৫ জয় ও ৪ ড্রয়ে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে বুন্দেসলিগা জিতল লেভারকুজেন। দুইয়ে থাকা বায়ার্ন তাদের বাকি ৫ ম্যাচ জিতলে হবে ৭৮ পয়েন্ট। আর্সেন ওয়েঙ্গারের অধীনে ২০০৩-০৪ মৌসুমে অপরাজিত থেকে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল আর্সেনাল। সেই ‘ইনভিন্সিবল’ গানারদের রেকর্ডে ভাগ বসানোরও সম্ভাবনা রয়েছে লেভারকুজেনের। লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে না হারলেই সেটি সম্ভব। ফ্লোরিয়ান ভির্টজ ক্যারিয়ারে কখনো হ্যাটট্রিক পাননি। কাল ভেরডার ব্রেমেনের বিপক্ষে পেলেন। ৮৯ মিনিটে যখন গোল করলেন, তখন দর্শকদের আর দমিয়ে রাখা যায়নি। বে অ্যারেনার গ্যালারি থেকে সবাই নেমে পড়েছেন মাঠে। খেলাই আর শুরু করা হয়নি। তার আগেই যে ফলাফল নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। লেভারকুসেন ৫-০ ভেরডার ব্রেমেন। ১১ বছরের বায়ার্ন মিউনিখ আধিপত্য শেষে লেভারকুসেন জার্মান বুন্দেসলিগার নতুন চ্যাম্পিয়ন। এই জয়ের পর লেভারকুসেনের পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ২৯ ম্যাচে ৭৯। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের পয়েন্ট সমান ম্যাচে ৬৩।
 
দুই দলের ব্যবধান ১৬ পয়েন্ট হয়ে যাওয়ায় পরের পাঁচ ম্যাচে হারলেও শীর্ষেই থাকবেই লেভারকুসেন। ১২০ বছরের ক্লাব ইতিহাসে এটিই শীর্ষ লিগে লেভারকুসেনের প্রথম ট্রফি। এর আগে পাঁচবার রানার্সআপ হয়েছে তারা। জিতলেই ক্লাব ইতিহাসের প্রথম লিগ শিরোপা। বেয়ার লেভারকুসেনের সামনে সমীকরণ ছিল ঠিক এতোটাই সরল। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে আক্রমণাত্মক শুরুই করেছিল তারা। ২৫ মিনিটে প্রথম গোল আসে পেনাল্টি থেকে। ভিক্টর বনিফেসের গোলের পর থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায় বে অ্যারেনায়। গ্রানিত শাকা লেভারকুসেনে এসেছিলেন একরাশ সমালোচনা নিয়ে। আর্সেনাল থেকে রীতিমত সমর্থকদের চক্ষুশূল হয়ে বিদায় নিলেন। কিন্তু লেভারকুসেনের জার্সিতে যেন নিজের ফুটবলীয় প্রতিভার সবটা দেখিয়ে দিলেন। দারুণ এক গোল দলকে নিয়ে গেলেন শিরোপার আরও কাছে। বাকি সময়টা কেবলই ফ্লোরিয়ান ভির্টজ আর বে অ্যারেনার সমর্থকদের। পুরো মৌসুমে দাপুটে ফুটবল উপহার দেয়া লেভারকুসেন শেষ আধঘণ্টায় ছিল আরও ক্ষিপ্র।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।